‘মায়াকুমারী’র সেটে আবীর-অরিন্দম(বাঁ দিকে উপরে)-‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’(বাঁ দিকে নীচে)-‘বনি’র শুটিংয়ে পরমব্রত-কোয়েল(ডান দিকে)
ছবির শুটিং শুরু হওয়ার আগে রিলিজ়ের দিন ঠিক হয়ে যেত। এক খানের ছবি ইদে তো অন্য জন ক্রিসমাসে। কেউ জানুয়ারিতে তো কেউ দীপাবলির স্লট বুকিং সেরে ফেলতেন। বেশ কয়েক বছর ধরে এটাই বলিউডের ছবি রিলিজ়ের ট্রেন্ড। টলিউডেও জোর লড়াই চলে পুজোর বুকিংয়ের। টানাটানি পড়ত ক্রিসমাস, পয়লা বৈশাখের সময়েও। করোনাভাইরাস এসে সব স্ট্র্যাটেজি সিন্দুকে পুরে দিয়েছিল। নির্মাতাদের মুখে শুধু একটাই কথা, ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।’ সেই অবস্থা ক্রমশ ঠিক হচ্ছে, তাই স্ট্র্যাটেজি মেকাররা ময়দানে নেমে পড়েছেন। বলিউডের দুই বিগ বাজেট ছবি ‘সূর্যবংশী’ এবং ‘এইটিথ্রি’ আসবে যথাক্রমে দীপাবলি ও ক্রিসমাসে। পরপর ওটিটি রিলিজ়ের মাঝে এই ঘোষণা এগজ়িবিটরদের খানিকটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। দুর্গাপুজোকে ফোকাসে রাখলে আগামী দিনে টলিউডের পরিকল্পনা কী?
এসভিএফ-এর অন্যতম কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি মঙ্গলবার টুইট করে জানান, পুজোর সময়ে আসছে ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। সৃজিত মুখোপাধ্যায়-প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জুটি পুজোর সময়ে বরাবরই হিট। তার উপরে ‘কাকাবাবু’র ব্র্যান্ডভ্যালুর জোর। এসভিএফ হাতের তাস দেখিয়ে দেওয়া মানে বাকিরাও সে পথেই হাঁটবে। সুরিন্দর ফিল্মসের হাতে বেশ কিছু ছবি রয়েছে। প্রযোজক নিসপাল সিংহ আগামীর পরিকল্পনায় বললেন, ‘‘আমরা ‘বনি’ রিলিজ়ের কথা ভাবছি। তার সঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’ নিয়ে আসব।’’ দুটো ছবিরই শুটিং সারা, পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ চলছে। ‘বনি’র পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন, সঙ্গে কোয়েল মল্লিক। ‘অর্ধাঙ্গিনী’তে রয়েছেন জয়া আহসান, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় এবং কৌশিক সেন। এই পুজোয় অরিন্দম শীলের মিতিন মাসি সিরিজ়ের ‘কেরালায় কিস্তিমাত’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মা হওয়ার পরে করোনার পরিস্থিতিতে কোয়েলের পক্ষে শুট করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অরিন্দম ঠিক করেছেন তাঁর ‘মায়াকুমারী’ রিলিজ় করবেন পুজোয়। অতএব বাকি দুই চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আবীর চট্টোপাধ্যায়েরও একটি ছবি থাকছে। এর সঙ্গে ‘দুর্গরহস্য’ অবলম্বনে ব্যোমকেশ বক্সীর নতুন ছবির সম্ভাবনাও রয়েছে। তেমন হলে পুজোয় পরমব্রতর দু’টি ছবি হবে।
ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্রিসমাস ভাল মরসুম। দেবের ‘টনিক’ ছাড়া আর কোনও ছবি এই স্লটের বুকিং নেয়নি এখনও। তবে প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী এখনও ক্রিসমাস রিলিজ় নিয়ে নিশ্চিত নন। বড় স্কেলের ছবির মধ্যে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘বেলাশুরু’ রয়েছে, যা দীপাবলির সময়ে আসার কথা ছিল।
এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে অগস্ট মাসে সিনেমা হল খোলার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। এ রাজ্যে করোনার যা পরিস্থিতি তাতে বাংলা ছবি অগস্টে মুক্তি পাবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এসভিএফ যেমন জানাচ্ছে, তারা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের ‘ড্রাকুলা স্যর’ রিলিজ়ের জন্য তৈরি। ‘‘যদি অগস্টে হল খুলে যায় তা হলে আমরা ১৫ অগস্টের সময়ে ‘রক্তরহস্য’ রিলিজ় করব,’’ বললেন নিসপাল সিংহ। গত এপ্রিলেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল সৌকর্য ঘোষাল পরিচালিত এই ছবি, যেখানে প্রধান চরিত্রে কোয়েল।
আরও পড়ুন: এক বছরে ১২টি ছবি, নতুন ইনিংসে চালিয়ে খেলছেন অর্পিতা
প্রত্যেক বছরই পাঁচ-ছ’টি বাংলা ছবি মুক্তি পায় পুজোয়। এ বার দর্শক হলে আদৌ ভিড় জমাবেন কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু জমে থাকা ছবি ছেড়ে ঘরে লক্ষ্মী আনতে চাইছেন সকলেই। হলে রিলিজ়ের পরে তা ওটিটি এবং টিভিতে আসবে। সেই অঙ্কের ভরসায় পুজোর বাজারে ঝুঁকির লড়াইয়ে নামছেন সকলে।