দৃশ্যম ছবির একটি দৃশ্য।
দৃশ্যম টু (মালয়ালম)
পরিচালনা: জিতু জোসেফ
অভিনয়: মোহনলাল, মীনা, অনসিবা, এস্থার
৭/১০
পেরিয়ে গিয়েছে আট বছর। ছবির গল্প অনুযায়ী, অবশ্য ছ’ বছর। ইতিমধ্যে বদলেছেন দর্শক, বদলেছে জর্জকুট্টির আর্থ-সামাজিক অবস্থা। তবে শত বদলের মাঝেও হারিয়ে যায়নি জিতু জোসেফের সাড়া জাগানো মালয়ালম হিট ‘দৃশ্যম’। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি চিনা ভাষাতেও ছবিটির রিমেক করা হয়েছে। এমন একটি ছবির সার্থক সিকুয়েল বানানো সহজ কাজ নয়। তবে সেই অসাধ্যসাধন করেছেন পরিচালক জিতু, তাঁর জর্জকুট্টি এবং ‘দৃশ্যম টু’ ছবিটি। এ বারের ছবিটি ওটিটির পর্দায় মুক্তি পেলেও, মালয়ালম ছবির ইতিহাসে এক নজির হিসেবে রয়ে যাবে ‘দৃশ্যম’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি।
আগের ছবি বা হিন্দি ভার্সন না দেখা থাকলে, সিকুয়েলটি উপভোগ করা একটু কঠিন। কারণ নতুন ছবিতে সাব-প্লটের ঘনঘটা নেই। আগের ছবি যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকে সিকুয়েল যে হতেও পারে, দর্শককে তেমন আভাস দেওয়া হয়নি। সেটি নতুন ছবির পক্ষেই কাজ করেছে। ‘দৃশ্যম’-এর মূল সুর ‘হুডানইট’ নয়, বরং ‘হাউডানইট’। নিজের পরিবারকে বাঁচাতে এক সাধারণ নাগরিক
কী ভাবে পুলিশের চোখকে বারবার ফাঁকি দেয়, আগেরটির মতো নতুন ছবির উপজীব্য সেটাই।
কিন্তু সেই সত্যে উপনীত হওয়ার আগে, ছবির পটভূমি তৈরি করতে বেশ খানিকটা সময় নেওয়া হয়েছে। ছবির শুরুতে (নাম দেখানোর সময়ে) জর্জকুট্টির (মোহনলাল) ঝলক উপস্থিতির রহস্য উন্মোচনের আগে ধৈর্য রাখতে হবে দর্শককে। তবে ছবিশেষের আধঘণ্টার চমক দর্শকের মনে যাতে জোরালো ছাপ ফেলতে পারে, সেই জন্য হয়তো প্রথমার্ধের মন্থর গতির আয়োজন।
‘দৃশ্যম’ ছবির নামটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যা দেখানো হচ্ছে, তা কি আদৌ সত্যি? আর সেটা যদি সত্যি হয়, তবে তা কী করে সম্ভব হচ্ছে? এক দিকে চরিত্র, অন্য দিকে দর্শক এবং তাদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেছেন এ ছবির লেখক-পরিচালক জিতু।
কী ভাবে জর্জ তার অভিযানে সাফল্য পাচ্ছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণে যুক্তির ফাঁক রয়েছে। ‘দৃশ্যম টু’ সেই যুক্তিহীনতাকে অগ্রাহ্য করে না। বরং সেই ‘ফাঁক’ই ছবির সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় অস্ত্র। সাহিত্য বা সিনেমায় পাঠক ও দর্শকের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ‘উইলিং সাসপেনশন অব ডিসবিলিফ’। পাঠক ও দর্শকের সেই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকেই বাজি ধরে গল্প সাজিয়েছেন জিতু। নিজের ছবির গল্পে যখন তিনিই দেখিয়ে দিচ্ছেন, সিনেমা থেকে সেটি ধার করা, সেখানে গল্পের যুক্তিহীনতা খোঁজার কি দরকার থাকতে পারে? সিনেমার অন্তর্নিহিত সিনেমার প্লট এবং তা দিয়ে একটি বৃহত্তর সিনেম্যাটিক জগৎ গড়ে তোলা... এখানেই ছবির সার্থকতা।
এ ছবি নিঃসন্দেহে লেখকের। তবে ছবির উৎকর্ষ বাড়াতে অভিনেতারাও কম যান না। জর্জের চরিত্রে মোহনলাল অনবদ্য। ছবির শেষ দু’তিনটি দৃশ্যে তাঁর সংলাপহীন চাহনি বলে দেয়, কেন এটি সিনেপ্রেমীদের কাছে শুধুমাত্র একটি চরিত্র নয়, বরং তার চেয়েও বেশি। মোহনলালের স্ত্রীর চরিত্রে মীনা, বড় মেয়ে অঞ্জুর চরিত্রে অনসিবা, ছোট মেয়ে অনুর ভূমিকায় এস্থার অনিল বেশ ভাল। সরিতার চরিত্রে অঞ্জলি নায়ারও নিজের ছাপ তৈরি করেন। অনিল জনসনের সঙ্গীত ছবির
সঙ্গে মানানসই।
বেশির ভাগ ওয়েব প্ল্যাটফর্মের পছন্দের জ়ঁর থ্রিলার। কিন্তু এই সময়ে বাজারে একাধিক থ্রিলারের ভিড়ে ফর্মুলাকেন্দ্রিক হয়ে ওঠার প্রলোভন সামলানো কঠিন। ‘দৃশ্যম টু’ দেখিয়ে দিল, ভাল থ্রিলার বানানোর জন্যও ভাল লেখনীর বিকল্প নেই। ফর্মুলা সেখানে অবান্তর। আর সিকুয়েল বানাতে গেলে অযথা চরিত্রের ভিড় বাড়ানোর দরকার পড়ে না। সিনেমাকে ট্রিবিউট দিয়ে, তার টানেই বানিয়ে ফেলা যায় একটি মনোগ্রাহী সিকুয়েল।