শুধু নারী ও পুরুষের প্রেম নয়, সেই আবেগের মধ্যে ঢুকে গেছে ভালবাসার বৈচিত্রময় স্তর।
কুনাল দেশমুখ পরিচালিত ‘শিদ্দত’ একটি আদ্যন্ত রোমান্টিক গল্প। গান এবং নাচ সেখানে সঙ্গত করেছে বর্ণময় স্রোত হিসেবে, যেখানে রয়েছে তীব্র আবেগের দহন ও নেশা। ২০২১-এর তরুণ প্রজন্ম, তাদের প্রেম, ভালবাসা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর তারই মধ্যে ঢুকে পড়ে যেন ১৯৯০-এর দশকের প্রেমের পাগলামি। অভিনয়ে রয়েছেন সানি কৌশল, রাধিকা মদন, মোহিত রায়না, ডায়ানা পেন্টি প্রমুখ।
এ শুধু নারী ও পুরুষের প্রেম নয়, সেই আবেগের মধ্যে ঢুকে গেছে ভালবাসার বৈচিত্রময় স্তর। যেখানে বিচরণ করে কূটনীতিবিদ এবং তার সমাজকর্মী স্ত্রী, তাদের প্রেম, এক জন সমাজসেবকের মানুষ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং কূটনীতিকের দায়িত্ব-কর্তব্য বোধ। একই সঙ্গে গল্পের মধ্যে সমান্তরাল পথে চলে বন্ধুত্ব, হুল্লোড়, কামনা বাসনা, সহমর্মিতা… প্রতিটি আবেগ মোড়ক খুলে নিজেকে উন্মোচন করে দেয়।
ঝঞ্ঝাট-হাতাহাতির মধ্যে দিয়েই জাগ্গি আর কার্তিকার বন্ধুত্ব জমে ওঠে।
ফ্রান্সে অবস্থানরত ভারতীয় কূটনীতিক গৌতম (মোহিত রায়না) ও তার স্ত্রী সমাজকর্মী ইরা (ডায়ানা পেন্টি)। এদের ভালোবাসা এবং জীবনবোধ অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় হকি খেলোয়াড় জাগ্গির প্রেমের গল্পের ভিতর।
এখানে প্রধান চরিত্র জাগ্গি (সানি কৌশল) জাতীয় দলের হকি খেলোয়াড়। আর কার্তিকা (রাধিকা মদন) জাতীয় দলের একজন সাঁতারু। খেলার কর্মশালাতেই তাদের প্রথম দেখা। কার্তিকা সুইমিং পুলের নীল জল থেকে উঠে পোশাক পরিবর্তন করে এগিয়ে আসছে, আর জাগ্গি মজার ছলে লুকিয়ে তার সঙ্গে একটা নির্দোষ ছবি তুলে ফেলছে। ব্যস, শুরু হয় সংঘাত! কার্তিকাও ঝাঁপিয়ে পড়ে হকি দলের নিজস্ব ঘরে ঢুকে তাদের বেআব্রু করে ছবি তোলা শুরু করে। এই ঝঞ্ঝাট, হাতাহাতির মধ্যে দিয়েই কখন যেন জাগ্গি আর কার্তিকার বন্ধুত্ব জমে ওঠে। জাগ্গি প্রথম থেকেই প্রেমে হাবুডুবু। কার্তিকাকে সময় মেপে অনুশীলন করানো, কার্তিকার উন্নতি— এ সবই যেন তার লক্ষ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু তারই মধ্যে সে জানতে পারে, তিন মাস বাদে লন্ডনে কার্তিকার বিয়ে।
জাগ্গি কিছুতেই তার ভালবাসাকে হারাতে চায় না, মানতে পারে না এই বিয়ে। অন্য দিকে কার্তিকা তাকে ভালবাসলেও বিয়ের সম্পর্কে যেতে চায় না। সে জাগ্গিকে হুল্লোড় আর মজার সঙ্গী হিসেবেই ভাবে।
জগ্গি হিসেবে সানি কৌশলের অভিনয় চমৎকার। ভাল লাগে রাধিকা মদনকেও।
আর সেখান থেকেই প্রেমের জন্য অবিশ্বাস্য দৌড় শুরু হয় জাগ্গির, জলন্ধর থেকে ফ্রান্সের ক্যালে হয়ে লন্ডন পর্যন্ত। তারই মাঝে সঙ্গত করে অনুমোদিত অভিবাসন, অভিবাসীদের জীবনধারা, এক দেশ থেকে আর এক দেশে প্রবেশের সীমান্ত সমস্যা, উদ্বাস্তুদের জীবন যাপনের যুদ্ধ।
কূটনীতিবিদ গৌতম, যাকে দেখা যায় নিজের কর্মক্ষেত্রের প্রতি বিশ্বস্ত, কর্তব্যে অবিচল, সে-ই কেমন পাল্টে গিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় পাগল প্রেমিক জাগ্গির দিকে। আর সেখানেই ধীরে ধীরে গৌতমের ভেঙে যাওয়া ভালবাসা জোড়া লাগতে থাকে, স্ত্রী ইরা ফিরে আসে। পাশাপাশি চলতে থাকে তাদের গল্প।
ভালবাসা যে শেষ পর্যন্ত উন্মাদ এবং অন্ধ— এই ছবি সেই কথাই বলে বারবার। জীবনরসে ভরপুর, উচ্ছ্বল, সদা হাসিখুশি জাগ্গি তার প্রেমিকাকে ফিরে পেতে কী না করেছে! কখনও সে ফ্রান্স থেকে লন্ডনে পৌঁছতে চেয়েছে সমুদ্র সাঁতরে, কখনও বা বিমানের ককপিটে চেপে।
এখানেই ধন্দ লাগে, আধুনিক প্রজন্মের যুবক জাগ্গি, খেলার সুবাদে যার চাকরি সুনিশ্চিত, সে কী করে নিজের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে, জীবন তুচ্ছ করে, প্রেমের জন্য এক অসম্ভব যাত্রা শুরু করতে পারে!
এ ছবিতে চরিত্রগুলির সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থান, প্রেক্ষাপট ইত্যাদি সুস্পষ্ট করা হয়নি। জাগ্গি তার মায়ের কথা একাধিক বার বললেও তাঁকে কখনও দেখানো হয়নি। চরিত্রগুলির বিদেশে অবস্থান এবং কার্যক্রম, এ সবের মাঝখানকার সূত্র বেশ আলগা। কেন, কখন, কী ভাবে— এই সব বুঝতে দর্শককে ধন্দে পড়তে হয়।
তবে ছবিতে লেগে রয়েছে জীবনের উচ্ছ্বাসের ঝলমলে রং। নাচ, গান, ভালবাসা, খ্যাপামি… সব কিছু নিয়ে জীবনের এক ভরপুর উদ্যাপন।
জগ্গি হিসেবে সানি কৌশলের অভিনয় চমৎকার। ভাল লাগে মোহিত রায়না, রাধিকা মদন এবং ডায়ানা পেন্টিকেও। সচিন-জিগর সুরারোপিত এ ছবির গানও দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।
২০২১ সালের তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন, জীবনযাত্রা এবং উচ্ছ্বাসের মধ্যে একাধিক বার হানা দিচ্ছে ১৯৯০-এর দশকের আবেগ, এমন মনে হতেই পারে। আসলে আবেগ যে চিরন্তন, তাকে সময় দিয়ে বাঁধা যায় না, মাপা যায় না, ভিতরে ভিতরে খুব বেশি তার পরিবর্তন হয় না, পরিচালক এবং গল্পকার হয়তো শেষ পর্যন্ত এই কথাটাই বলতে চেয়েছেন।