রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা
এ বার আমি এ পার বাংলায়। বিয়ের পর এ বছরেই আমি পয়লা বৈশাখে প্রথম শ্বশুর ঘরে।
এ বছর পয়লা বৈশাখে সৃজিত, মেয়ে আয়রা, আমি। আর আমাদের বন্ধু-বান্ধব। বৈঠকী আড্ডা থাকবে সেখানে। সৃজিত ওই দিন পাঞ্জাবিতে বাঙালি বাবু। পাতজুড়ে ভাল-মন্দ পদ। এ বারেও আমি উঠে পড়ব কাকডাকা ভোরে। স্নান সেরে, খোলা চুলে, লাল পেড়ে সাদা খোলের শাড়িতে। কপালে লাল টিপ। বাংলা নতুন বছরের নতুন সূর্যের মতোই লাল টকটকে!
এ বছর আমি শহর কলকাতায়। সেখানে পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ ভাজা থাকবে না। থাকবে না ঢাকার দিগন্তবিস্তৃত রমনা পার্ক। যার বটমূলে ভোর থেকে নানা জেলার শোভাযাত্রা এসে জমায়েত হয়। যেখানে গোটা ঢাকা শহর পাত পেড়ে বসে যায় পান্তা-ইলিশ খেতে। কলকাতা, তুমি কি আমায় দিতে পারবে আমার ‘দ্যাশ’-এর রমনা বটমূলের স্বাদ, গন্ধ, স্মৃতি?
আমাদের বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ জাতীয় স্তরের উৎসব। এক সপ্তাহ ধরে চলে তার প্রস্ততি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীরা রাত জেগে বানান নানা ধরনের মুখোশ, পোস্টার, লতা-পাতায় সাজানো ফেস্টুন। সেই সব নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা ভোর থেকে। সবার পরনে লাল পাড়, সাদা শাড়ি। কপালজুড়ে টিপ। গলায়, ‘এসো হে বৈশাখ গান’। সংসদ ভবনের সামনের লম্বা রাস্তা জুড়ে দেশের সবচেয়ে বড় আল্পনা। রমনা মাঠ-সহ সমস্ত উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পান্তা-ইলিশ পর্ব। বন্ধু, পরিজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ। তার পরে বাড়ি ফিরে দুপুরে রকমারি ভর্তা দিয়ে ভাত। এগুলো যে না দেখেছে, সে বুঝবে না এর ভিতরে কতখানি শান্তি, তৃপ্তি লুকিয়ে।
শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের সমস্ত জেলায় এই উৎসব পালিত হয়। হয়তো কলকাতার মতো চৈত্র সেল নেই। কিন্তু নতুন জামা আছে। ঘর পরিষ্কার আছে। ভারতে বাংলা নববর্ষ যদিও জাতীয় স্তরের উদ্যাপন নয়। সমস্ত জেলায় জেলায় হয় কি না জানি না। তবু আমার মেয়ে দুই বাংলার নববর্ষ দেখতে দেখতে বড় হচ্ছে। শিখেছে, ইংরেজির ১২ মাসের মতোই বাংলাতেও ১২ মাস রয়েছে। আর বাঙালির আছে ১২ মাসে তেরো পার্বণ। সেই পার্বণের শুরু পয়লা বৈশাখ দিয়ে। মেয়েকে আমার মতো করেই সাজতে শিখিয়েছি। আগামীতে পয়লার ভোরে আয়রার সাজেও যাতে থাকে লাল পেড়ে ঢাকাই শাড়ি। কপালে লাল টিপ।