জিত্-শুভশ্রী অভিনীত ‘গেম’ মুক্তি পেয়েছে ৩০ মে। অক্ষয়কুমার-সোনাক্ষী সিংহ অভিনীত ‘হলিডে’ মুক্তি পাচ্ছে ৬ জুন। দু’টো ছবির উত্স সেই একই তামিল ছবি। ২০১২তে মুক্তি পাওয়া ‘থুপ্পাকি’।
২৬ জুন মুক্তি পাচ্ছে বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘গল্প হলেও সত্যি’। তার এক মাসের মধ্যেই মুক্তি পাবে ‘শয়তান’ ছবির পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ার প্রযোজিত ‘পিত্জা’। ‘গল্প হলেও সত্যি’ আর ‘পিত্জা’ দু’টোই অফিশিয়াল রিমেক। অরিজিনাল ছবিটি ২০১২তে তামিলে বানানো। নাম ‘পিত্জা’। ইতিমধ্যে কন্নড় ভাষায় তার একটা রিমেক হয়ে গিয়েছে । নাম ‘হুইসল’।
‘হলিডে’
‘গেম’
ঘাড়ের উপর যখন বলিউড ছবি নিঃশ্বাস ফেলছে, তখন টলিউডে রিমেকের সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি? প্রোডাকশন ভ্যালু থেকে বাজেটে বলিউডের সঙ্গে টলিউড পাল্লা দিতে পারবে না। আজকাল টেলিভিশনেও অরিজিনাল তামিল/তেলেগু ছবিকে ডাব করে দেখানো হয়। তাই ‘কপি-পেস্ট’ বাংলা রিমেকের চমকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। তা হলে বাংলা বাজারে রিমেক করার ভরসা কোথায়?
‘গেম’য়ের বিষয়ে জিত্কে প্রশ্ন করাতে তিনি জানান যে, ছবিটা ‘ডিসেন্ট’ ব্যবসা করেছে। “তবে জেনারেল রই্যাকশন খুব ভাল। রিমেক হলেও ইন্টিরিয়রের মানুষ লোকাল স্টারদের নিয়েই ছবি দেখতে পছন্দ করে। সেখানে যদি বাঙালিয়ানাটা মাথায় রেখে অ্যাডপ্ট করা যায় তাহলে দর্শকদের ভাল লাগে,” বলছেন জিত্।
কিন্তু শহরে? যেহেতু ‘গেম’ আর ‘হলিডে’ দু’টো ছবির প্রযোজক রিলায়্যান্স। তা হলে কি ‘হলিডে’র মুক্তির ডেটটা আরও একটু পিছোলে ভাল হত না? “প্রথমে কথা হয়েছিল দু’টো ছবি একই দিনে মুক্তি পাবে। তারপর ঠিক হল, এক সপ্তাহ পরে রিলিজ করবে। মাঝখানে জামাইষষ্ঠী। তাই আশা করছি কালেকশন ভাল হবে। আর কিছু মাল্টিপ্লেক্সে ‘গেম’য়ের রেসপন্স ভাল। ‘হলিডে’ মুক্তি পেলে তারপর শহরের রেসপন্স আরও ভাল করে বোঝা যাবে,” বলছেন জিত্।
বিরসা দাশগুপ্ত অবশ্য হিন্দি ‘পিত্জা’র কম্পিটিশন নিয়ে চিন্তিত নন। ছবির নায়ক-নায়িকা সোহম আর মিমি শহরতলিতেও খুব জনপ্রিয়। “তাছাড়া অরিজিনাল তামিল ছবিটা টেলিভিশনে দেখায়নি,” বলছেন বিরসা।
‘গল্প হলেও সত্যি’
‘পিত্জা’
মিমির ক্ষেত্রে অবশ্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হল যে, ‘মগধীরা’র অফিশিয়াল রিমেক রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘যোদ্ধা’তে তিনি অভিনয় করছেন, সে ছবিটি টেলিভিশনের পর্দায় দেখানো হচ্ছে। “হিন্দি ‘পিত্জা’ ছবিটার ট্রেলার অনেক দিন আগে আপলোড হয়েছে। আমিও দেখেছি তাতে অনেক লাইকস্ রয়েছে। রিমেক করলে তার অরিজিনালটা দেখি না। তবে ‘মগধীরা’ টেলিভিশনে এত বার দেখিয়েছে যে, আমিও তা দেখেছি। পুরুলিয়ার গ্রামে গিয়ে দেখেছি ওখানে লোকে মোবাইল ফোনে অরিজিনাল ছবি দেখে ফেলে। তাও মাত্র ১০ টাকায়! এটা বিশাল সমস্যা,” বলছেন মিমি। ‘যোদ্ধা’তে দেবকে দেখার জন্য অনেকেই উদগ্রীব। “আমি এমন ভাবে কাজটা করছি যাতে দর্শক বলে মিমি অরিজিনালের থেকেও ভাল করেছে,” বলছেন মিমি।
তাই বাংলা রিমেকে বাঙালিয়ানা ছাড়া অন্য চমকও জরুরি। যে ভাবে বারবার ‘দেবদাস’ অবলম্বনে ছবি হওয়া সত্ত্বেও শাহরুখ অভিনীত সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘দেবদাস’ আর অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ‘দেব ডি’ তৈরি হয়েছিল। রাজ বলছেন যে, রিমেক করার সময় বলিউড যে একই ছবি তৈরি করতে পারে সেটা জেনে নিয়েই এগোন তিনি। বলছেন মফস্সলের দর্শক আজও দেব-জিত্কে বলিউডের তারকাদের থেকে বেশি পছন্দ করেন। “তবে রাইটস্ কেনার সময় দেখে নিই যেন ওড়িয়া আর ভোজপুরি রাইটস্ও আমাদের কাছে থাকে। বলিউড যে সময় নিয়ে একটা রিমেক তৈরি করে আমরা তার অনেক আগে ছবি শেষ করে সেটা রিলিজ করি,” বলছেন রাজ। তার সঙ্গে যোগ করছেন যে ২০০৯-এ তৈরি ‘মগধীরা’র মেকিংটা ২০১৪-তে তাঁর ছবির মেকিংয়ের থেকে অনেক আলাদা।
তবে পুরনো ছবির রাইটস্ কিনলে সমস্যাও আছে। সময় বদলায়। তাই বুঝতে হবে, আজকের দিনেও পুরনো কনসেপ্ট নিয়ে তৈরি রিমেকের দর্শক আছে কি না। গ্রাম-বাংলায় টেলিভিশন ইন্টারনেটের যুগেও মানুষের এক্সপোজার নেই ধরাটা বোধহয় মূর্খামি।
বিরসা বলছেন তাঁর ছবিটা বাঙালি দর্শকের সেন্সিবিলিটির উপযোগী। হিন্দি ছবিটা থ্রিডি-তে তৈরি। শহরের দর্শক হয়তো বিজয় নাম্বিয়ার পরিচালিত ‘শয়তান’ দেখে খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছেন যে তাঁর প্রযোজিত ‘পিত্জা’ ছবিতে হরর ঘরানা কী ভাবে পরিবেশন করা হবে। “কিন্তু ইন্টিরিয়রের দর্শক কী ওই ঘরানার হরর ছবি দেখতে পছন্দ করবেন? আমার ধারণা বাঙালি দর্শকের পছন্দ একটু রোমান্টিক হরর। সেই মুডটা ‘গল্প হলেও সত্যি’তে রেখেছি,” বলছেন পরিচালক।
এক সময় সমস্যা হত, যখন টলিউড রাইটস্ না কিনেই তামিল-তেলেগু থেকে টুকে ছবি করত। আজ আর তা হয় না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই গান আর মূল ছবির চিত্রায়নের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকে। বলিউডে এই বৈষম্যটা নেই। কারণ কোরিওগ্রাফার আর পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই মিলে যায়। কিন্তু বাংলা রিমেকে নায়ক-নায়িকা ছোট পোশাক পরে তাইল্যান্ডে জলকেলি বা লাদাখে নাচলেও মূল ছবিতে রক্তে ভেজা পাঞ্জাবি পরে কপালে তিলক লাগিয়ে তরোয়াল দিয়ে মারপিট করে। ‘গজনী’ রিমেক হলেও আমির খান আর আসিনের গানের ‘লুক’ আর বাকি ছবির ‘লুক’য়ে কিন্তু এ ফারাক থাকে না।
এ দিকে বাংলা রিমেক ছবির বাজেট যদি কেউ রিস্ক নিয়ে বাড়িয়েও ফেলেন, সেই ইনভেস্টমেন্টটা রিকভার করার মতো বড় মার্কেট এখনও তৈরি হয়নি। তাই প্রোডাকশন ভ্যালুর উন্নতির জন্য বাজেট বাড়ানোর স্ট্রাটেজিটাও সে ভাবে খাঁটবে না। বাকি থাকল আইডিয়া আর অ্যাডাপ্টেশনের জোর। পরিচালকরা মনে করছেন এমন ভাবে ছবিটা তৈরি করতে হবে, যাতে মনেই হয় না তামিলনাড়ুর কোনও গ্রামের গল্প দেখানো হচ্ছে। অনেকটা ‘সিটিলাইটস্’ যেভাবে ব্রিটিশ-ফিলিপিনো ছবি ‘মেট্রো ম্যানিলা’র থেকে অ্যাডাপ্ট করা হয়েছে। অরিজিনাল না দেখলে গল্পটা রাজস্থানের একটা গ্রামেরই মনে হবে।
আর সেখান থেকেই কি উঠে আসছে নতুন একটা স্ট্রাটেজি? বলিউডে বিদেশি ছবির অফিশিয়াল রিমেক হচ্ছে। ‘ব্ল্যাক’, ‘দিল চাহতা হ্যয়’-এর চিত্রগ্রাহক রবি কে চন্দ্রন এ বার ফরাসি ছবি ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’য়ের অফিশিয়াল হিন্দি রিমেক পরিচালনা করবেন। কর্ণ জোহর সহ-প্রযোজনা করছেন আর একটি ফরাসি ছবি ‘দ্য ইনটাচেবলস’য়ের হিন্দি রিমেক। পরিচালক ‘আশিকি টু’ খ্যাত মোহিত সুরি। টলিউডে কি বিদেশি ছবির রিমেক করবে? “অফিশিয়াল রিমেকে বাঙালিয়ানাটা রাখতেও মুন্সিয়ানা দরকার। বলিউডের রিমেক নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না। টিভিতে সেগুলো বসে দেখে আর টিআরপি বাড়তে থাকে। আমরা রিমেক করলেই যত দোষ,” বলছেন রাজ। তবে বাজেটে যদি পোষায় আর বিদেশি গল্প যদি বাংলা পরিবেশে অ্যাডাপ্ট করার উপযোগী হয়, তা হলে সেটাতেও আপত্তি নেই রাজের। সেই একই কথা জিতের। তবে তাঁর চিন্তা শুধু একটাই। বিদেশি চিত্রনাট্যকে ভালভাবে অ্যাডাপ্ট করার লোক পাওয়া যাবে এখানে? আপাতত, সে উত্তর খুঁজছে টলিউড।