বড় ব্যানারের সুপারহিট ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আত্মপ্রকাশ। তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ ছিল অনেক। কিন্তু তার পরেও সাহিল চড্ডার দৌড় থেমে গিয়েছিল অকালে।
সাহিলের পড়াশোনা দিল্লিতে। তবে প্রথম থেকেই তাঁর শখ ছিল অভিনেতা হওয়ার। ইচ্ছেপূরণের পথে তিনি দিল্লি থেকে মুম্বই চলে আসেন। সে সময় টি সিরিজ গানের ব্যবসার পাশাপাশি প্রথম পা রেখেছিল ছবি প্রযোজনায়।
টি-সিরিজের প্রথম ছবি ‘লাল দুপাট্টা মল মল কে’ টেলিছবিতে অভিনয় করেন সাহিল। টেলিফিল্ম হলেও ছবিটি দর্শকদের খুব পছন্দ হয়েছিল। গানও ছিল সুপারহিট। সাহিলের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন ভিভার্লি।
১৯৮৯ সালের টেলিছবি ‘লাল দুপাট্টা মল মল কে’-এর অন্য কুশীলবদের মধ্যে ছিলেন গুলশন কুমার, বিজয়েন্দ্র ঘাটগে এবং রাম মোহন। ছবিটির সাফল্যে উচ্ছ্বসিত টি-সিরিজ সে বছরই এর দ্বিতীয় অংশ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এর পরবর্তী অংশ (সিক্যোয়েল)-এর নাম ছিল ‘ফির লেহরায়া লাল দুপাট্টা মল মল কে’। কিন্তু প্রথম অংশের সাফল্যের ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি এই ছবিটি। এই ব্যর্থতার মাশুল দিতে হয়েছিল সাহিলকে।
জনপ্রিয়তার কেন্দ্রে থাকা নবাগত চলে যান বিস্মৃতির আড়ালে। সুযোগ পেতে থাকেন বি গ্রেড এবং হরর ফিল্মে। ‘খুনি রাত’, ‘মাঙ্গনি’, ‘মেরা নসিব’–এর মতো ছবিতে ছোটখাটো ভূমিকায় তাঁকে দেখা গিয়েছিল।
নয়ের দশকের শুরুতে তখন বলিউডে শাহরুখ, আমির, সলমন-সহ একাধিক নতুন মুখ। অন্য দিকে অমিতাভ বচ্চন তখনও স্বমহিমায়। এ ছাড়াও ছিলেন অক্ষয় কুমার, সানি দেওল, গোবিন্দ, সুনীল শেট্টির মতো নায়করাও। ফলে প্রতিযোগিতায় ক্রমে পিছিয়ে পড়তে থাকেন সাহিল।
সাহিলের কাছে আসতে থাকে পার্শ্বনায়ক বা চরিত্রাভিনয়ের সুযোগ। তিনি বাধ্য হয়ে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। ‘কম্যান্ডো’, ‘সিআইডি’-র মতো ধারাবাহিকের অভিনেতা ছিলেন তিনি। ‘বাগবান’ ছবি দিয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তার পর ক্রমে ছোট পর্দা থেকেও হারিয়ে যান তিনি। বেশ কয়েক বছর সাহিল কী করছেন, সে সম্বন্ধে কিছু জানা যায়নি। শোনা যায়, সে সময় তিনি লেখালেখি করতেন। ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
মাঝের এই কয়েক বছরে তিনি ছবি প্রযোজনারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি একটি ছবি প্রযোজনাও করেন। কিন্তু বক্স অফিসে ছবিটি ব্যর্থ হয়। ফলে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি।
এমনই পরিস্থিতি হয়, সাহিলকে আবার কাজ খুঁজতে হয়। এ বার আর অভিনেতা হিসেবে নয়। তিনি এক ভয়েস ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করে কাজ চাইলেন।
এ বার সাহিল কাজ পেলেন ডাবিংয়ের। হলিউডের ইংরেজি ছবি হিন্দি-সহ বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং-এর পরে মুক্তি পায় ভারতে। সাহিল সেখানেই শুরু করলেন ডাবিং পর্ব। ‘ইনফার্নো’, ‘মিশন ইম্পসিবল’-এর মতো ছবিতে তিনি ডাবিং করেছেন।
ভয়েস ওভার আর্টিস্ট বা বাচিক শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হলেন সাহিল। উপার্জনের অর্থে শুরু করলেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। এখন তাঁর সংস্থা মিউজিক ভিডিয়ো, বিয়ের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কর্পোরেট বিভিন্ন সংস্থার হয়েও কাজ করে। সঙ্গে চলছে লেখালেখির পর্বও।
একটি ছবিতে বিখ্যাত হওয়ার পরে বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিলেন সাহিল। ইন্ডাস্ট্রির পরিভাষায় তাঁর গায়ে ‘ওয়ান ফিল্ম ওয়ান্ডার’-এর পরিচয় বসে গিয়েছিল। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ান তিনি। নতুন পরিচয় তৈরি করেন। নায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হতে না পারলেও ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।