পরীমণি এবং রাশিদ পলাশ।
বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবন অবলম্বনে 'প্রীতিলতা' ছবি তৈরির কাজে হাত দিয়ে বাঙালির মনে সাড়া জাগিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ প্রতিভাবান চলচ্চিত্র পরিচালক রাশিদ পলাশ। 'প্রীতিলতা'র চরিত্রে অভিনয় করছেন পরীমণি, এই মুহূর্তে যাকে নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরীমণি গ্রেফতার হলে ‘প্রীতিলতা’-র শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যায়। আদালতে আইনজীবীরাও প্রসঙ্গটি তোলেন। পরীমণির জামিনে মুক্তির দাবিতে অন্যদের সঙ্গে পথে নামেন ‘প্রীতিলতা’-র পরিচালকও। বাংলাদেশের আলোচিত সেই তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক রাশিদ পলাশ আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম সিনেমা ‘প্রীতিলতা’?
উত্তর: না। ২০১৫ সালে প্রথম ছবি ‘নাইওর’ শেষ করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ছবিটি দর্শক দেখতেই পাননি। খারাপ লাগে আমার, প্রথম সিনেমা এখনও মুক্তি পায়নি। কখন পাবে মুক্তি কিংবা আদৌ মুক্তি পাবে কি না জানি না। ‘নাইওর’-এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এটা বলতে পারবে। কোনও কারণে অনেক দিন তাদের কাজ বন্ধ আছে। আমি খুব চাই ‘নাইওর’ ছবিটি মুক্তি পাক। দারুণ একটা গল্প ছিল এই চলচ্চিত্রে। তা ছাড়া প্রথম ছবি, অন্য আবেগ।
প্রশ্ন: এর পর ‘প্রীতিলতা’ ছবির পরিকল্পনা?
উত্তর: না। ২০১৭ সালের শুরুতে আমার ছোট ছবি ‘কবর’ মুক্তি পায়। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘কবর’ কবিতা অবলম্বনে ছবিটা তৈরি করি। পরিচিতি তৈরি হয়। আসলে সাহিত্য আমাকে টানে। এ ধরনের কাজে আলাদা আনন্দ পাই। আগামীতে আরও কিছু সাহিত্য নির্ভর কাজ করতে চাই। এর পর আমি ‘পদ্মাপুরাণ’ ছবি নির্মাণ করি। ‘পদ্মাপুরাণ’ মুক্তি পাচ্ছে চলতি বছরের অক্টোবরে। গত বছর মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু দেরি হয়ে গেল।
প্রশ্ন: কারণ?
উত্তর: ‘পদ্মাপুরাণ’ শুরু করেছিলাম ২০১৭ সালের শেষ দিকে। ২০১৯-এর শেষদিকে কাজ শেষ হয়। ২০২০ সালের মার্চে মুক্তির পরিকল্পনা ছিল আমাদের। করোনার জন্য সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হই। এখন তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিছুটা। প্রেক্ষাগৃহ খুলছে। এবার ৮ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে 'পদ্মাপুরাণ'। যথাসম্ভব বেশি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছি। মানুষের কথা বলেছি, আশা করি মানুষের ভাল লাগবে।
প্রশ্ন: এই ছবির বিষয় কী?
উত্তর: ‘পদ্মাপুরাণ’ ছবির বিষয় নদী-তীরবর্তী মানুষের বদলে যাওয়া জীবন। বাংলাদেশ এক সময় নদী-নির্ভর দেশ ছিল। সময়ের বিবর্তনে নদী তার জৌলুস হারিয়েছে। বদলে গেছে নদী-তীরবর্তী জীবনের গল্পগুলো। এখানে আমরা পদ্মানদীর সে কাল ও এ কালের গল্প বলেছি।
প্রশ্ন: কারা অভিনয় করছেন?
উত্তর: শম্পা রেজা, প্রসূন আজাদ, সুমিত সেনগুপ্ত, সাদিয়া মাহি, হেদায়েত নান্নু, সূচনা সিকদার, রেশমী, জয়রাজ, কায়েস চৌধুরী, হাসি মুন সহ আরও অনেকে।
প্রশ্ন: এর পর ‘প্রীতিলতা’?
উত্তর: হ্যাঁ। বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবন অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে ‘প্রীতিলতা’।
খারাপ সময়ে পরীমণির পাশে ছিলেন পলাশ।
প্রশ্ন: সে খবর অনেকেই জানে। এই ছবির পোস্টার উন্মোচিত হতেই চতুর্দিকে আলোচনা শুরু হয়। আলোচনার কারণ, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা পরীমণি।
উত্তর: প্রীতিলতাকে নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা বেশ পুরনো। পাঁচ বছর সময় নিয়েছি আমরা প্রীতিলতাকে সেলুলয়েডে আনতে। ১০০ বছর পুরনো ইতিহাসের গল্প বলবে এই ছবি। আমাদের সিনেমার লেখক, চিত্রনাট্যকার গোলাম রাব্বানী সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহিদ বিপ্লবী প্রীতিলতার চরিত্রে আমরা পরীমণিকে নির্বাচন করেছি অনেক ভেবেচিন্তেই। আসলে আমরা আরও অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছিলাম। অবশেষে পরীমণি চূড়ান্ত হয়। সে সময় অনেকেই একটু অবাক হয়েছিলেন। কেন পরীমণি? কিছুদিন আগে যখন আমরা প্রীতিলতা চরিত্রে পরীমণির লুক প্রকাশ করি, সত্যিই হইহই পড়ে যায়। এটা ছিল দর্শকদের জন্য ইদের উপহার আর সমালোচকদের জন্য প্রশ্নের উত্তর। যাঁরা বলেছিলেন পরীমণি গ্ল্যামার ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারবে না, তাঁরাও লুক দেখে প্রশংসা করেছেন। আমাদের টিম প্রীতিলতার জন্য এটা একটা ভাললাগা।
প্রশ্ন: পরীমণির জামিনের দাবিতে আপনি মুখর হন। সেটা কি শিল্পীর হেনস্থায়? অথবা ছবির স্বার্থে?
উত্তর: পরীমণির সঙ্গে ‘প্রীতিলতা’ করতে গিয়েই পরিচয়। আমার কাছে তিনি একজন দারুণ অভিনেত্রী। অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ। প্রীতিলতা-র সেটে তাঁর যে সহযোগিতা পেয়েছি সে ঋণ আমরা শোধ করতে পারব না। পরীমণির গ্রেফতার হওয়ার পরে আমরা তাঁর পাশে ছিলাম মানবিক কারণেই। পরীমণি আমাদের প্রীতিলতা। তাঁর মুক্তির জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম কারণ এই মানুষটা সব সময় আমাদের পাশে ছিল।
প্রশ্ন: ‘প্রীতিলতা’ ছবির শ্যুটিং কতটা হয়েছে?
উত্তর: ছবিত ৩৫% কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি বাকি অংশ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আমরা যতটুকু সম্ভব রিয়েল লোকেশন-এ শ্যুটিং করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রীতিলতার জন্মস্থান চট্টগ্রামের ধলঘাটে কাজটা করার চেষ্টা করছি আমরা। দেখা যাক।
প্রশ্ন: অনেকে বলছেন 'প্রীতিলতা' সরকারি অনুদানে নির্মিত হচ্ছে। কিছু মিডিয়াতেও বেরিয়েছে।
উত্তর: ভুল খবর। এটি একটি তথ্যদূষণ।
প্রীতিলতা হয়ে উঠেছেন পরীমণি।
প্রশ্ন: পরীমণি তো এখন জামিন পেয়েছেন। তিনি কবে কাজ শুরু করবেন?
উত্তর: জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পরীমণির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে। আমরা তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি। একটু সময় তো দিতে হবেই। তা ছাড়া তাঁর সামান্য ওজন বেড়েছে, সেটাও একটা ব্যাপার। আমরা মানসিক ভাবে শ্যুটের তারিখ স্থির করেছি। তবে সেটা কবে, এখনই বলতে চাই না। আশা করি খুব দ্রুতই পরীমণি কাজে ফিরবেন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে প্রিয় পরিচালক কারা?
উত্তর: জহির রায়হান। আলমগীর কবির। আমজাদ হোসেন। তারেক মাসুদ। গিয়াসউদ্দিন সেলিম। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। আশফাক নিপুণ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে টিভি নাটক তো খুব জনপ্রিয়। আপনি পরিচালনা করেছেন নাটক?
উত্তর: বাংলাদেশের নাটক অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু নাটকে আমার তেমন আগ্রহ নেই। সবাইকে সব করতে হবে কেন?
প্রশ্ন: অভিনেতা মোশারফ করিমকে কেমন লাগে? তাঁর অভিনয়ে তো দুই বাংলাই এখন মুগ্ধ।
উত্তর: মোশারফের মতো শিল্পী কালেভদ্রে জন্মায়। আমি তাঁর অনেক বড় ভক্ত। আমার ইচ্ছে আছে ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার। এছাড়াও চঞ্চল চৌধুরী, শাকিব খান, তারিক আনাম, ফজলুর রহমান বাবু, আনিসুর রহমান মিলন, নিশো, জয়া আহসান, বাঁধন, তিশা, পরী, মাহি, ববি, মম-র কাজ ভাল লাগে।
প্রশ্ন: অনেকেই তো এখন ওয়েব সিরিজ করছেন। ওয়েব সিরিজের ভবিষ্যৎ কেমন বলে মনে হয়?
উত্তর: আমরাও ওয়েবের কাজ শুরু করছি। এখনই এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাই না। আমার মনে হয় আগামী দিনগুলোতে ওয়েবের ভবিষ্যৎ বড়। এখানে গল্প বলে ভিন্ন একটা আনন্দ আছে। আমি ওয়েবে আগ্রহী।
প্রশ্ন: নতুন ছবির ভাবনা…
উত্তর: আমার কাছে সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। সিনেমা সমাজের দর্পণ। জীবনের নানান দিকের গল্প বলা যায় এখানে। তাই সেই সিনেমাটাই বানাতে চাই যেটা আমি বিশ্বাস করি।
আমার নতুন ছবির ভাবনা এবারও ইতিহাস নির্ভর। নতুন বছরের শুরুতে নতুন সিনেমার শ্যুটে যাব আশা করি। ইতিহাস ধরে গল্প বলব আবার। আপাতত ইতিহাসের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।