ছোট ছোট অমলিন মুহূর্ত, না-বলা কথার স্তূপ, ষাটের দশকের গানের ব্যাকড্রপ, মুম্বই শহর আর রাস্তার ভাঁড়ের চায়ের মতো সস্তার, কিন্তু অমোঘ প্রেম। এটাই ‘ফোটোগ্রাফ’। রিতেশ বত্রা ‘দ্য লাঞ্চবক্স’-এর ছ’বছর পরে যে ছবিটা বলিউডে নিয়ে এলেন, তাকে ভাল করে খুঁটিয়ে দেখলে কিছু মিল পাওয়া যাবে। দুই ছবিতেই একটা পিছুটান, কিছুটা নস্ট্যালজিয়া আর অনেকখানি আড়ম্বরহীনতা মেশানো। দু’জন মানুষ, যাদের কেউ বোঝার চেষ্টা করেনি, তারাও জাঁকজমক করে নিজেদের বোঝানোর চেষ্টা করেনি, খানিকটা একা পড়ে যাওয়া নিঃসঙ্গ মানুষদের গল্প বলেছেন রিতেশ।
মুম্বইয়ের স্ট্রিট ফোটোগ্রাফার রফি (নওয়াজ়উদ্দিন)। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের ছবি তুলে দেয়। তার স্লোগান— ‘আপনার ছবিতে এ ভাবেই রোদ্দুরটা ধরা থাকবে, আপনার চুলে লেগে থাকবে এখানকার বাতাস...’ মিলোনি (সানিয়া মলহোত্র) আবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সির উজ্জ্বল ছাত্রী। রফি একটা চৌখুপিতে মাথা গুঁজে থাকে। মিলোনি সচ্ছল পরিবারের। এ রকম একটা প্রেমের গল্প যেমন হয়, এই গল্পটা তার ধারপাশ দিয়েও হাঁটেনি। এখানে কোনও রাগী বাবা নেই। নায়িকার মস্তানসুলভ ভাই নেই, যে বোন শ্রেণিচ্যুত হয়ে যাওয়ার ভয়ে হিরোর সঙ্গে মারপিট করে! এখানে বরং প্রেমটা বাস্তবঘেঁষা। রফির জীবিকার স্থায়িত্ব নেই। পরিবারের দায়িত্ব তারই। সঞ্চয়হীন, নড়বড়ে বর্তমানের উপরে ভবিষ্যতের ভিত গড়ায় দ্বিধা রয়েছে রফির।
মিলোনি আবার ওই নিরহঙ্কার, সহায়হীন জীবনের সারল্যকে ধরতে চায়। রাস্তার ধারের পকোড়া-গোলা খেয়ে, রাজপথে পায়ে হেঁটে, স্ট্রিট ফোটোগ্রাফারের ক্যামেরায় নিজেকে অন্য ভাবে খুঁজে পেয়েই খুশি! দু’জনের বৈপরীত্যকে মিলিয়েছেন রিতেশ। কিন্তু তাকে ভারী সংলাপে মুড়ে, আবেগে ভিজিয়ে পরিবেশন করেননি। বরং কতকগুলো সুন্দর মুহূর্তকে অনেকটা সময় ধরে বুনেছেন চিত্রনাট্যে।
ফোটোগ্রাফ
পরিচালনা: রিতেশ বত্রা
অভিনয়: নওয়াজ়উদ্দিন, সানিয়া, জিম, ফারুখ, গীতাঞ্জলি
৬.৫/১০
ছবিতে নওয়াজ় অসাধারণ। সানিয়াও শান্ত-নিরীহ মেয়ের চরিত্রে যথাযথ। জিম সর্ভ থাকলেও তাঁর চরিত্রে পরত নেই। রফির দাদির চরিত্রে ফারুখ জ়াফরকে ভাল লাগে। পরিচারিকার ভূমিকায় গীতাঞ্জলি কুলকার্নি দারুণ। তাঁর সঙ্গে সানিয়ার চরিত্রটির কিছু নীরব, নরম মুহূর্ত রয়েছে। গোটা ছবির সঙ্গে ওই মুহূর্তগুলোও মনে লেগে থাকার...