Rituparna Sengupta harassment

ঋতুপর্ণাকে হেনস্থা! তারকাদের কি পথে নামা উচিত? জানালেন চূর্ণী, ঋদ্ধি, শ্রাবন্তী, তনুশ্রীরা

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমে হেনস্থার শিকার হয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। নাগরিক প্রতিবাদে তারকাদের উপস্থিতি কতটা যুক্তিযুক্ত? মতামত জানালেন চার অভিনেতা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:০২
Share:

(বাঁ দিক থেকে) চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং তনুশ্রী চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

বুধবার শ্যামবাজারে ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে হেনস্থার শিকার হন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন। সেখানে তারকাদের গতিবিধি নিয়ে ক্রমাগত কটাক্ষ ধেয়ে আসছে। সমাজমাধ্যমে ট্রোলিং তো ছিলই, এ বার প্রত্যক্ষ সংঘাত। শিল্পীর উদ্দেশে কটূক্তি এব‌ং ‘গো ব্যাক’ স্লোগান। তাই ঋতুপর্ণার ঘটনা একাধিক প্রশ্ন তুলেছে। তারকাদের কি কোনও গণ আন্দোলনে পথে নেমে প্রতিবাদ করা উচিত? টলিপাড়ার অভিনেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে।

Advertisement

ঋতুপর্ণার প্রতি ‘গো ব্যাক’ স্লোগানকে মেনে নিতে পারছেন না অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মতে, এক জন নারীর জন্য বিচার চেয়ে পথে নেমে অন্য এক নারীর অসম্মানকে প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ সার্বিক উদ্দেশ্য থেকে সরে আসা। চূর্ণী বললেন, ‘‘ঋতুর উপর হয়তো কোনও কারণে কারও রাগ হয়েছে। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেই পরে যোগ দিতে চেয়েছেন।’’ আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে চলতি আন্দোলনকে স্বতঃস্ফূর্ত বলেই মনে করেন চূর্ণী। তাঁর যুক্তি, ‘‘যার যেমন ভাবে ইচ্ছে, যখন ইচ্ছে প্রতিবাদ করবেন। কেউ দেরিতে এলেও তাঁকে স্বাগত জানানো উচিত। এমন যেন না হয়, আমরা তাঁদের সুযোগটাই কেড়ে নিলাম!’’

তারকাদের প্রতিবাদ জানানো উচিত নয়, তা মনে করেন না চূর্ণী। বরং তিনি মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, তারকা পথে নামলে, তিনিও তখন নাগরিক সমাজেরই অংশ। তারকাদের ‘সহজ নিশানা’ করার প্রবণতার সমালোচনা করেই চূর্ণী বললেন, ‘‘শাসকদলের সদস্য বা পুলিশকর্মীদের অনেকেই হয়তো নিয়মের ঘেরাটোপে কথা বলতে পারছেন না। অনেকেই আবার ধীরে ধীরে প্রতিবাদ করছেন।’’

Advertisement

তবে চূর্ণীর আশঙ্কা, ঋতুপর্ণার ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী দিনে হয়তো ইচ্ছুক কোনও তারকাও প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার আগে দ্বিধান্বিত হবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকেই তো আমাদের ব্যক্তিগত জীবন সামলে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছি। কেউ দেরিতেই হয়তো প্রতিবাদ করতে চাইছেন। কিন্তু এই ঘটনার পর তার মনে কোনও সঙ্কোচ বা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করতেই পারে।’’

নারীর জন্য বিচার চেয়ে নারীকেই অসম্মান, সমর্থন করছেন না অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির এক জন বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পী সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিবাদে শামিল হতে চেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে এমন আচরণের ফলে প্রতিবাদটাই তো অর্থহীন হয়ে গেল!’’ শ্রাবন্তীর মতে, অভিনেতারা সাধারণ মানুষকে বিনোদন জোগান। এই অপমানের মধ্যে দিয়ে কোথাও অভিনেতা-দর্শকের সেই সম্মানটাও নষ্ট হয়েছে।

শ্রাবন্তীর কথায়, ‘‘প্রত্যেকের আত্মসম্মান রয়েছে। এক জন মহিলা হিসেবে আমি মর্মাহত।’’ শ্রাবন্তী জানালেন, পথে নেমে প্রতিবাদ করতে তাঁর কখনও মনের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাবোধ কাজ করেনি। বললেন, ‘‘আমি তো কাউকে না জানিয়েই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম। নারী-পুরুষ নির্বশেষে আমাকে যথেষ্ট ট্রোল করা হয়। আমিও তো এক জন মহিলা। সেই অর্থে তো আমিও নির্যাতিতা তা হলে!’’

আরজি কর-কাণ্ডে শুরু থেকেই আন্দোলনের শরিক হয়েছিলেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। ‘তারকা’ শব্দটি নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে কে আগে বা পরে প্রতিবাদে যোগ দিচ্ছেন, সেই চুলচেরা বিশ্লেষণ কি খুব গুরুত্বপূর্ণ? না কি আমরা তাঁদের আহ্বান জানাব!’’ বুধবারের ঘটনাটির ভিডিয়ো দেখেছেন ঋদ্ধি। উপস্থিত আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুললেন অভিনেতা। ঋদ্ধি বললেন, ‘‘স্লোগানের পর উনি যখন চলে যাচ্ছেন, তখন দেখলাম মানুষ ভিডিয়ো করতে ব্যস্ত! অর্থাৎ, সহজে একজন পরিচিত ব্যক্তিকে অসম্মান করা যায়, তার প্রমাণ রাখা হল। পরে সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া সহজ হবে!’’ ফলে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন ঋদ্ধি।

শান্তিপূর্ণ সফল প্রতিবাদের উদাহরণ হিসেবে ঋদ্ধি চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযানের কথা উল্লেখ করছেন। ঋদ্ধির মতে, গুটি কয়েক মানুষের অভব্য আচরণের জন্য নির্যাতিতার বিচার চেয়ে যে অগণিত মানুষ বুধবার রাস্তায় জমায়েত করেন, সেই সম্প্রদায়কে অশ্রদ্ধা করা হয়েছে। ঋদ্ধি বললেন, ‘‘কাঞ্চন মল্লিক বা অন্য যাঁরা এই প্রতিবাদকে হেয় করছেন, তাঁদেরকে কেন বলা হচ্ছে না! যাঁরা সত্যিই হাতে হাত রাখতে এগিয়ে আসছেন, তাঁদের অসম্মান সমর্থন করি না।’’ তবে তিনি মনে করেন, আগামী দিনে খ্যাতনামীরা যদি প্রতিবাদ করতে ভয় পান, তা হলে যাঁরা আন্দোলনকে দুর্বল করতে চাইছেন, তাঁরাই জিতে যাবেন।

বুধবার রাতে যাদবপুরের জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। সেখানে তাঁর কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি। তবে ঋতুপর্ণা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘আমি হতবাক! বুঝতেই পারলাম না কারা ঘটনাটা ঘটাল, কেনই বা করল। এক জন শিল্পীর সঙ্গে যে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, আমার কোনও ধারণা ছিল না। অত্যন্ত দুঃখজনক।’’

তনুশ্রীর মতে, যে কোনও বড় আন্দোলনে কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা মূল উদ্দেশ্য নষ্ট করে দিতে পারে। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘এগুলো কেন করা হচ্ছে? আন্দোলন থেকে মানুষের চোখ ফেরাতে কি? মানুষ হিসেবে ঋতুদি কেন, প্রত্যেকেরই যে কোনও জায়গায় যাওয়ার অধিকার আছে এবং প্রতিবাদ করারও অধিকার রয়েছে।’’

তবে ভবিষ্যতে, ক্ষোভ বা ট্রোলিংয়ের কারণে তারকারা যে পথে নামতে ভয় পাবেন, তা মানতে নারাজ তনুশ্রী। বললেন, ‘‘কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন না। প্রয়োজনে আমরা আবার প্রতিবাদ করব এবং রাস্তায় নামব।’’ একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা যেন অহিংস হয়, সে কথাও বার বার মনে করিয়ে দিতে চাইলেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement