সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং রূপঙ্কর বাগচী।
রূপঙ্কর বাগচীর মতে, তিনি স্পষ্ট বক্তা। শিল্পী নিজের কাজের জন্য কখনও কারওর কাছে তদ্বির করেননি। তাঁর জনসংযোগও ভাল নয়। তাই তাঁর গানের জীবন খুব মসৃণ নয়। অতিমারি পরিস্থিতি কম বেশি ছাপ ফেলেছে সব শিল্পী জীবনেই। সংক্রমণের ভয়ে মঞ্চানুষ্ঠান বন্ধ ছিল দীর্ঘ দিন। বাদ্যযন্ত্র শিল্পীদের পাশাপাশি উপার্জনে ভাটার টান গায়ক-গায়িকাদেরও। অতিমারির সময় নানা বিষয় নিয়ে অনেক সময়েই জোট বাঁধতে দেখা গিয়েছে বড় বা ছোট পর্দার অভিনেতা, কলা-কুশলীদের। আর্থিক সংকটের মধ্যেও কখনও ঐক্যবদ্ধ হতে দেখা যায়নি কেবল গায়কদের।
সেই সময় কখনও কি রূপঙ্করের মনে হয়েছে, গায়কদেরও এক জোট হয়ে মুখ খোলা উচিত?
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ আড্ডায় জনৈক অনুরাগী এমনই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিল্পীকে। কী উত্তর দিলেন গায়ক? এ বিষয়েও তিনি রাখঢাক রাখেননি। রূপঙ্করের সাফ জবাব, ‘‘অভিনেতা বা কলাকুশলীদের মধ্যে যে ঐক্য আছে সেটা গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে নেই। ছোট-বড় পর্দার শিল্পীরা তাই লড়ে তাঁদের পাওনা আদায় করে নিতে পারেন। আমরা পারি না।’’ তাই অতিমারি বা লকডাউনের সময়েও অভিনেতা, কলাকুশলীরা যেটুকু কাজ করতে পেরেছেন গানের দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা তার কিছুই করতে পারেননি।
নিজের কথার প্রেক্ষিতে তিনি উদাহরণও দেন। বলেন, ‘‘এক বার এক বিখ্যাত গায়কের বাড়িতে বসে আমরা সবাই বৈঠক করেছিলাম। আমাদের আলোচ্য বিষয় ছিল, রেডিয়োতে বাংলা গান বাজানো না হলে আমরা নির্দিষ্ট চ্যানেল বা স্টেশনের কোনও অনুষ্ঠানে অংশ নেব না। বৈঠক শেষে এক জন গায়কও সে দিন বলেননি, তিনি এই পথে হাঁটবেন। অনুষ্ঠানের ডাক এলে প্রত্যাখ্যান করবেন।’’ রূপঙ্করের দাবি, আজ পর্যন্ত গায়কেরা কোনও সাংগঠনিক কাজ করেননি। প্রত্যেকে নিজের মতো করে দিন যাপনে বিশ্বাসী। নিজের প্রাপ্তিটুকু নিয়েই খুশি। সেই জন্যই সম্ভবত অতিমারিতে গানের দুনিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিল্পীর কথায়, অভিনয় শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কথা শোনার জন্য একাধিক সংগঠন রয়েছে। সংগঠনের প্রতিনিধিরা সবার কথা শুনে, আলোচনায় বসে মীমাংসার রাস্তায় হাঁটেন। গায়কদের জন্য দুটো মঞ্চ আছে। ক্যালকাটা সিনে মিউজিশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (সিসিএমএ) বাদ্যশিল্পীদের জন্য। অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রফেশনাল সিঙ্গার (অ্যাপস) গায়ক-গায়িকাদের জন্য। গায়কের অভিযোগ, এই দুই সংগঠনের অস্তিত্ত্ব নামে-মাত্র। কোনও কাজ আজ পর্যন্ত বাদ্যশিল্পী বা গায়কদের সুবিধার্থে এরা করেনি। ফলে, গান দুনিয়ার সঙ্গে জড়িতদের কথা শোনার তেমন কোনও কার্যকরী মঞ্চও নেই।
এই প্রসঙ্গে রূপঙ্কর আরও বলেন, রেডিয়োতে মরাঠি গান আবশ্যিক করার ডাক দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সবাই তাঁর কথা শুনেছিলেন। বাংলায় যদি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা অগ্রণি ভূমিকা নেন তা হলে হয়তো কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও হতে পারে।