প্রসেনজিৎ-জয়া। ছবি: দেবর্ষি সরকার
এক-একটা দিন জীবনে আসে ঝড়ের মতো এবং অনেক কিছু ওলটপালট করে দিয়ে যায়। হইহই আনন্দে শুরু হওয়া এক রবিবারের মানে ধীরে ধীরে পাল্টে যায় অসীমাভ আর সায়নীর কাছে। পনেরো বছর পরে দেখা হয় দু’জনের। সঙ্কটের মুহূর্তে মুখোমুখি হয় তারা এবং বাকি দিনটা পুরোটাই কাটে বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত ঘটনার মধ্য দিয়ে। আত্মানুসন্ধানের এক জার্নির গল্প নিয়েই অতনু ঘোষের আগামী ছবি ‘রবিবার’। বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিভেজা সকালে যার শুটিং শুরু হয়ে গেল দক্ষিণ কলকাতার এক পুরনো বাড়িতে। অসীমাভের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং সায়নীর ভূমিকায় জয়া আহসান।
এই প্রথম একসঙ্গে প্রসেনজিৎ এবং জয়া। অতনুর কলকাতা ট্রিলজির প্রতিটি ছবিই বহু কাঙ্ক্ষিত জুটিকে সামনে এনেছে বার বার। যেমন ‘ময়ূরাক্ষী’তে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎকে এবং ‘বিনিসুতো’য় ঋত্বিক চক্রবর্তী-জয়া আহসানকে। অতনু বললেন, ‘‘এই ছবিটা প্রসেনজিৎ-জয়াকে মাথায় রেখেই লেখা। এখনও পর্যন্ত এত জটিল মনস্তত্ত্বের চরিত্র কখনও লিখিনি। সেই জন্যই এই দুই তুখড় অভিনেতাকে নেওয়া।’’ বৃষ্টির চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই সকাল থেকে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছিল অতনুর ইউনিট। লাঞ্চ ব্রেকে প্রসেনজিৎ জানালেন, ‘ময়ূরাক্ষী’র পর আর এক বার পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে ছিলেন তিনি। ‘‘এত দিনে সেই সুযোগটা হল। এই স্ক্রিপ্টটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অতনু এমন একজন পরিচালক, যার সঙ্গে কাজ করার জন্য যে কোনও অভিনেতাই উৎসুক হয়ে থাকে। চেনা ছকের বাইরে, একদম অন্য রকম ভাবে গল্পটা বলতে জানে ও। অসীমাভের মতো চরিত্র সচরাচর কেউ ভাবেন না। তাই এটা একটা চ্যালেঞ্জও বটে,’’ বললেন তিনি। জয়ার কাজ দীর্ঘ দিন ধরেই ফলো করেন। ‘‘আমি প্রথম যে ছবিতে জয়াকে দেখি, সেটা হল ‘গেরিলা’। তার পর থেকেই ওর বিভিন্ন কাজ দেখতাম,’’ বললেন অভিনেতা। অতনুর সঙ্গে জয়ার এটি দ্বিতীয় ছবি। ‘‘বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে বহু দিনের। এত দিনে সেটা হল,’’ বললেন জয়া।
ছকভাঙা, খানিক বোহেমিয়ান অসীমাভ আর স্মার্ট-কর্পোরেট অফিসার সায়নীর পনেরো বছর পরে দেখা। প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত দু’জন মানুষের মধ্যেকার ‘ব্যাটল অফ উইটস’ই এ ছবির উপজীব্য। বহু দিনের পুরনো একটা ভালবাসা, যা শেষ হয়েছিল ক্ষতবিক্ষত ভাবে। ফিরে যাওয়ার রাস্তাও পুরোপুরি ভাবে বন্ধ। তাই ‘রবিবার’-এ ফ্ল্যাশব্যাকের অবতারণা নেই সে ভাবে। বরং একটা রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘটনার আকস্মিকতায় কী ভাবে কাটিয়ে দেয় দুই প্রাক্তন, তা নিয়েই এগোবে কাহিনি। ‘ময়ূরাক্ষী’ আর ‘বিনিসুতো’র পর তাঁর ট্রিলজি সম্পূর্ণ করার জন্য অতনু ফের বেছে নিয়েছেন কলকাতা শহরের ব্যাকড্রপ। ট্রিলজিকে বেঁধে রেখেছে দু’জন মানুষের জার্নির গল্প। বিপন্নতার মুহূর্তে যাদের দেখা এবং নিজেকে চেনার শুরু। অতনু বরাবরই শহুরে মনস্তত্ত্বের অলিগলি খুঁজতে ভালবাসেন। তাই ‘রবিবার’-এর মধ্য দিয়েই আর এক বার সেই জার্নিতে বেরিয়েছেন পরিচালক। পুজোর আগেই শুটিং শেষ হয়ে যাচ্ছে ছবির।