স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম ছবির দৃশ্য।
ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো। হাউসফুল। প্রি বুকিং। অনেক দিন পরে শব্দ ক’টি সত্যি হয়ে উঠল বৃহস্পতিবার সকালে। সৌজন্যে, মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স। যার সুপারহিরোরা সারা বিশ্বকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলতে পারে। যে সুপারহিরো লিগের কনিষ্ঠতম সদস্যটিকে দেখতে এ দিন সকাল সকাল হল ভরিয়ে দিয়েছিলেন ভক্তরা। ‘স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম’ ফেরায়নি তাঁদের। পরতে পরতে চমক, চেনা মুখেদের ঝলক, আগামীর আভাসে টানটান আড়াই ঘণ্টার ভরপুর বিনোদন। স্পাইডি-ফ্যানদের জন্য এ ছবি নতুন বেঞ্চমার্ক তৈরি করে দিয়ে যায়। জন ওয়াটস পরিচালিত স্পাইডার-ম্যান ট্রিলজির এই তৃতীয় ছবি শেষ হয় খানিকটা মনখারাপ আর আগামীর বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়ে।
‘ফ্রেন্ডলি নেবারহুড’ থেকে ‘পাবলিক এনিমি’ বলে দেগে দেওয়ায় বিভ্রান্ত, নাজেহাল পিটার পার্কারকে দিয়ে ছবি শুরু হয়। মিস্টেরিয়োর মৃত্যুর রেশ ও পিটারের আসল পরিচয় প্রকাশ্যে আসার তীব্র অভিঘাত পড়ে তার বন্ধু, স্বজনদের উপরেও। আটকে যায় তাদের কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া। এক ‘বিশেষ’ আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে পিটার সে যাত্রা গা বাঁচিয়ে দ্বারস্থ হয় ডক্টর স্ট্রেঞ্জের। অনুরোধ করে, সকলে যাতে স্পাইডার-ম্যানের আসল পরিচয় ভুলে যায়। স্ট্রেঞ্জের স্পেল চলাকালীন ঘটে হিতে বিপরীত। ছেলেমানুষির মাসুল দিতে হয় পিটারকে, নিজের ও সকলের বিপদ ডেকে আনে সে। আবার সেই একই পথ ধরে আসে রক্ষাকর্তারাও। শুরু হয় ধুন্ধুমার মোকাবিলা।
ছবির গল্প নিয়ে এর বেশি লিখলে তা স্পয়েলারের রূপ নিতে পারে। তবে এটুকু বলা যায়, ডক্টর স্ট্রেঞ্জের মাল্টিভার্স অব ম্যাডনেসের দরজা খুলে দিল এ ছবি। এখানে স্পাইডি নিজেও জড়িয়ে পড়েছিল সেই মাল্টিভার্সেরই জালে। তা থেকে বেরোনোর পথ কী ভাবে খুঁজে পাবে সে, তা জানতে এখন দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
স্পাইডার-ম্যান:
নো ওয়ে হোম
পরিচালনা: জন ওয়াটস
অভিনয়: টম, বেনেডিক্ট, জ়েন্ডায়া, জেকব, মারিসা
৮/১০
বরাবরের মতো এ ছবিতেও স্পাইডারম্যানের পরোপকারী সত্তা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সব অশুভ শক্তির সামনে। আঙ্কল বেনের বলে যাওয়া ‘উইথ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপন্সিবিলিটি’ এখানে পিটারকে মনে করিয়ে দিয়েছে তার আন্ট মে, চরম বিপন্নতার মুহূর্তেও। নিজের অস্তিত্বকে বাজি রেখে কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়নি পিটারও। স্পাইডার-ম্যানের ছবি দেখে বড় হওয়া প্রজন্মের কাছে ছবিটি অনেকটাই নস্ট্যালজিয়া টুরের মতো। একের পর এক থ্রো-ব্যাক এ ছবি থেকে অন্যতম প্রাপ্তি। এমনকি, খলনায়কদের নায়কোচিত ‘এন্ট্রি’ও প্রেক্ষাগৃহে পায়রা উড়িয়ে দিয়েছে। স্পাইডার-ম্যান মুভির অন্যতম জোরালো জায়গা এর কমেডি। তেমন মুহূর্ত ভর্তি ছবিতে। দৈর্ঘ্য বেশি হলেও চিত্রনাট্যের রুদ্ধশ্বাস গতি একটুও আলগা হতে দেয়নি গল্পকে। একই রকম মানানসই মাইকেল জ্যাকিনোর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। ছবির শেষে ভিএফএক্স টিমের দীর্ঘ তালিকাই বুঝিয়ে দেয়, নিখুঁত ভিসুয়াল এফেক্টসে কেন মার্ভেলই অন্যতম সেরা।
ছবির এক জায়গায় উঠে এসেছে ব্ল্যাক স্পাইডারম্যানের উল্লেখ। ভবিষ্যতে কৃষ্ণবর্ণের স্পাইডার-ম্যানকে দেখা যেতে পারে, এমন আভাস মিলল সে দৃশ্যে। মিড ক্রেডিট, এন্ড ক্রেডিটের আশায় বসে থাকা দর্শকও হতাশ হননি। নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে অ্যাভেঞ্জাররা কী করবে, তার সূচনা করে দিল এই ছবিই।
‘হোমকামিং’, ‘ফার ফ্রম হোম’ এবং ‘নো ওয়ে হোম’-এর মধ্য দিয়ে পরিণত হয়ে উঠেছে টম হল্যান্ডের স্পাইডার-ম্যান। বাকি অ্যাভেঞ্জার্সের কাছে সে এখনও ‘কিড’। তবে ট্রিলজির শেষে এসে যে পরিণতমনস্ক পিটারকে পাওয়া যায়, তা মর্মস্পর্শী। এ ছবিতে ‘তুলনা’র বিষম চ্যালেঞ্জের মুখে নিজেকে ছুড়ে দিয়েছিলেন টম হল্যান্ড। সে পরীক্ষায় তিনি পাশ করেছেন, ‘ফ্লায়িং কালার্স’-এ! এম জে-র চরিত্রে জ়েন্ডায়া, নেডের ভূমিকায় জেকব বাতালোন মনকাড়া। এম জে-পিটারের প্রেমের ভিত শক্ত করেছে তাদের বন্ধুত্ব। আন্ট মে মারিসা টমেয়ির ভূমিকা এ বার গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেঞ্জের ভূমিকায় বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ যথারীতি ‘টাফ’। এই গল্পে স্ট্রেঞ্জ নরমে-গরমে সামলেছে পিটারকে।
স্পাইডার-ম্যান মুভির চালিকাশক্তি এর অদম্য স্পিরিট। ‘নো ওয়ে হোম’ তা ধরে রেখেছে শেষ পর্যন্ত। তাই এই সুপারহিরো মুভি বরাবরের মতোই ভীষণ ভাবে মানবিক। অজস্র চমকে মোড়া ছবিটি সিনেমা হলে গিয়ে না দেখলেই নয়। মাল্টিভার্সের খেলা জমে উঠতে বেশি দেরি নেই। স্পাইডার-ম্যান ট্রিলজির শেষ ছবি সেই শুরুটা করে দিয়ে গেল।