padmalakshmi

সৎ বাবার বন্ধুর হাতে যৌন হেনস্থা, কৈশোরে ধর্ষিতা... এই মডেল, অভিনেত্রীর জীবন ফিল্মকেও হার মানায়

অস্ত্রোপচার করা হয় বাঁ হাতে। সে হাতে ঘাড় থেকে কনুই অবধি ক্ষতচিহ্ন তাঁর চিরজীবনের সঙ্গী। বিদেশে বড় হওয়ার জন্য ছোট থেকেই তাঁকে বর্ণবিদ্বেষের মুখে পড়তে হয়েছে। ছোট থেকেই এই কঠিন পরিস্থিতি তাঁকে মানসিক ভাবে শক্ত করে তুলেছে বলে মনে করেন তিনি।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ১৪:১০
Share:
০১ ২০

মাত্র দু’বছর বয়সে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ। মানসিক আঘাতের পাশাপাশি শারীরিক যন্ত্রণাও কিছু কম ছিল না। দুরারোগ্য অসুখের পরেই অপেক্ষা করে ছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। তার পরেও জীবনকে বিবর্ণ হতে দেননি পদ্মা লক্ষ্মী।

০২ ২০

পুরো নাম পদ্মা পার্বতী লক্ষ্মী বিদ্যানাথন। তাঁকে কোনও নির্দিষ্ট পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করে রাখা কঠিন। একইসঙ্গে তিনি লেখক, অভিনেত্রী, মডেল এবং সঞ্চালিকা। জন্ম সাবেক মাদ্রাজ, আজকের চেন্নাই শহরে, ১৯৭০-এর ১ সেপ্টেম্বর। তাঁর বাবা কাজ করতেন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থায়। মা ছিলেন নার্স।

Advertisement
০৩ ২০

বিচ্ছেদের পরে তাঁর বাবা এবং মা, দু’জনেই আবার বিয়ে করেছিলেন। পদ্মা লক্ষ্মীর বড় হওয়া নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জলসে, সৎ ভাইবোনদের সঙ্গে। বছরে নিয়ম করে আসতেন ভারতে। দাদু দিদিমার সঙ্গে দেখা করতে। ফলে দেশের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁর বিচ্ছিন্ন হয়নি।

০৪ ২০

১৪ বছর বয়সে পদ্মা লক্ষ্মী আক্রান্ত হন দুরারোগ্য চর্মরোগ স্টিভেন্স জনসম সিন্ড্রোমে। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার কিছু দিনের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যালিবুতে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁকে শয্যাশায়ী থাকতে হয় দীর্ঘ দিন।

০৫ ২০

অস্ত্রোপচার করা হয় বাঁ হাতে। সে হাতে ঘাড় থেকে কনুই অবধি ক্ষতচিহ্ন তাঁর চিরজীবনের সঙ্গী। বিদেশে বড় হওয়ার জন্য ছোট থেকেই তাঁকে বর্ণবিদ্বেষের মুখে পড়তে হয়েছে। ছোট থেকেই এই কঠিন পরিস্থিতি তাঁকে মানসিক ভাবে শক্ত করে তুলেছে বলে মনে করেন তিনি।

০৬ ২০

ক্যালিফোর্নিয়ার উইলিয়াম ওয়ার্কম্যান হাই স্কুল থেকে পাশ করার পরে পদ্মা লক্ষ্মীর পরের গন্তব্য ছিল ম্যাসাচুসেটস-এর ক্লার্ক ইউনিভার্সিটি। সেখান থেকে থিয়েটার আর্টসে অনার্স-সহ বিএ পাশ করেন তিনি। ইংরেজি, তামিল, হিন্দি, ইটালিয়ান ও স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষ পদ্মা লক্ষ্মী মাদ্রিদেও পড়তে গিয়েছিলেন। সেখানেই শুরু মডেলিং।

০৭ ২০

তিনি-ই অন্যতম ভারতীয় মডেল, যিনি প্যারিস, মিলান এবং নিউইয়র্কে মডেলিং করেছেন। মাদ্রিদে থাকার সময় মডেলিং করেই কলেজের খরচ মিটিয়েছিলেন। ‘জিয়োর্জিয়ো আর্মানি’, ‘জিয়ান্নি ভারসাচে’, ‘অ্যালবার্তা ফেরেত্তি’, ‘রবার্তো কাভাল্লি’-সহ বিশ্বের তাবড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য মডেলিং করেছেন তিনি।

০৮ ২০

মডেল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন ‘কসমোপলিটন’, ‘ভোগ ইন্ডিয়া’, ‘মারি ক্লেয়ার’, ‘নিউজউইক’, ‘টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি’-র মতো প্রথমসারির পত্রিকার প্রচ্ছদে। ফ্যাশন ফোটোগ্রাফার হেলমুট নিউটনের প্রিয় মডেল পদ্মা লক্ষ্মী। হেলমুটের তোলা সব ছবিতেই পদ্মা লক্ষ্মীর হাতের ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট ও প্রকট।

০৯ ২০

সঞ্চালিকা হিসেবে তাঁকে প্রথম দেখা গিয়েছিল ইটালীয় চ্যানেলে। এর পর তিনি ইটালীয় চ্যানেলে বিভিন্ন সিরিজে অভিনয়ও করেন। প্রথম ছবিতে অভিনয় ২০০১ সালে। সে বছরই তিনি অভিনয় করেন মার্কিন ছবি ‘গ্লিটার’-এ। পরে তাঁকে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন মার্কিন টিভি চ্যানেলের সঞ্চালক এবং রিয়েলিটি শো-এর বিচারকের ভূমিকায়।

১০ ২০

বলিউডে পদ্মা লক্ষ্মীর আত্মপ্রকাশ ২০০৩ সালে, ‘বুম’ ছবিতে। এ ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ক্যাটরিনা কইফ এবং মধু সাপ্রে-ও। তবে পদ্মা লক্ষ্মী টেলিভিশনে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় হয়েছেন ‘টপ শেফ’-এর সুবাদে। মার্কিন চ্যানেলের এই শো রান্নার রিয়েলিটি শো। পদ্মা লক্ষ্মীকে এখানে সঞ্চালক ও বিচারক, দুই ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছে।

১১ ২০

পদ্মা লক্ষ্মীর অন্যতম প্যাশন রান্না। তাঁর লেখা রান্নার বই জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পীদের মধ্যে। পাশাপাশি তাঁর নিজস্ব জুয়েলারি ব্র্যান্ডও আছে।

১২ ২০

তিন বছর লিভ ইন পর্বের পরে ২০০৪ সালে পদ্মা লক্ষ্মী বিয়ে করেন লেখক সলমন রুশদিকে। তিন বছর পরেই তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়।

১৩ ২০

এর পর কিছু দিন তাঁর সম্পর্ক ছিল মার্কিন ব্যবসায়ী অ্যাডাম ডেলের সঙ্গে।

১৪ ২০

এই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে পদ্মা লক্ষ্মীর জীবনে আসেন আর এক মার্কিন ধনকুবের, থিয়োডোর ফ্রস্টম্যান বা টেডি ফ্রস্টম্যান। বয়সে তিরিশ বছরের বড় টেডের সঙ্গে পদ্মা লক্ষ্মীর সম্পর্ক ছিল দু’বছর। এই সম্পর্কের সময়ে পদ্মা লক্ষ্মী শিশুকন্যার মা হন।

১৫ ২০

কিন্তু সন্তানের বাবা কে, তা স্পষ্ট করেননি পদ্মা লক্ষ্মী নিজে। পেটারনিটি টেস্টিং বা ডিএনএ টেস্টিং-এ জানা যায় সন্তানের বাবা অ্যাডাম ডেল। এর পর তিনি সন্তানের কাস্টডি দাবি করেন। বিবাদের জল গড়ায় আদালত অবধি।

১৬ ২০

শেষ অবধি পদ্মা লক্ষ্মী এবং অ্যাডাম যৌথ সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা কো পেরেন্টিং করবেন। ফলে সন্তানের স্বার্থে বছর তিনেক আগে আবার জোড়া লেগেছে তাঁদের সম্পর্ক। একমাত্র সন্তানের নাম পদ্মা লক্ষ্মী রেখেছেন কৃষ্ণা থিয়া লক্ষ্মী ডেল।

১৭ ২০

নিজের জীবন নিয়ে পদ্মা লক্ষ্মী বরাবরই খোলামেলা। নিউইয়র্ক টাইমস-এ এক বার তিনি বলেন, সাত বছর বয়সে তাঁর যৌন হেনস্থা হয়েছিল সৎ বাবার বন্ধুর হাতে। তিনি এই কথা মাকে জানান। এর পর তাঁকে এক বছরের জন্য ভারতে দিদিমার সঙ্গে থাকতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

১৮ ২০

এই আঘাত ভুলতে পারেননি পদ্মা লক্ষ্মী। পরে বলেন, ছোট থেকেই তাঁর মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যন্ত্রণার কথা গোপন করে রাখতে হবে। এর পরেও ষোড়শী পদ্মা লক্ষ্মী যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন, ১৯৮৬ সালে। সে বার তাঁকে ধর্ষিতা হতে হয়।

১৯ ২০

তবে এই লাঞ্ছনার কথা তিনি প্রকাশ করতে পারেননি দীর্ঘদিন। ৩২ বছর পরে ২০১৮ সালে তিনি জানান নিজের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।

২০ ২০

তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতার কথা বলার জন্য দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু পরে তাঁর মনে হয়েছে, ধর্ষণের মতো অপরাধ আরও বেশি করে প্রকাশ্যে আসা দরকার। কারণ, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে জানা উচিত, নারীশরীরের অস্তিত্ব শুধুমাত্র পুরুষদের উপভোগ করার জন্য নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement