‘রকেট্রি দ্য নাম্বি এফেক্ট’-এ নারায়ণন চরিত্রকে অধিক গরিমান্বিত করে দেখানো হয়েছে বলে দাবি প্রাক্তন ইসরো বিজ্ঞানীদের।
রকেট্রিতে তাঁর কোনও অবদান নেই। চরবৃত্তি এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল ইসরোর প্রাক্তন বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণনকে। আর মাধবন পরিচালিত এবং অভিনীত ‘রকেট্রি দ্য নাম্বি এফেক্ট’-এ নারায়ণন চরিত্রকে অধিক গরিমান্বিত করে দেখানো হয়েছে বলে দাবি প্রাক্তন ইসরো বিজ্ঞানীদের।
২৪ অগস্ট তিরুবনন্তপুরমে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ছবি নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক চলে। সেখানেই মুখ খোলেন নাম্বি নারায়ণনের প্রাক্তন সহকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, নারায়ণনকে গ্রেফতারের কারণে ভারত ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনগুলির বিকাশে কোনও বিলম্বের মুখোমুখি হয়নি। বড় কোনও আর্থিক ক্ষতিও হয়নি। বিজ্ঞানীদের দাবি, নাম্বি নারায়ণনের জীবননির্ভর ছবি এ নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, ‘নাম্বি ইফেক্ট’-এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। মাধবনের ছবিতে দেখানো সব কিছুই সত্য, এমনটা নয়। বিজ্ঞানীদের অভিযোগ, নাম্বি নারায়ণ পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন, কিন্তু ইসরোতে তাঁর কাজের নিরিখে নয়।
বুধবারের বৈঠকে বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘‘ইসরো আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে নিজস্ব ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। ইভিএস নাম্বুথিরি এর দায়িত্বে ছিলেন। সে সময়ে নাম্বি নারায়ণনের সঙ্গে ক্রায়োজেনিক্সের কোনও সম্পর্ক ছিল না। পরে, জ্ঞান গাঁধীর নেতৃত্বে, ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনের বিকাশ শুরু হয়েছিল, কিন্তু নাম্বি নারায়ণ সেই দলেও ছিলেন না।’’
শুধু তা-ই নয়, ছবিতে দেখানো হয়েছে বিক্রম সারাভাই স্নাতকোত্তর পড়তে আমেরিকার প্রেস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন নারায়ণনকে। যে তথ্যও সম্পূর্ণ ভুল বলে জানান বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, সারাভাই প্রেরিত সেই চরিত্র আদতে এলপিএস ডিরেক্টর মুথুনায়েকমের উপর আধারিত।
বিজ্ঞানীরা জানান, ১৯৬৮ সালে ইসরোর কারিগরি সহকারী হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন নাম্বি নারায়ণন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের অধীনে মাত্র কয়েক মাস কাজ করেছিলেন তিনি। এ দিকে ছবিতে রয়েছে নাম্বি নারায়ণন দাবি করেছিলেন, আব্দুল কালাম ভুল করলেও তিনি সংশোধন করে দিয়েছিলেন।
গত ১ জুলাই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট’। ছবিতে অভিনয় করেছেন ফিলিস লোগান, ভিনসেন্ট রিওটা এবং রন ডোনাচি সহ একাধিক শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অভিনেতা। হিন্দি, ইংরেজি, তামিল, তেলুগু, মালায়ালাম এবং কন্নড়— ছয়টি ভিন্ন ভাষায় বক্স অফিস মাতিয়েছে সে ছবি। চিত্রনাট্য, সম্পাদনা, উপস্থাপনা— সব দিক দিয়েই ছবিটি সফল বলে মনে করছেন সমালোচকরাও। কিন্তু সাংবাদিক বৈঠকে ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিযোগ নতুন করে শোরগোল ফেলল।
ছবির প্রদর্শনীতে এসে ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর অভিনেতা মাধবন নিজেই বলেছিলেন, ‘‘দর্শক বোকা নন। ছবিতে রকেট সায়েন্স না বোঝাতে পারলেও এর গুরুত্ব বোঝাতে পেরেছি আশা করি।’’
আর এ দিকে তাঁর ছবিই মিথ্যা তথ্যে ভরা? যদিও পরিচালকের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।