গল্পই নায়ক, তবু উজ্জ্বল আয়ুষ্মান

স্থবিরতা সমাজের প্রতিটি স্তরের গভীরে প্রোথিত। নিম্নবর্ণের শোষণে মিলে যায় শাসকের মদতপুষ্ট ব্যক্তি ও প্রশাসন। সেই পচে যাওয়া ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিতেই বিদেশে পড়া আইপিএস অফিসার অয়ন রঞ্জনের (আয়ুষ্মান) আবির্ভাব। উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম লালগাঁওতে।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০০:০৩
Share:

আর্টিকল ১৫
পরিচালনা: অনুভব সিংহ
অভিনয়: আয়ুষ্মান, মনোজ, কুমুদ, সায়নী, জিশান আয়ুব
৭/১০

Advertisement

ঋষি কপূর-তাপসী পান্নু অভিনীত ‘মুল্ক’ দিয়ে তাঁর ছবির ঘরানা পাল্টে ফেলেছিলেন পরিচালক অনুভব সিংহ। একই যাত্রাপথে পরের গন্তব্য ‘আর্টিকল ১৫’। অনুভবের নজরে এখন দেশের সংখ্যালঘু শ্রেণি। সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষাপটে হিন্দু ও মুসলিমের পারস্পরিক সমীকরণ প্রসঙ্গে অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলেছিল ‘মুল্ক’। দলিত সম্প্রদায়ের দুই নাবালিকার গণধর্ষণকে সামনে রেখে এ বারও প্রশ্ন তুলেছে ‘আর্টিকল ১৫’-এর প্রধান চরিত্র। তবে ছবির বেশির ভাগ চরিত্র প্রশ্নগুলো শুনতেও চায় না। সামাজিক স্থিতাবস্থা যে ধাক্কা খাবে তাতে!

স্থবিরতা সমাজের প্রতিটি স্তরের গভীরে প্রোথিত। নিম্নবর্ণের শোষণে মিলে যায় শাসকের মদতপুষ্ট ব্যক্তি ও প্রশাসন। সেই পচে যাওয়া ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিতেই বিদেশে পড়া আইপিএস অফিসার অয়ন রঞ্জনের (আয়ুষ্মান) আবির্ভাব। উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম লালগাঁওতে।

Advertisement

এই পুলিশ অফিসারই কি ছবির হিরো? না, গল্পই ছবির নায়ক। গল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলার বাহক আয়ুষ্মান। পুলিশের চরিত্রে প্রথম বার। আগের ছবিগুলোর মতোই এ বারও সফল অভিনেতা। ছবি যত এগিয়েছে, আয়ুষ্মানের অভিনয়ও তত পরিণত হয়েছে।

এই ছবির এক দিকে জাতপাতের বৈষম্য, উচ্চবর্ণের অহমিকা, প্রশাসনের অকর্মণ্যতা। অন্য দিকে সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক নেতা, প্রত্যাশার চাপে হারিয়ে যাওয়া দলিত নেতার মতো বাস্তব চরিত্ররা। দুইয়ের মাঝে আয়ুষ্মানের চরিত্রটি যেন মাল্টিপ্লেক্স দর্শকের মুখপাত্র। প্রথম দিকে অয়ন তার নতুন পোস্টিং সম্পর্কে যতটা অনভিজ্ঞ, ততটাই দর্শকও। আয়ুষ্মানের চরিত্রায়নের এই দিকটিই দর্শককে গল্প থেকে দূরে সরে যেতে দেয় না। ঘটনার ঘনঘটা কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি করে ঠিকই। তবে দর্শকের বিরক্তি জাগবে না।

এই ছবির সহকারী অভিনেতারাও আয়ুষ্মানের যোগ্য সঙ্গত করেছেন। দুষ্ট পুলিশ অফিসারের চরিত্রে মনোজ পহওয়া অসাধারণ। সহকর্মীর শোষণে নিপীড়িত পুলিশের চরিত্রে কুমুদ মিশ্র দারুণ। সায়নী গুপ্তের বেশি সংলাপ না থাকলেও তাঁর চোখের ভাষায় অসহায়তা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে মহম্মদ জিশান আয়ুবও ভাল।

গল্প-চিত্রনাট্যের পাশাপাশি ছবির সংলাপ আলাদা করে দাগ কাটে। পরিচালকের সঙ্গে গৌরব সোলাঙ্কিও এর জন্য প্রশংসা দাবি করেন। ইওয়ান মুলিগানের ক্যামেরায় বিস্তীর্ণ গমের খেত, নোংরায় ভরা ডোবা, ধূ ধূ রাস্তায় পুলিশি টহল দেখতে বেশ লাগে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে ছবির কালার টোনও গুরুত্বপূর্ণ।

সমাজ, সিস্টেম এবং তার পাকচক্র থেকে বেরোনোর সম্ভাব্য সমাধান— এই নিয়ে অয়ন ও তার সমাজকর্মী প্রেমিকার মধ্যে মেসেজ আদান-প্রদান, দম আটকে যাওয়া লালগাঁওয়ে একমুঠো খোলা হাওয়া। ওই কথোপকথনেই রয়েছে যাবতীয় প্রশ্ন। যার উত্তর এক এক জনের কাছে এক এক রকম। সব উত্তর কোনও দিনই কি মিলবে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement