REKKA

REKKA: রহস্যের বুনটে শেষ পর্যন্ত টানটান

এই সিরিজ়ের একটি বিশেষ দিক হল রবীন্দ্রসঙ্গীতের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার। প্রতিটি গানই বহু না-বলা কথার ভাষ্য রচনা করেছে, যা মনকে স্পর্শ করে।

Advertisement

সুবর্ণ বসু 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২১ ০৭:২৮
Share:

রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি (ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: রাহুল, আজমেরি, অনির্বাণ
৭/১০

Advertisement

বছরপাঁচেক আগে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ বইটি পড়েছিলাম। একবার ধরলে শেষ না করে ছাড়া যায় না, কিন্তু মৌলিক মনে হয়নি। কারণ দু’দশকেরও বেশি আগে ইটিভি বাংলায় দেখা ‘রহস্য গল্প’ ধারাবাহিকের একটি পর্ব। রামোজী প্রোডাকশনের সিরিয়াল, পরিচালক দেবাংশু সেনগুপ্ত। প্রতি পর্বে একটি করে গল্প দেখানো হত। সেগুলোর মধ্যেই একটি ‘স্বাদ’। ‘রুবিজ় কিচেন’ নামে একটি রেস্তরাঁ নিয়ে গল্প। মালকিনের ভূমিকায় ছিলেন সুদীপা বসু। পর্বটি এখনও ইউটিউবে পাওয়া যায়। ‘স্বাদ’ গল্পে নানা সাবপ্লট জুড়ে সার্থক রহস্য-উপন্যাসে রূপ দেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই লেখকের প্রাপ্য। আবার উপন্যাস কতটা সিনেম্যাটিক হলে, তার প্রায় কিছুই না বদলে সিনেমার ভাষায় অনুবাদ করা সম্ভব, এ সিরিজ় তার সার্থক উদাহরণ।

সুন্দরপুর একটি গ্রাম। সেখানে জমিদার বাড়ির বধূ মুসকান জ়ুবেরির একটি রেস্তরাঁ আছে। সেটিরই নাম ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’। অসম্ভব কৌতূহলোদ্দীপক নাম। এবং তেমনই সুস্বাদু সেখানকার রান্নাবান্না। কর্ত্রী মুসকান নিজে রান্না করে। সে রান্না একবার খেলে বারবার আসতে হয়। সুন্দরপুরের প্রশাসনিক মাথাদের সঙ্গে মুসকানের নিয়মিত ওঠাবসা। তাকে ঘিরেই দানা বাঁধে রহস্য। সুন্দরপুরে এসে পৌঁছয় এক আগন্তুক। নিজের পরিচয় দেয় ‘মহাকাল’ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে। তার সঙ্গে আলাপ হয় পুলিশের ইনফর্মার আতর আলীর। আগন্তুক রাতের অন্ধকারে মুসকানের বাড়িতে পাঁচিল টপকে ঢুকলে নড়েচড়ে বসে সুন্দরপুরের পুলিশ। আগন্তুককে তুলে আনা হয় থানায়। গল্প আর একটু সিরিয়াস দিকে মোড় নেয়।

Advertisement

একটি আকর্ষক আখ্যান নির্বাচন এবং পর্দায় তার প্রতি পূর্ণ সুবিচার করার প্রশংসা প্রাপ্য পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। শোনা যায়, সত্যজিৎ রায় ‘ঘরে বাইরে’ নির্মাণের সময় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, নিখিলেশ ও সন্দীপ দু’টি চরিত্রের জন্যই উপযুক্ত সৌমিত্র। যে চরিত্রের উপযুক্ত অভিনেতা পাবেন না, সেটিই সৌমিত্র করবেন। পরে নিখিলেশ হিসেবে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনীত হলে সন্দীপ করেন সৌমিত্র। এই ‘রবীন্দ্রনাথ...’ এর ক্ষেত্রেও মনে হল, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ‘নুরে ছফা’ এবং ‘আতর আলী’ দু’টির জন্যই মানানসই ছিলেন। অভিনেতা রাহুল বসু নুরে ছফা বেশ ভালই উতরে দিয়েছেন। একটু ভুল বললাম, নুরে ছফা নয়, নিরুপম চন্দ। কিন্তু অনির্বাণ আতর আলীকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, সেটা সম্ভবত আর কাউকে দিয়ে হত না। সিরিজ়ে অনেক নামই বদলেছে। ওসি তোফাজ্জল হয়েছেন তপন, এসপি মনোয়ার হয়েছেন মানবেন্দ্র, ডাক্তার আসকার ইবনে সাইদ হয়েছেন ইন্দ্রায়ুধ সেন... সেগুলো একরকম। ধ্বনিগত অনুষঙ্গও বজায় আছে। তবু প্রধান চরিত্রের নাম নুরে ছফা থেকে নিরুপম চন্দ এবং কে এস কে, অর্থাৎ খোদাদাদ শাহবাজ খান থেকে খরাজ খাসনবীশ হয়ে গেলে পরিচিত ইমপ্যাক্টে একটু হলেও ঘাটতি অনুভূত হয়।

অভিনয়ের প্রসঙ্গে অবশ্যই বলতে হয়, আজমেরি হক বাঁধনের কথা। মুসকান জ়ুবেরিকে তাঁর সমস্ত আবেদন এবং রহস্যময়তায় মূর্ত করে তুলেছেন তিনি। খরাজ খাসনবীশের ভূমিকায় অঞ্জন দত্ত এবং তপন শিকদারের ভূমিকায় অনির্বাণ চক্রবর্তী খুব ভাল। বাকিরাও যথাযথ। প্রথম তিনটি পর্ব একটু মন্থর লেগেছে, চতুর্থ পর্ব থেকে তা আর মনে হয়নি।

এই সিরিজ়ের আরও একটি বিশেষ দিক হল রবীন্দ্রসঙ্গীতের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার। প্রতিটি গানই বহু না-বলা কথার ভাষ্য রচনা করেছে, যা মনকে স্পর্শ করে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘নীলু হাজরার হত্যারহস্য’ মনে পড়ে যায়, যেখানে ক্লাইম্যাক্সে এম পি মদন এবং পেশাদার খুনি নব হাটির কথোপকথনের পাদপূরণ করেছিল রেকর্ড প্লেয়ারে বেজে চলা রবীন্দ্রসঙ্গীত। উস্তাদ রাশিদ খানের ‘কার মিলন চাও বিরহী’ গানের সঙ্গে প্রাচীন জমিদার বাড়ির সিঁড়ি ভেঙে উঠে চলা মুসকান জ়ুবেরি, সঙ্গে সিপিয়া টোনের কনে দেখা আলোর সিনেম্যাটোগ্রাফি অত্যন্ত নান্দনিক। এমন সিরিজ বাংলা সিরিজ়ের প্রতি দর্শককে আরও আগ্রহী করে তুলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement