রূপঙ্কর বাগচী।
রূপঙ্কর বাগচীর গান শ্রোতারা শুনছেন না? এই নিয়ে সবিস্তারে আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভে মুখ খুললেন শিল্পী নিজেই। বৃহস্পতিবারের আড্ডায় শিল্পী বিস্ফোরক— ২০১৭ থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৫৪টি কনটেন্ট বা বিষয় তিনি দিয়েছেন ইউটিউবে। সেখান থেকে পাঁচ বছরে তাঁর উপার্জন মাত্র আড়াই হাজার টাকা! নিজের পারিশ্রমিক বাদ দিয়ে এই ‘বিষয়’ তৈরির পিছনে তাঁকে খরচ করতে হয়েছে পাঁচ লক্ষ চার হাজার টাকা।
গায়কের ক্ষোভ, শিল্পীরা তা হলে যাবেন কোথায়? কোন পথে হেঁটে এক জন শিল্পী সফল হবেন?
এই কারণেই রূপঙ্করের নিজেকে নিয়ে যাবতীয় খারাপ লাগা, সামান্য হতাশা বোধ। গায়ক অকপটে জানিয়েছেন, ‘‘২০১৯-এর ছবি ‘উমা’র গান ‘জাগো উমা’ আমার শেষ জনপ্রিয় গান। তার পর থেকে একটি গানও শ্রোতাদের মনে ধরেনি। সবাই এখনও রূপঙ্কর মানেই বোঝেন ‘বউদিমণি’, ‘ভোঁ কাট্টা’, ‘এ তুমি কেমন তুমি’, ‘আজ শ্রাবণে’ ইত্যাদি। এর বাইরেও কত গান করেছি। শ্রোতারা শুনতেই চান না।’’ ইউটিউবেও অনেক গান তিনি আপলোড করেছেন। সে সব গানের অনুরোধ কোনও মঞ্চানুষ্ঠানে শোনানোর অনুরোধ নাকি পাননি শিল্পী!
রূপঙ্করের আরও আক্ষেপ, ছবির গান তার দৃশ্যায়নের জন্য অনেক দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। যদিও তা খরচ সাপেক্ষ। ইদানীং, আধুনিক গান তৈরি করতেও খরচ হচ্ছে বহু টাকা। কারণ? গান এখন শুধুই শোনার নয়। দেখা এবং শোনা দুটো বিষয়কে এক সঙ্গে তুলে ধরে। সেই জায়গা থেকে নতুন কোনও শিল্পী চাইলেই মিউজিক ভিডিয়ো বার করে ফেলতে পারেন না। এই ধরনের কাজ করতে ন্যূনতম খরচ লক্ষাধিক টাকা। নতুন শিল্পীকে এই অর্থ কে দেবে? আগের দিনের মতো খরচ জোগানোর জন্য কোনও মিউজিক সংস্থাও আর নেই।
এর পরে শিল্পী স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চান, তা হলে বাংলা আধুনিক গানের ভবিষ্যৎ কী? আগামীতে এই ধরনের গান আর কি কেউ শুনবেন না? অন্য এক পথের কথাও বলেছেন গায়ক। তাঁর বক্তব্য, আগামী দিনে সফল হতে গেলে হয় প্রথম সারির কোনও প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। যাতে তাঁদের ছবির নেপথ্য গায়ক বা গায়িকা হওয়া যায়। নয়তো জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো-তে গিয়ে ‘সেরা’র তকমা পেতে হবে। এর বাইরে তিনি আর কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছেন না বলে দাবি রূপঙ্করের।
রূপঙ্কর মেনে নিয়েছেন, তাঁর জনসংযোগের হাল খুব খারাপ। তিনি পার্টিতে যান না। গান গেয়ে সোজা বাড়ি ফেরেন। কাউকেই সাক্ষাতে নিজের গান বা গানের অনুষ্ঠান পাইয়ে দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন না। যাঁরা গান বাজনার মানুষের সঙ্গে সারা ক্ষণ ওঠা বসা করেন, তাঁদের কাজ পাওয়ার সুযোগ যে অনেক বেশি, তা স্বীকার করে নিয়েছেন শিল্পী। মনে করাতে ভোলেননি, অতীতেও গানের জগতে একই ভাবে সুরকার বা শিল্পীরা কাজ পেতেন।
তবে অস্থির এই সময়কেও গান কম শোনা বা অনেক ক্ষণ ধরে না শোনার অন্যতম কারণ হিসেবে ভেবেছেন রূপঙ্কর। বললেন, “মানুষ ধৈর্য ধরে গান শোনার সময়টা হারিয়ে ফেলছেন। গান যদি কেউ নাই শোনেন, তা হলে আমরা কোথায় যাব?”