Soumitra Chatterjee

রোমিয়ো-জুলিয়েটের পরেই ছিল অপু-অপর্ণা

সৌমিত্রের সঙ্গে তাঁর জুটি প্রসঙ্গে বললেন শর্মিলা ঠাকুরসত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির সময়ে শর্মিলার বয়স ১৩, সৌমিত্র ২৩।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৩৪
Share:

‘অপুর সংসার’

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরে দু’সপ্তাহ অতিক্রান্ত। তাঁর স্মৃতিতে দেশে-বিদেশে আয়োজিত হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। চর্চা চলছে সৌমিত্রের বহুমুখী প্রতিভার নানা দিক নিয়ে। গত ২৯ নভেম্বর ব্রিটেনের বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে সৌমিত্র সম্পর্কে রঙিন দিনের স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল ব্রিটিশ কাউন্সিল, দ্য নেহরু সেন্টার। শর্মিলা ছাড়াও আলোচনায় ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, সুমন ঘোষ প্রমুখ।

Advertisement

সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির সময়ে শর্মিলার বয়স ১৩, সৌমিত্র ২৩। ‘‘রোমিয়ো-জুলিয়েটের পরে কয়েক দশক ধরে অপু-অপর্ণা ছিল সবচেয়ে রোম্যান্টিক জুটি,’’ শর্মিলার প্রশস্তি আলোচনা সভার আমেজ তৈরি করে দিয়েছিল। প্রবীণ অভিনেত্রী বলেন, ‘‘ছবিটায় অদ্ভুত এক সারল্য ছিল। ওই সময়ে আমাদের জীবনেও যে সারল্য, আশা ছিল, তা-ই প্রতিভাত হয়েছিল পর্দায়।’’

শর্মিলা বলেন, ‘‘আমার কেরিয়ারের দু’টি পর্যায়। যখন ‘অপুর সংসার’, ‘দেবী’ করলাম, তখন আমি স্কুলে পড়ি। এর পরে বম্বে যাই। ‘বর্ণালী’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র মতো ছবিগুলি যখন করি, তখন খানিক পরিণত।’’ সৌমিত্রের অভিনয়শৈলী সম্পর্কে শর্মিলার পর্যবেক্ষণ, ‘‘মানিকদা আমাদের সংলাপের সঙ্গে কিছু নোটসও দিতেন। তবে সৌমিত্রকে দেখতাম, চরিত্র নিয়ে মানিকদার সঙ্গে আলোচনা করতে। দৃশ্যটির আগে সেই চরিত্রটি কী করে, এমন ধরনের প্রশ্ন করতেন।’’ ক্যামেরা বন্ধ হলে সৌমিত্র চিরন্তন ‘আড্ডাবাজ’। ‘‘কখনও আবৃত্তি করছেন, ওঁর অভিজ্ঞতার কথা বলছেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম!’’

Advertisement

‘নায়ক’, ‘অমানুষ’ ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে ছিলেন শর্মিলা। সৌমিত্র কতটা আলাদা ছিলেন উত্তমের চেয়ে? ‘‘উত্তম ছিলেন স্টার। ওঁর সুস্পষ্ট ধারণা ছিল স্টারডম সম্পর্কে। জনতার সঙ্গে সচেতন দূরত্ব বজায় রাখতে তিনি পছন্দ করতেন। আমি যখন ওঁর সঙ্গে ছবি করেছি, তখনও শ্রদ্ধাপূর্ণ দূরত্ব বজায় ছিল। আসলে উত্তম কখনও বন্ধু হয়ে ওঠেননি। সৌমিত্র আর আমার একসঙ্গে পথচলা শুরু। তাই দ্রুত সখ্যও গড়ে উঠেছিল। সকলে ওঁর কাছে পৌঁছতে পারত। বরাবরই সৌমিত্র ওঁর অনুসন্ধিৎসু মনটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।’’

পরিচালক সুমন ঘোষ এক বার সৌমিত্রের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘‘বম্বের ইরফান খান, নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকির মতো বাংলা ছবি ইদানীং আন্তর্জাতিক মানের শিল্পী তৈরি করছে না কেন? যে উচ্চতায় তিনি পৌঁছে ছিলেন, তাঁর পরে আর কেউ নেই কেন?’’ জবাবে সৌমিত্র বলেছিলেন, ‘‘ও রকম ছবি আর হচ্ছে কোথায়?’’

আসলে সময় বলে দেয়, কালের গর্ভে কোন ছবি ছাপ রেখে যাবে। শর্মিলার কথায়, ‘‘আমরা কয়েকটি ছবিতেই রোম্যান্টিক জুটি ছিলাম। কয়েক দশক ধরে সে সব ছবির দ্যুতি অক্ষুণ্ণ ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement