যৌন প্রবৃত্তি এবং তার কারণে পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপড়েন... ঋতুপর্ণ ঘোষ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির দৌলতে বাংলা ছবির নিয়মিত দর্শকের কাছে ছকটা চেনা। নবাগত পরিচালক অর্জুন দত্তের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, চেনা বিষয়কে কতটা অচেনা আঙ্গিকে পরিবেশন করতে পারেন তিনি। প্রথম ছবি ‘অব্যক্ত’র কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক নিজেই। সহজ, সাবলীল ভঙ্গিতে সময়োপযোগী গল্পটি বলেছেন। সবচেয়ে জরুরি, এই ধরনের ছবিতে যে মনন এবং সংবেদনশীলতা দরকার, তার মান শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ধরে রেখেছেন পরিচালক।
এই ছবির ভিত কাহিনি এবং চরিত্রায়ন। প্রথমার্ধ দেখে মূল চরিত্র সাথী (অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়) সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়। তবে ছবির শেষে সেই একরৈখিক ধারণা রূপ পায় বহুরৈখিক সম্ভাবনায়। কাহিনির অন্তর্নিহিত ‘আয়রনি’কে চিত্রনাট্যে ভারী সুন্দর করে বুনেছেন পরিচালক। প্রথম ছবির নিরিখে অর্জুনের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
চিত্রনাট্যের পোক্ত জমিতে তাঁর অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। কম এবং বেশি বয়স, দু’টি ক্ষেত্রেই নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী। তবে বেশি বয়সে তাঁর উইগ একটু বেমানান লাগছিল। অর্পিতা ছাড়া এই ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রে অনুভব কাঞ্জিলাল যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তবে তাঁর স্ফুরণের আরও সুযোগ রয়েছে। কয়েকটি দৃশ্যেই তাঁর সহজ এবং সহজাত অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন আদিল হুসেন। ছোট ছোট চরিত্রে অনির্বাণ ঘোষ, স্যমন্তক দ্যুতি মৈত্র, পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়, খেয়া চট্টোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী সপ্রতিভ।
ছবির ন্যারেটিভে সঙ্গীতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সৌম্যরীতের সঙ্গীতের মূর্ছনা ছবির কয়েকটি মুহূর্তকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। আর যে অব্যক্ত ভাব বাঙালি এখনও গুছিয়ে বলতে পারে না, তার জন্য রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহারেও পরিচালকের মুনশিয়ানাই আসলে প্রকাশ পায়।
এই ছবির ন্যারেটিভে আছে সারল্য ও সততা। যৌন প্রবৃত্তিকে নিয়ে কথা বলার পরিসর মূল ধারার ছবিতে আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের অব্যক্ত সমীকরণগুলি নতুন করে লিখলেন পরিচালক। সাম্প্রতিক এক বাংলা ছবিতে সমকামিতা যখন নেহাত থ্রিলারের বোড়ে, সেখানে নতুন পরিচালকের এই ছবি আগামী দিনের বাংলা ছবির জন্য আশা বাড়িয়ে দেয়।