বড় পর্দায় ফিরছেন মহুয়া রায়চৌধুরী? ছবি: সংগৃহীত।
বহু বিশিষ্টের মতে, জীবন দীর্ঘ নয়, বড় হোক। তাঁর জীবনও সেটাই। মাত্র ২৬ বছর বয়সে কমবেশি ৮০টি ছবির নায়িকা। বেশির ভাগ ছবি দর্শক-সমালোচক প্রশংসিত। তার পরেও মহুয়া রায়চৌধুরী যেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার ‘দুয়োরানি’! তাঁর জন্মদিন বা জন্মমাস কবে? এই প্রজন্ম দূর অস্ত, আগের প্রজন্মেরও কি মনে আছে? ২২ জুলাই, মৃত্যুদিনেও তাঁকে নিয়ে কেউ একটা শব্দও খরচ করেন না। অথচ, কী বাণিজ্যিক ধারা, কী সমান্তরাল ছবি— দুই ক্ষেত্রই বলে তিনি জাত অভিনেত্রী। তপন সিংহ থেকে তরুণ মজুমদার স্নেহ করতেন তাঁকে। তাঁর বিতর্কিত জীবন এবং রহস্যে ঢাকা মৃত্যুই কি এই প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছতে দিল না মহুয়াকে? বড় পর্দায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলেছেন প্রযোজক রানা সরকার। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি জানিয়েছেন, তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জীবনী বা জীবন অবলম্বনে ছবি হয়। মহুয়া রায়চৌধুরীকে সকলে যেন সন্তর্পণে এড়িয়ে চলেন। এটা কেন হবে? ওঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই ছবি। প্রাথমিক নাম ‘গুনগুন করে মহুয়া’।
ছবিতে আসছেন মহুয়া রায়চৌধুরী। সংগৃহীত ছবি।
এই প্রসঙ্গে রানার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেউ স্বীকার করুন বা না করুন, মহুয়ার জীবন যথেষ্ট বড় মাপের। ততটাই বড় তাঁর অভিনয় প্রতিভা। মানুষ মহুয়াই বা কেমন ছিলেন? বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় তাঁর প্রভাব কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। সে সব কথা এই প্রজন্ম জানবে না?’’ এই তাড়না থেকেই তিনি এই ছবির প্রযোজক। পরিচালনায় নতুন মুখ সোহিনী ভৌমিক। গবেষণা-চিত্রনাট্যে দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত এবং সোহিনী। মহুয়ার চরিত্রে কাকে দেখা যাবে? প্রযোজকের মতে, ‘‘অনেকে ভাবনায় রয়েছেন। এক্ষুনি কারও নাম করতে পারছি না।’’ এ-ও জানিয়েছেন, উত্তমকুমার থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়— প্রত্যেকের সঙ্গে প্রয়াত অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন। ছবিতে এঁরাও থাকবেন। তাই অভিনেতা বাছাই নিয়ে তাড়াহুড়ো করছেন না তিনি।
এর আগে মিউজ়িক ভিডিয়ো, ছোট ছবি পরিচালনা করলেও সোহিনীর এটি প্রথম বড় ছবি পরিচালনা। প্রথম কাজটাই কি বড্ড ভারী হতে চলেছে?
চিত্রনাট্যকার দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত, প্রযোজক রানা সরকার, পরিচালক সোহিনী ভৌমিক। সংগৃহীত।
নতুন পরিচালকের কাছে প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার অনলাইনের। সোহিনীর যুক্তি, ‘‘প্রথম কাজ যাতে মনে রাখার মতো হয়, সেই জন্যই মহুয়া রায়চৌধুরীকে বাছা।’’ আরও দাবি, ছোট থেকে বড় হয়েছেন প্রয়াত অভিনেত্রীর ছবি দেখে। আলাদা ভাল লাগা তৈরি হয়েছিল মহুয়াকে ঘিরে। কিন্তু এই প্রজন্ম প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীকে চেনেই না। এটা সোহিনীকে ধাক্কা দিয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে ভাবার পরে তিনি রানাকে বিষয়টি জানান। প্রযোজক সঙ্গে সঙ্গে রাজি। সোহিনী বললেন, ‘‘এর আগে শুনেছি, ‘জাতিস্মর’-এর প্রযোজক বরাবর অন্য ধারার ছবি করতে ভালবাসেন। অনেকেই যা করতে চান না, সেটাই তিনি করেন। তাই সাহস করে রানাদাকে গল্পটা শোনাই।’’ একই কথা চিত্রনাট্যকার দেবপ্রতিমেরও। দাবি, তিনি মানুষ মহুয়া এবং অভিনেত্রী মহুয়া— দু’জনকেই সমান ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এ-ও মাথায় রাখছেন, যেন কোনও ভাবেই এটি তথ্যচিত্র না হয়ে যায়।
সেপ্টেম্বর প্রয়াত অভিনেত্রীর জন্মমাস। পরিচালক সোহিনী ওই মাসেই তাঁর ‘গুনগুন করে মহুয়া’ ছবির শুটিং শুরু করবেন।