মিষ্টি হাসি, মায়াবি চোখ…২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তুম বিন’ ছবির ‘পিয়া’কে মনে আছে? যিনি বলিউডে পা রাখামাত্রই মন জয় করে নিয়েছিলেন তামাম দর্শকের। আজ তিনি কোথায়? কী করছেন? কেন ওই একটি সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েই হারিয়ে গিয়েছিলেন ‘পিয়া’? কোন অজানা কারণে বলিউডকে চিরতরে বিদায় জানাতে হয়েছিল তাঁকে?
‘পিয়া’-র রিয়েল লাইফ নাম সন্দলি সিনহা। আদপে বিহারের মুজজফরপুর মেয়ে। ১৯৭৩ সালে ১১ জানুয়ারি জন্ম সন্দলির। বাবা ভারতীয় বায়ুসেনার অফিসার ছিলেন। চাকরিরত অবস্থাতেই মারা যান তিনি। পরিবারের কেউ-ই যুক্ত ছিলেন না গ্ল্যামার জগতের সঙ্গে। বাবা মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানকে নিয়ে সন্দলির মা তখন দিশেহারা। একা হাতেই মানুষ করতে থাকেন ছেলেমেয়েদের।
দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হয়ে সন্দলি কিশোর নমিত কপূরের অ্যাক্টিং স্কুলে অভিনয় শিখতে যান। অথচ ছোটবেলা থেকে তাঁর অভিনেতা হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। তিনি চাইতেন ডাক্তার হতে। কিন্তু কলেজে পড়তেই তাঁর জীবনের মোড় আচমকা ঘুরে যায়।
কলেজেই দু’একবার র্যাম্প ওয়াক করার সুযোগ আসে সন্দলির। তাঁর মনে হতে থাকে, মডেলিংকে পেশা করলে কেমন হয়? ঠিক এমন সময়েই সোনু নিগম ‘দিওয়ানা’ নামে এক মিউজিক ভিডিয়ো বানাচ্ছিলেন। দরকার ছিল নতুন মুখ।
শিকে ছেঁড়ে সন্দলির ভাগ্যে। ওই ভিডিয়োর অফার দেওয়া হয় তাঁকে। ভিডিয়োটির পরিচালক ছিলেন অনুভব সিংহ। তাঁর বেশ পছন্দ হয় এই নবাগতাকে। অনুভবের পরের প্ল্যান ছিল একটি ছবি বানাবেন। আর সেই ছবির জন্যই সন্দলিকে সরাসরি প্রস্তাব দেন অনুভব।
সন্দলির কাছে এ যেন হাতে চাঁদ পাওয়া। তিনিও রাজি হয়ে যান। সেই ছবিই ‘তুম বিন’। ২০০১ সালে যা বছরের অন্যতম হিট হয়েছিল। সেই ছবির গান আজও লোকের মুখে মুখে। সন্দলির নিষ্পাপ মুখের প্রেমে পড়েছিলেন দর্শকেরা।
রাতারাতি লাইমলাইট এসে পড়ে তাঁর উপর। সন্দলির কাছেও টুকটাক অফার আসতে থাকে পরবর্তী ছবির। তাঁর পরের ছবি ‘পিঞ্জর’।
সন্দলির পাশাপাশি সেই ছবিতে ছিলেন নামজাদা সব অভিনেতা। ঊর্মিলা মাতণ্ডকর, মনোজ বাজপেয়ী, সঞ্জয় সুরীর পাশাপাশি গুলজারের গান। ছবি মুক্তি পায় ২০০৩ সালে।
ছবিতে সন্দলির চরিত্রের নাম ছিল ‘লাজো’। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিকায়, হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বই ছিল এই ছবির স্টোরিলাইন। বক্স অফিসে সুপারহিট তকমা না পেলেও এই ছবির ভাগ্যে জুটেছিল জাতীয় পুরস্কার। প্রত্যেকের অভিনয় সমালোচক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।
কিন্তু সন্দলির ভাগ্য তখন লিখছিল অন্য গল্প। সুপারহিট ছবি দিয়ে কেরিয়ার শুরু, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবিতে অভিনয় করার পরেও তিনি পায়ের তলায় পাকাপোক্ত জমি খুঁজে পাচ্ছিলেন না কিছুতেই।
যা যা অফার পাচ্ছিলেন সব সাইড রোল। এটা বলিউড। এখানে অভিনয় দক্ষতা থাকলেই কাজ পাওয়া যায় না। দরকার কানেকশন। নন ফিল্মি ঘরানা থেকে আসা সন্দলির সে সব কিছুই ছিল না। তাই নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন যেন ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছিল তাঁর থেকে। অন্য দিকে সে সময় রানি, প্রীতি, ঐশ্বর্যাদের বাজার।
‘বহিরাগত’ সন্দলি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এর পর পা রাখেন দক্ষিণী ছবিতে। তিন-চারটে তামিল-তেলুগু ছবিতে অভিনয় করলেও সেখানেও হালে পানি পেলেন না তিনি। কার্যত হতাশ হয়ে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন এক রকম বিসর্জন দেন সন্দলি। বলা ভাল বিসর্জন দিতে বাধ্য হন।
২০০৫ সালে ব্যবসায়ী কিরণ সালাস্কারকে বিয়ে করেন সন্দলি। পাশাপাশি বলিউডকেও বিদায় জানিয়ে পাক্কা সংসারী হয়ে ওঠেন তিনি। বর্তমানে তিন সন্তান, স্বামী নিয়ে সুখের সংসার তাঁর।
এর পরে যদিও ২০১৬ সালে ‘তুম বিন’-এর রিমেকে তাঁকে অতিথি শিল্পী হিসেবে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেই রিমেক হিট হয়নি।
নিজের জীবন ব্যক্তিগত রাখতেই পছন্দ করেন এই হারিয়ে যাওয়া তারকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সব প্রোফাইলই লক করে রেখেছেন। যাতে অযাচিত প্রবেশ না ঘটে। নিজের পরিবার নিয়ে তিনি দিন কাটাচ্ছেন নিজের শর্তে।