Tapsee Pannu

অতিরঞ্জনে নষ্ট হয়েছে অভিনেতাদের পরিশ্রম

ছোট শহরের কাহিনি হলেও টিন্ডারের জমানায় সোশ্যাল ম্যারেজেও সম্পর্ক এত ঢিমে তালে এগোয় না।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২১ ০৮:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

হাসিন দিলরুবা
পরিচালনা: বিনিল ম্যাথিউ
অভিনয়: তাপসী, বিক্রান্ত, হর্ষবর্ধন
৫.৫/১০

Advertisement

কিছুটা ভাল, কিছুটা খারাপ... ছবির এই সংলাপটাই ‘হাসিন দিলরুবা’র সমালোচনার ওয়ান লাইনার হতে পারে। অথচ অনেকটা ভাল হওয়ার সুযোগ ছিল। বিশেষত নির্মাতাদের কাছে যেখানে তাপসী পান্নু এবং বিক্রান্ত মেসির মতো বলিষ্ঠ অভিনেতারা ছিলেন। কিন্তু চিত্রনাট্য দুর্বল হলে অভিনেতাদের হাতে সবটা থাকে না। বিনিল ম্যাথিউ পরিচালিত এই নেটফ্লিক্স মুভির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

Advertisement

সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় রানি (তাপসী) আর ঋষভের (বিক্রান্ত)। এই ধরনের বিয়ে যে প্রাথমিক সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে যায়, তা এদের দাম্পত্যেও দেখা যায়। শরীর না মন, কোন পথ ধরে সম্পর্কের সূত্রপাত হবে? এই ধাঁধায় রানি আর ঋষভের তালমিল ঠোক্কর খেতে থাকে। খালি চোখে বিচার করলে তারা দু’জন বিপরীত মেরুর। কিন্তু প্রেম কবেই বা মেরুকরণ মেনেছে! তার মধ্যেই আবির্ভাব হয় তৃতীয় কোণের। ঋষভের তুতোভাই নীল (হর্ষবর্ধন রানে) হাজির হয় প্লটে। মন যেখানে স্থিরতা খুঁজে পাচ্ছে না, সেখানে শরীর দিশা দেখায়। আর তার পর থেকেই কাহিনি দিশাহীন হয়ে পড়ে। প্রেমে তৃতীয় কোণটি যোগ করার পরেই কাহিনিতে রহস্যের ছিটে দিতে থাকেন নির্মাতারা। তাতে অবাস্তবতা বেড়েছে বই কমেনি। রানির চরিত্রটির তল পাওয়া গেলেও, ক্রমশ জটিল হতে থাকে ঋষভের চরিত্র। তার অনেক আচরণেরই আগাপাছতলা নেই।

বলিউডে এখন ছোট শহরের কাহিনি বলার দিকে ঝোঁক বেশি, এখানেও তাই। জ্বালাপুরকে প্রেক্ষাপট করে একটা বাড়ির চৌহদ্দিতেই ক্যামেরা ঘুরপাক খায়। এ সব ক্ষেত্রে কাহিনির বুনট আরও জোরালো হতে হয়। কিন্তু দু’ঘণ্টা ষোলো মিনিটের ছবির অনেক অংশই অতিরিক্ত মনে হয়। রানি আর ঋষভের প্রেম-অপ্রেম-প্রতিহিংসা পর্ব দীর্ঘায়িত লাগে। ছোট শহরের কাহিনি হলেও টিন্ডারের জমানায় সোশ্যাল ম্যারেজেও সম্পর্ক এত ঢিমে তালে এগোয় না। দীনেশ পণ্ডিত নামে এক লেখকের ভক্ত রানি। রেলস্টেশনে গা গরম করা যে সস্তার রহস্য উপন্যাসগুলো বিক্রি হয়, পণ্ডিতের রচনা সেই গোত্রেরই। চিত্রনাট্যকার কণিকা ধিঁলো কাহিনির ফ্লেভারে বোধহয় সেই রেশ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাহিনিতে অবাস্তবতা যোগ হয়েছে আর থ্রিলার-ড্রামা যুক্তিবোধ হারিয়েছে। ব্লাস্টের অংশের বিল্ডআপ খানিকটা হলেও থ্রিলারের মান রেখেছে। ‘নমক হালাল’ ছবির জনপ্রিয় গান ছিল ‘হাসিন দিলরুবা’। সেই গানের ‘শিকারি খুদ ইয়াহাঁ, শিকার হো গয়া...’ পঙ্‌ক্তির মধ্যেই বিনিল ম্যাথিউর এই থ্রিলারের যাবতীয় স্পয়লার লুকিয়ে।

ছবির দু’একটি অংশ ভালই লাগে। রানির সঙ্গে তার শাশুড়ির কথোপকথন বেশ মজার। রানি জোর গলায় বলে, ‘‘ঘরোয়া মানেই কি ঘরের কাজ জানতে হবে?’’ রানির শাশুড়ির ছোট চরিত্রে যামিনী দাস উপভোগ্য। পুলিশ স্টেশনে রানিকে জেরা করার অংশগুলোও ভাল। তবে ছবিটা যাঁদের জন্য শেষ করা সম্ভব হয়, তাঁরা তাপসী এবং বিক্রান্ত। সংলাপের বাহুল্য নেই ছবিতে। অভিব্যক্তি দিয়েই দুই অভিনেতা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করেছেন। তবে অনেক জায়গাতেই তাপসীকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বিক্রান্ত। তাঁর চরিত্রের একাধিক পরত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। হর্ষবর্ধনের এখানে আলাদা করে দেওয়ার মতো কিছু ছিল না। ভাল লাগে পুলিশের চেনা চরিত্রে আদিত্য শ্রীবাস্তবকে।

নেটফ্লিক্সের সাম্প্রতিককালের হিন্দি ছবির মান নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে। করোনা পর্বে অনেক ছবিই আটকে। মূলত আটকে থাকা কম বাজেটের ছবিগুলো ঠাঁই করে নিচ্ছে ওটিটি মাধ্যমে। এটি কাকতালীয় হতে পারে বা সংস্থার ছবি বাছাইয়ের দুর্বলতা, যে কমজোরি ছবিগুলোই তাদের প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত হচ্ছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement