ছবির দৃশ্য
ফের বিতর্কে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ়। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাদের ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি।’ শোনা যাচ্ছে, দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘দিওতিমা’র সঙ্গে ছবির গল্পের অনেক সাদৃশ্য! ২০১৮ সালের অগস্টে দেবারতির উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল। লেখিকার দাবি, ছবির বিষয়বস্তুর সঙ্গে তাঁর উপন্যাসের মিল দেখে তিনি অবাক।
অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্রহ্মা জানেন...’ ছবিটির ট্রেলার লঞ্চের পর থেকেই লেখিকার কাছে তাঁর পাঠকদের মেসেজ আসতে শুরু করে। দেবারতির বক্তব্য, ‘‘সে সময়ে প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। ছবিটি মুক্তি পাওয়া অবধি অপেক্ষা করতে বলেন প্রকাশক।’’
‘ব্রহ্মা জানেন...’এর ট্রেলার লঞ্চের সময়েই সেই প্রকাশনার তরফ থেকে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘দিওতিমা’ উপন্যাসের সঙ্গে ছবিটির সাদৃশ্যের কথা। ওই পোস্টেই আইনি পদক্ষেপের উল্লেখও ছিল। কিন্তু পরে অবশ্য সেই পোস্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ভুলবশত করা হয়েছে বলে দুঃখপ্রকাশ করে আবারও পোস্ট করে প্রকাশনা সংস্থা।
এর পরে শিবপ্রসাদের প্রযোজনা সংস্থায় ফোন করে দেবারতি তাঁর উপন্যাসের সঙ্গে মিল থাকার কথা জানান। দেবারতির সঙ্গে পরে যোগাযোগ করার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবে হয়নি।
এই বিষয়ে শিবপ্রসাদ ও নন্দিতার সঙ্গে আনন্দ প্লাসের তরফেও যোগাযোগ করা হয়। শিবপ্রসাদ মেসেজ করে উত্তর দেন যে, তাঁরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছেন। তাঁদের আইনজীবীর নম্বরও দেন। আইনজীবী দেবাঞ্জন মণ্ডল বলেছেন, ‘‘এই অভিযোগ মিথ্যে ও অবান্তর। উপন্যাস এবং ছবির গল্পে কোনও মিল নেই। দু’টি গল্পের থিম ও ট্রিটমেন্ট আলাদা। থিম বা কনসেপ্টের উপরে কারও কোনও কপিরাইট থাকতে পারে না। এই ছবির গল্প মূলত নন্দিনী ভৌমিকের জীবন ও কাজের উপরে ভিত্তি করেই তৈরি। তা ছাড়া এই উপন্যাসের প্রকাশক সংস্থা নিজেরা পোস্ট করে বলেছে, এই দু’টি বিষয় আলাদা। তার জন্য তারা ক্ষমাও চেয়েছে। প্রয়োজনে ওই লেখিকার বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’
অন্য দিকে দেবারতি বলছেন, তিনিও আইনি রাস্তায় হাঁটার কথা ভাবছেন। তাঁর কথায়, ‘‘উপন্যাসটির মূল উপজীব্য ছিল, অব্রাহ্মণ ও নারী হয়েও একটি মেয়ের পৌরোহিত্য করতে চাওয়ার প্রবল ইচ্ছে ও তার বিরুদ্ধে সনাতন সমাজের ছুড়ে দেওয়া নানা বাধা। উপন্যাসের মূল ভাবনা ও কিছু চরিত্রের মিল তো রয়েছেই। প্রোটাগনিস্টের স্বামীর চরিত্রটির সঙ্গে আমার উপন্যাসের অনেকটাই মিল। এমনকি ছবিতে যে পুরোহিতের চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন, একই চরিত্র আছে আমার উপন্যাসেও। কিন্তু এর পরেও আমি সে ভাবে ওই প্রযোজনা সংস্থাকে কিছু বলিনি। কারণ প্রশাসনিক আধিকারিক হিসেবে মানুষের মত প্রকাশের অধিকার কতটুকু, তা আমি জানি। শুধু ফেসবুকে একটি পোস্ট করে নিজের মনের কথাটুকু শেয়ার করি। কিন্তু তার পরে ওই প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে আমার নম্বর চাওয়া হয়। অনেকের কাছ থেকেই জানতে পেরেছি যে, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থা থেকে নাকি আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমার ঠিকানাও জানতে চাওয়া হচ্ছে। যদিও ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাক্ট বা কপিরাইট অ্যাক্ট অনুযায়ী চললে আমারই ওদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা উচিত।’’
গোটা বিষয়টি নিয়ে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিলে, সেখানে রোহিণী ধর্মপাল তাঁকে সমর্থন করেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পেশায় অধ্যাপিকা হলেও রোহিণী ধর্মপাল পৌরোহিত্য করেন। তাঁর মা গৌরী ধর্মপালও একটা সময়ে পৌরোহিত্য করতেন। রোহিণীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে আমার বা মায়ের নামের উল্লেখ ছিল না ছবিটিতে। নন্দিনী ভৌমিককে দিয়েই প্রচার করা হচ্ছিল। আমিও তখন দেবারতির মতো ফেসবুকেই প্রতিবাদ করতে শুরু করি। পরে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। অবশেষে ছবিতে আমাদের ক্রেডিট দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ওরা যে এটুকু করেছে তাতেই আমি খুশি।’’
শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সংস্থার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগে ‘পোস্ত’, ‘প্রাক্তন’ ছবি দু’টির গল্প নিয়েও একই অভিযোগ উঠেছিল। তবে এ বার জল কত দূর গড়ায়, তা সময়ই বলবে।