প্রবাসী ভারতীয়, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, ঝকঝকে বাড়ি-গাড়ির জায়গায় মধ্যবিত্তের কলোনি, তাদের ছোট ছোট সুখ-দুঃখের খতিয়ান... ক্রমশ বদলে যাওয়া ক্যানভাসটা দেখে বলতে ইচ্ছে করে, ভাগ্যিস!
এই ভাগ্যিসের সঙ্গে একটা তৃপ্তির শ্বাস আছে। অমিত রবিন্দরনাথ শর্মার ‘বধাই হো’ দেখেও সেই তৃপ্তির অনুভূতিটা হয়। ছবির ট্রেলারে যেমনটা দেখানো হয়েছিল, গল্পটা একেবারে তেমনই। তা-ও মনে হবে না, সবটাই তো জানা, তা হলে কেন দেখব? কারণ, জানাশোনা জিনিসও উপভোগ্য হতে পারে।
দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবার। খিটখিটে শাশুড়ি, দুই ছেলে নিয়ে জিতেন্দ্র কৌশিক (গজরাজ রাও) আর তার স্ত্রী প্রিয়ংবদার (নীনা গুপ্ত) নোনতা-মিঠে পরিবার। যে পরিবারের আচরণ আচমকাই তেতো হয়ে যায়, যখন জানা যায় জিতেন্দ্র আর প্রিয়ংবদা বাড়িতে নতুন অতিথি আনতে চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আধুনিকতার বুলি আও়ড়ে চলা প্রজন্ম যখন জানতে পারে, মধ্যবয়স্ক বাবা-মা ফের সন্তানধারণ করেছে, তখন তারা বড্ড গোঁড়া হয়ে যায়। সকলের ছিছিক্কার পার করে কেমন ভাবে জিতেন্দ্র আর প্রিয়ংবদা নতুন অতিথিকে নিয়ে আসে, সেটাই ‘বধাই হো’র গল্প।
বধাই হো
পরিচালনা: অমিত রবিন্দরনাথ শর্মা
অভিনয়: আয়ুষ্মান, সানিয়া,
নীনা, গজরাজ, সুরেখা
৬.৫/১০
মাঝবয়সি দম্পতিকে ছবির কেন্দ্র-চরিত্র করতে গেলে সাহস লাগে। আয়ুষ্মান খুরানা আর সানিয়া মলহোত্রর প্রেম এ ছবিতে সেকেন্ডারি। তাঁদের রসায়নকে হেলায় হারায় গজরাজ আর নীনার প্রেম। দু’জনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত, একে অপরকে আগলে রাখা, মান-অভিমানের পর্বগুলো ভারী সুন্দর করে ফুটিয়েছেন পরিচালক। আর চরিত্র দুটোকে তেমনই সাবলীল ভাবে বয়ে নিয়ে গিয়েছেন গজরাজ-নীনা। এ ছবিটা তাঁদের দু’জনেরই। আয়ুষ্মান তো ধীরে ধীরে বলিউডের সম্পদ হয়ে উঠছেন। যে কোনও ধরনের চরিত্রেই সমান স্বচ্ছন্দ তিনি। তাঁর আর সানিয়ার জুটিটাও বেশ ফ্রেশ। ভাল লাগে দাপুটে শাশুড়ির চরিত্রে সুরেখা সিক্রিকে।
ছবির মধ্যে হাসির মোড়কে কয়েকটা সামাজিক বার্তাও গুঁজে দিয়েছেন পরিচালক। যৌনতা সম্পর্কে আমাদের ছুতমার্গ বা কারও যৌন পছন্দ-অপছন্দ না জেনেই তাকে বিয়ের দিকে ঠেলে দেওয়ার বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক। তবে চোখে লাগে গুচ্ছের ইন ফিল্মস। ছোট বাজেটের ইন্ডি-ছবির জন্য ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু বাড়াবাড়িটা বিরক্তিকর।
ছোট্ট বিষয়কে দু’ঘণ্টার ছবিতে পরিণত করতে গেলে অতিরিক্ত কিছু বিষয় চলে আসে ঠিকই, তবে সেটা সামলে দিয়েছেন পরিচালক। ছবি যে ভাবে তরতর করে এগিয়েছে, তাতে এটা অমিত রবিন্দরনাথের প্রথম ছবি বলে মনে হয় না। তাঁর মেকিংয়ের স্টাইলের সঙ্গে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ঘরানার মিল আছে। বলিউডি ক্লিশেগুলোও তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই আয়ুষ্মান-সানিয়ার সম্পর্কে ছোট্ট ফ্ল্যাট আর বাংলোর ব্যবধান গুরুত্ব পায় না। তাই ছবির লিড চরিত্রের জন্য সুপারস্টারের মুখের প্রয়োজন হয় না। ভাগ্যিস, ক্যানভাসটা বদলাচ্ছে!