Revolver Rohoshyo Movie Review

বড় পর্দায় সুব্রত শর্মা, কেমন হল অঞ্জন দত্তর ‘রিভলভার রহস্য’? জানাল আনন্দবাজার অনলাইন

দু’বছর পর আবার বড় পর্দায় হাজির অঞ্জন দত্ত। এই থ্রিলারের গোয়েন্দাও তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। সুব্রত অগোছালো। বার বার প্রেমে পড়ে।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৬
Share:

অঞ্জন দত্তের হাত ধরে এই প্রথম বড় পর্দায় পা রাখল গোয়েন্দা সুব্রত শর্মা। ছবি: সংগৃহীত।

বৃষ্টিভেজা দার্জিলিং শহর। এক নিখোঁজ মহিলাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সুব্রত। একের পর পর এক রহস্যের জাল সরতে থাকে। গোয়েন্দা সুব্রত শর্মা। কাকে বিশ্বাস করবে সে? যার সৃষ্টি হয়েছে ‘লেখক’ অঞ্জন দত্তর কলমে। এর আগে ওয়েব সিরিজ়ে পা রেখেছে সুব্রত। এই প্রথম অঞ্জন তাকে নিয়ে এলেন বড় পর্দায়। তাই ‘রিভলভার রহস্য’ নিয়ে কৌতূহলীদের আগ্রহ থাকটা স্বাভাবিক। বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে অঞ্জনের নতুন বই। সেই বইয়ের একটি গল্প অবলম্বনে পরিচালক এই ছবি নির্মাণ করেছেন।

Advertisement

ওয়েব সিরিজ় ‘ড্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা ড্যানি বা সুব্রত সম্পর্কে অল্প বিস্তর জানেন। যাঁরা দেখেননি, তাঁদেরকে সূত্রটা একটু ধরিয়ে দেওয়া উচিত। ‘বস’ অর্থাৎ ড্যানির গোয়েন্দা সংস্থাতেই সুব্রত চাকরি করে। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে ড্যানি খুন হয়েছে। ফলে এক দিকে রুগ্ন এজেন্সি। অন্য দিকে, ড্যানির স্ত্রীর অফিস বিক্রির শাসানি, সবটাই সুব্রতকে একা হাতে সামলাতে হয়। আপাতত এইটুকু।

ছবির একটি দৃশ্যে অঞ্জন এবং সুপ্রভাত। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির প্রসঙ্গে ফেরা যাক। থ্রিলার, তাই খুব বেশি খোলসা করা উচিত নয়। রাজা ব্যানার্জি (সুজন নীল মুখোপাধ্যায়) নামক কলকাতার এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী মালতী নিখোঁজ। পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্বামীকে ছেড়ে চলে গিয়েছে স্ত্রী। পুলিসে খবর দিলে লোকলজ্জার আশঙ্কা। তাই ডিটেকটিভ এজেন্সির শরণাপন্ন হয় রাজা। কিন্তু, ড্যানি তো নেই। অগত্যা, কিছুটা মিথ্যের আশ্রয়েই কেসটা হাতে পায় সুব্রত।

Advertisement

মজার বিষয়, ড্যানি কিন্তু ছবিতে আগাগোড়া উপস্থিত। তাকে সুব্রতর অল্টার ইগো বলা চলে। রহস্য সমাধানে সুব্রতর পথপ্রদর্শক সেই ড্যানি। ভূত-গোয়েন্দার সহাবস্থানে এই চরিত্রে বেশ ভাল লেগেছে অঞ্জনকে। বলা যায় তিনিই এই ছবির কমিক রিলিফ। অন্যদিকে সুব্রতর চরিত্রে সুপ্রভাত দাস গোয়েন্দা হিসাবে নতুন চমক। কারণ, পোশায় গোয়েন্দা অথচ তার মধ্যে গোয়েন্দাসুলভ কোনও লক্ষণ নেই— এ রকম একটা চরিত্র ফুটিয়ে তোলা বেশ কষ্টকর। এই গোয়েন্দা পাড়ায় ক্রিকেট খেলে আবার ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়ায়! কিন্তু সুব্রতর মাধ্যমে তথাকথিত ‘গোয়েন্দা’ ইমেজটাকেই ভাঙতে চেয়েছেন পরিচালক। সুপ্রভাত তাঁর মতো করে চেষ্টা করেছেন। তবে চরিত্রটাকে আরও একটু যত্ন নিয়ে গড়া যেত। এই প্রেম পড়ছে, কেঁদে ভাসাচ্ছে। আবার পরমুহূর্তেই রহস্যের তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ করছে!

ছবিতে তনুশ্রী চক্রবর্তীর অভিনয়ও মন্দ নয়। ছবি: সংগৃহীত।

ব্যবসায়ীর চরিত্রে সুজন নীল মুখোপাধ্যায়ের পরিণত অভিনয় ভাল লাগে। তনুশ্রী চক্রবর্তী এবং শোয়েব কবীরও মন্দ নন। অভিজিৎ গুহ, কাঞ্চন মল্লিক, সুদীপা বসু এবং তনিকা বসুর চরিত্রগুলোক ক্যামিয়ো বলা চলে। থ্রিলারকে মাথায় রেখে প্রভাতেন্দু মণ্ডলের ক্যামেরা বেশ কিছু ভাল দৃশ্য উপহার দিয়েছে। অর্ঘ্যকমল মিত্রর সম্পাদনা যথাযথ। অঞ্জনের ছবিতে গান সবসময়েই উপরি পাওনা। নীল দত্তের সুরে এবং অঞ্জনের কণ্ঠে ‘পুরনো চাঁদ’ গানটি গল্পের রেশ ধরে রেখেছে।

সুব্রতর গল্পগুলি মূলত পাল্প ফিকশন ঘরানার লেখা। এই ছবিকে ঠিক ‘হু ডান ইট’ ছকে বাঁধতে চাননি পরিচালক। ফলে ছবি জুড়ে কৌতূহল যে একমাত্রায় রয়েছে, তা নয়। তবে প্রচুর চমক রয়েছে। আবার সেই চমক যে সব ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে তা নয়।

সুব্রত যে ফেলুদা বা সোনাদার মতো শুধুমাত্র ছোটদের জন্য তৈরি নয়, সে কথা অঞ্জন আগেভাগেই জানিয়েছিলেন। বাঙালি গোয়েন্দাদের ভিড়ে নতুন সংযোজন। ফলে আগামী দিনে সুব্রত আলাদা করে তার নিজের দর্শকবৃত্ত তৈরি করে নেবে, আশা করাই যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement