আউট অব লাভ সিজ়ন টু
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: অনি সেন
অভিনয়: রসিকা, পুরব, কবীর, মীনাক্ষী, হর্ষ, একাবলী
৫.৫/১০
কপ-ড্রামা ও স্পাই-থ্রিলারের ভিড়ে ডিজ়নি প্লাস হটস্টারের একটি সিরিজ় (প্রথম সিজ়ন ২০১৯ সালে) নজর কেড়েছিল। তার অনেকটা কৃতিত্ব মুখ্য চরিত্রের দাপুটে অভিনেত্রী রসিকা দুগ্গলের। পাশাপাশি পরকীয়ার চোরাস্রোতে দাম্পত্যের ভাঙাগড়া খেলার গল্পটিও দর্শককে বুঁদ করেছিল। অনি সেন পরিচালিত ‘আউট অব লাভ’-এর সিজ়ন টু-এ প্রতিশোধের খেলা অব্যাহত। কিন্তু তাতে নেই প্রথম সিজ়নের রুদ্ধশ্বাস গতি, বিঞ্জ ওয়াচের দুরন্ত আকর্ষণ বা মোচড় দেওয়া কোনও ঘটনা। প্রথম সিজ়নের পরকীয়ার ঝাঁজ এখানে যেন জানালা দিয়ে পালিয়েছে!
ডা. মীরা কপূর (রসিকা) এবং তার টিনএজ ছেলে অভি (কবীর কাচরু) কুন্নুরে নিজের মতো করে জীবন সাজিয়ে নিয়েছে। অভি মিস করে তার বাবাকে, মীরা তার প্রবঞ্চক স্বামী আকর্ষকে (পুরব কোহালি)। কিন্তু সেই অভাবের চেয়ে আকর্ষের কুন্নুরে ফিরে আসা যেন বেশি ঝামেলার মীরা ও অভির কাছে। আকর্ষ ফিরে আসে দ্বিতীয় স্ত্রী আলিয়া (মীনাক্ষী চৌধুরী) এবং তিন বছরের মেয়ে আহানাকে নিয়ে। প্রথম সিজ়নে মীরা আবিষ্কার করেছিল আকর্ষের সঙ্গে আলিয়ার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক।
পরকীয়া যখন বিয়ের মান্যতা পেয়ে যায়, তখন তার জৌলুস কমতে বাধ্য। দ্বিতীয় সিজ়নে মীরার আবিষ্কার করার কিছু নেই। সে তার ছেলেকে আকর্ষের কাছ থেকে আগলে রাখতে চায় এবং আকর্ষকে কুন্নুরছাড়া করতে চায়। মীরার স্বামীর উদ্দেশ্য খানিক তেমনই। বিবদমান দুই প্রাক্তনের ট্রোফি তাদের ছেলে। এই খেলায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী সে-ই।
পাঁচটি পর্বের এই সিজ়নে ঘটনার ঘনঘটা নেই। গল্পটি যেন একই জায়গায় চক্কর খেয়েছে। মীরা-আকর্ষের প্রেম-অপ্রেমের সম্পর্কের সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অভির নিজস্ব ক্রাইসিসকে। এক কিশোরের গুমরে থাকা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে পথভ্রষ্ট হওয়ার মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলিকেও সামনে আনা হয়েছে। কিন্তু কোথাও যেন গল্পটা জমাট বাঁধেনি। মীরার জীবনে নতুন প্রেম আসে, রোহন (বিশ্বাস কিনি)। কিন্তু সেটিও গুরুত্ব পায়নি। যে পরকীয়া সম্পর্ককে ঘিরে এই সিরিজ়ের অবতারণা, দ্বিতীয় সিজ়নে সেই আলিয়াকেও খানিক অতিথি-শিল্পী মনে হয়েছে। সিরিজ়ের সবটুকু লাইমলাইট আকর্ষ আর মীরার জন্য। কিন্তু তাদের একে অন্যকে মাত দেওয়ার খেলায়, গল্পটি বাজিমাত করতে পারেনি।
তবু এই সিরিজ় যাঁদের জন্য দেখতে হয়, তাঁরা এ বারও স্বমহিমায় বিরাজমান। বলা যায়, তাঁরাই সিজ়নটিকে ধরে রেখেছেন। প্রেম এবং প্যাশনতাড়িত দুই চরিত্রের ভূমিকায় রসিকা এবং পুরব অনবদ্য। নারীর চাহিদা এবং মায়ের ভূমিকার মাঝে দোদুল্যমান মীরার চরিত্রে রসিকাকে আগের বারের চেয়ে কম আক্রমণাত্মক দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই সিরিজ়ে সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি সেই রহস্যময়ী নারীচরিত্রই। এষা চোপড়া এবং অমনদীপ সিংহের চিত্রনাট্যে এমন ‘টোন ডাউন’ করার ব্যাখ্যা নেই। আলিয়ার মা-বাবার চরিত্রে একাবলী খন্না এবং হর্ষ ছায়ার উপস্থিতিও রয়েছে।
আগের সিজ়নের পাঁচটি পর্ব পরিচালনা করেছিলেন তিগমাংশু ধুলিয়া এবং এজ়াজ় খান। এ বারের সব ক’টির নির্দেশনা দিয়েছেন ‘অসুর’খ্যাত পরিচালক অনি সেন। পরিচালনার গুণেও সাধারণ গল্প মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। আগের সিজ়নে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িকও আবহ তৈরি করেছিল। কিন্তু এত টানটান প্লট পেয়েও দ্বিতীয় সিজ়ন ‘লাভেবল’ করে তুলতে পারেননি পরিচালক।