‘নাদানিয়াঁ’ ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) খুশি কপূর এবং ইব্রাহিম আলি খান। ছবি: সংগৃহীত।
সেটা ছিল ২০১২। এখন ২০২৫। বিশ্বের অনেক কিছুই বদলেছে। মানুষ এক অতিমারির সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। দৈনিক জলবায়ু পরিবর্তনের মাসুল গুনছে। কিন্তু করণ জোহরের সিনেমার দুনিয়ায় প্রায় সব কিছুই এক থেকে গিয়েছে। সেই ঝাঁ-চকচকে স্কুল, যেখানে পড়াশোনার বালাই নেই। মা-বাবার অঢেল পয়সা আছে যাদের, কেবল তারাই পড়ার সুযোগ পায় এই সব স্কুলে। আর তাদের জীবনের সমস্যাগুলোও যাকে বলে ‘ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড প্রবলেম’।
‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ থেকে ‘নাদানিয়াঁ’— এই ১৩ বছরের ব্যবধানে ‘ধর্মা’ প্রযোজিত ধনীদের দুনিয়ায় বিশেষ হেরফের হয়নি, তবে গল্প বলার ধরন আর অভিনয়ের মান, দুই-ই আরও খারাপ হয়েছে। নতুন ছবি ‘নাদানিয়াঁ’ কর্ণ জোহরের পরিচালনা নয়, তবে প্রযোজনার দায়িত্বে তিনি। সঙ্গে সোমেন মিশ্র ও অপূর্ব মেহতা।
শৌনা গৌতমের প্রথম ছবি এটি। গল্পে কোন বিশেষত্ব নেই। এমনকি, বিশেষ কোনও গল্পই নেই এই ছবিতে। বড়লোকের মেয়ে পিয়া জয়সিংহ (খুশি কপূর) নিজের পরিবারেই বিশেষ গুরুত্ব পায় না, কারণ সে পুত্রসন্তান নয়। বন্ধুদের কাছে নিজের গুরুত্ব বজায় রাখতে সে বয়ফ্রেন্ড ভাড়া করে। অবশ্যই সেই ছেলে মধ্যবিত্ত পরিবারের (এই সব ছবিতে মধ্যবিত্তের সংজ্ঞাও আলাদা) মেধাবী সন্তান, ডিবেট চ্যাম্পিয়ন, সিক্স প্যাকের অধিকারী— আর বড়লোকদের স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে স্কলারশিপের জন্য। এই সর্বগুণসম্পন্ন অর্জুন মেহতার চরিত্রে বড় পর্দায় প্রথম বার ইব্রাহিম আলি খান। এই গল্পের এ হেন শুরু যখন, তখন তা শেষে গিয়ে কী দাঁড়াবে, সেটা বলাই বাহুল্য। বিন্দুমাত্র চিন্তাভাবনা না করে, গবেষণা না করে, কোনও সৃজনশীলতার ধারেকাছে না ঘেঁষে ঈশিতা মৈত্র, জেহান হান্ডা, আর রিভা রাজদান কপূর এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। তাঁরা এই ছবিতে ‘জেন জ়ি’-র যে ছবি এঁকেছেন, আসল দুনিয়ায় অতটাও মূর্খ বা অস্থির তারা নয়।
‘নাদানিয়াঁ’ ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁ দিক থেকে) খুশি কপূর, মহিমা চৌধরি এবং সুনীল শেট্টি। ছবি: সংগৃহীত।
যে হেতু গল্পে কোনও জোর নেই, তাই দিয়া মির্জ়া, যুগল হংসরাজ, সুনীল শেট্টি বা মহিমা চৌধরির মতো অভিনেতাদেরও এই ছবিতে সুন্দর দেখতে লাগা ছাড়া আর বিশেষ কিছু করার নেই। একমাত্র স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা মিস ব্রিগ্যাঞ্জার চরিত্রে ভাল লাগে অর্চনা পূরণ সিংহকে। কারণ, তাতে স্মৃতিমেদুরতার ছোঁয়া রয়েছে। এই ছবির কেন্দ্র খুশি আর ইব্রাহিম। খুশির এটি তৃতীয় ছবি। মাঝে ‘লাভইয়াপ্পা’ ছবিতে তাঁর অভিনয়ে সামান্য উন্নতি দেখা দিলেও এখানে সে সবের বালাই নেই। তাঁর মুখে বা সংলাপে কোনও রকম অভিব্যক্তি নেই বললেই চলে। চেহারায় ইব্রাহিম তাঁর বাবা সইফ আলি খানের কার্বন কপি। নিয়মিত শরীরচর্চায় ‘হিরো’র মতো সুঠাম শরীরও তৈরি করেছেন। কিন্তু প্রথম ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এত গাফিলতি কেন করলেন, কে জানে! তাঁর পরিবারে বাছাই করা নামী-দামি ফিল্ম তারকা সকলেই। তাঁরাও হয়তো তাঁকে সময়মতো উপদেশ দেননি। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় কেমন, তা নিয়ে কিছুই বলার নেই। কারণ ছবিতে গল্প নেই, পরিচালকেরও বিশেষ কোনও অবদান নেই। এই অবস্থায় প্রথম ছবিতে যে কোনও রকম সাহায্যই পাননি ইব্রাহিম, তা বেশ স্পষ্ট। আশা করি আগামী দিনে তিনি ভাল পরিচালক ও ভাল চিত্রনাট্য দেখে তবেই ছবি সই করবেন।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বলিউডে তারকা-সন্তানদের ছবিতে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কর্ণ যে ফর্মুলা ধরেছেন, তা বছর দশেক আগে মোটামুটি চলে গেলেও এখন আর চলছে না। এ বার ফর্মুলায় বদল আনা প্রয়োজন। কয়েক বছর আগেও এই প্রযোজনা সংস্থা থেকে ‘এক ম্যায় অউর এক তু’, ‘হাসি তো ফাসি’, ‘হাম্পটি শর্মা কি দুলহনিয়া’র মতো সহজ আর সুন্দর প্রেমের ছবি তৈরি হত। তারই বা এই অধঃপতন কেন হবে? রোম্যান্টিক ছবি দেখতে এক বড় অংশের দর্শক সব সময় ভালোবাসেন। কিন্তু তাতে একটা সুন্দর গল্প থাকতে হবে বইকি! মিলেনিয়াল থেকে জেন জ়ি— প্রেমের বহিঃপ্রকাশ আলাদা হলেও প্রেমের উন্মাদনা, হঠাৎ হঠাৎ মন ভাল হয়ে যাওয়া, রাতে ঘুম না আসা— এই অনুভূতিগুলোর কিন্তু কোনও বদল নেই। তাই ভাল চিত্রনাট্য ছাড়া কোনও গতি নেই। ছবিটি দেখা যাচ্ছে নেটফ্লিক্সে।