তাঁর পদবিও ‘কুমার’। ইন্ডাস্ট্রির বাকি কুমার-তারকাদের মতো তিনিও কাজ শুরু করেছিলেন নয়ের দশকে। কিন্তু নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা বা খ্যাতির নিরিখে তাঁদের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি এই প্রযোজক-পরিচালকপুত্র। দর্শকদের আজ মনেই পড়ে না রোহিত কুমারের নাম।
রোহিতের বাবা মোহনকুমার ছিলেন বলিউডের নামী প্রযোজক, পরিচালক এবং লেখক। ইংরেজি বর্ণমালার ‘এ’ অক্ষর ছিল তাঁর খুব পছন্দের। বেশির ভাগে ছবির নামকরণ করতেন ‘এ’ দিয়েই।
ছয়, সাত এবং আটের দশকে প্রচুর ছবি প্রযোজনা করেছেন মোহনকুমার। ‘আমিরগরিব’, ‘আপ আয়ে বহার আয়ে’, ‘আপ তো অ্যায়সে না থে’, ‘অবতার’, ‘অমৃত’ তাঁর ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
নিজের ছেলেকে লঞ্চ করার জন্য যে ছবি তিনি বানিয়েছিলেন তার নামের আদ্যক্ষরও ‘এ’ দিয়েই—‘আজমায়িশ’।
সে সময় অন্য প্রযোজকদের সন্তানরাও বলিউডে একটু একটু করে কাজ শুরু করছিলেন। সলমন খান, অনিল কপূর, পূজা ভট্টের মতো তারকা তখন উঠে আসছেন। সানি এবং ববি দেওল তো তার আগে থেকেই ছিলেন। এমন সময়ে মোহনকুমারও তাঁর ছেলেকে আনলেন বলিউডে।
‘আজমায়িশ’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৫ সালে। শুধু মোহনকুমারের কথা ভেবে ছবিতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। ছিলেন মহনীশ বহেল এবং প্রেম চোপড়ার মতো অভিনেতাও।
ছবিতে রোহিতের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন অঞ্জলি জাঠর। অঞ্জলিও বেশি দিন থাকতে পারেননি ইন্ডাস্ট্রিতে। সিনেমায় পা রাখার আগে তিনি মডেলিংও করেছেন। ৪-৫ বছর কিছু ছবিতে অভিনয় করার পরে তিনি বিয়ে করে বিদেশে থিতু হন।
বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় ‘আজমায়িশ’। ফলে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন মোহনকুমার। এই ছবিতে লগ্নি করতে কার্পণ্য করেননি তিনি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর প্রযোজনা সংস্থাও।
এর পর আর কোনও ছবি প্রযোজনা করেননি মোহনকুমার। তাঁর ছেলে রোহিত কিন্তু থেকে যান অভিনয় জগতেই। কিন্তু নায়কের বদলে তাঁর কাছে পার্শ্বচরিত্রের সুযোগ আসতে থাকে। ‘লোহপুরুষ’, ‘আন্টি নম্বর ওয়ান’, ‘মুকদ্দর’-সহ কিছু ছবিতে তিনি ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন।
কিন্তু কিছু দিন পরে রোহিত বুঝতে পারলেন অভিনয় তাঁর জন্য নয়। তিনি তাঁর বাবার মতো প্রযোজনা ব্যবসায় চলে এলেন। ‘বুঢঢা মর গ্যয়া’, ‘আপ মুঝে অচ্ছে লগনে লগে’, ‘ভূত’— এই তিনটি ছবি তিনি প্রযোজনা করেন। কিন্তু কোনও ছবিতেই সাফল্য পাননি। অভিনেতার পরে প্রযোজক হিসেবেও তিনি রয়ে যান ব্যর্থদের তালিকাতেই।
এর পর ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়েই যান রোহিত। অথচ টিনসেল টাউনের চারদিকে তাঁর আত্মীয় পরিজনরা কাজ করছেন। দীপক পরাশর, হৃতিক রোশন তাঁর আত্মীয়। অজয় দেবগণও তাঁর আত্মীয় হতেন। কিন্তু শেষ অবধি সেই সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি।
রোহিত কুমারের এক তুতো বোন সিমরনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অজয় দেবগণের। তখনও অজয় তাঁর বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। চেষ্টা করছেন পরিচালক হওয়ার। তবে পরে অভিনয় শুরু করার পরে সিমরনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙে যায়। কারণ সে সময় নায়ক বিবাহিত হলে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর কদর থাকত না।
রোহিত একা নন। জ্যাকি ভগনানি, হরমন বাওয়েজার মতো প্রযোজকপুত্ররাও ইন্ডাস্ট্রিতে সফল নায়ক হতে পারেননি। সেই তালিকায় আরও একটি আরও একটি উল্লেখযোগ্য নাম উদয় চোপড়া।
ছবি প্রযোজনা এখনও সম্পূর্ণ ছাড়তে পারেননি রোহিত। কালেভদ্রে মুক্তি পায় তাঁর প্রযোজিত ছবি। কিন্তু সেগুলি পৌঁছতে পারে না প্রথম সারিতে। রয়ে যায় দর্শকদের অগোচরেই।