চড়া পেঁয়াজের বীজের দাম। বেড়েছে পেঁয়াজ চাষের আনুষঙ্গিক খরচও। ফলে পেঁয়াজ চাষ ছেড়ে বিকল্প চাষে ঝুঁকছেন নওদার পেঁয়াজ চাষিদের একাংশ।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র নওদা ব্লকেই পেঁয়াজের চাষ হয় প্রায় সাড়ে ছ’ হাজার হেক্টর জমিতে। নওদার বিভিন্ন এলাকায় রবি মরসুমে পেঁয়াজ চাষ ছাড়া অন্য ফসলের চাষ প্রায় হয় না বললেই চলে। তবে এ বছর পেঁয়াজ চাষের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে পেঁয়াজ চাষ করে পেঁয়াজ ওঠার মুখে দাম না পেয়ে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকেই অনেক চাষি এ বছর পেঁয়াজ চাষ করতে চাইছেন না। বিকল্প চাষ হিসেবে তাঁরা সর্ষে, মুসুর এমনকি আনাজ চাষও করছেন। চাষিদের একাংশের বক্তব্য, অন্য বছর পেঁয়াজের বীজের দাম থাকে পাঁচশো-সাতশো টাকা কেজি। চারার দাম থাকে এক বিঘা খেতে চাষের জন্য সর্বাধিক পাঁচ-ছ’হাজার টাকা। এ বছর সেই বীজ বিক্রি হয়েছে সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’হাজার টাকায়। এক বিঘা খেতে পেঁয়াজের চারা বসাতে শুধু চারার দামই পড়ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
তাছাড়া সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে অনেকটা। করোনা আবহে অধিকাংশ চাষির হাতেই নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা। ফলে বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ করে পেঁয়াজ চাষ করার ক্ষমতা নেই অনেকেরই। তাছাড়া, ধার করে পেঁয়াজ চাষ করেও অনেক সময় দাম পাওয়া যায় না। ফলে আর্থিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চাষিদের একাংশ এবার পেঁয়াজ চাষ ছেড়ে বিকল্প চাষে জোর দিয়েছেন। গত কয়েক বছরে সাকোয়া, টিয়াকাটা, দুধসর, বাগাছাড়া, ত্রিমোহিনী, বাদশানগর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় এই সময়ে পেঁয়াজ ছাড়া অন্য ফসল চোখে পড়ে না। তবে এ বছর মাঠে অনেক খেতে সর্ষে, মুসুর, মরসুমি আনাজ চাষ নজরে পড়ছে। নওদার চাষি আফতাব সেখ বলেন, ‘‘এ বছর পেঁয়াজ চাষের যা খরচ, পেঁয়াজ ওঠার পর খরচের টাকা-ই ঘরে উঠবে না ভেবে বিকল্প চাষ হিসেবে সর্ষে চাষ করেছি।’’ নওদা ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা নমিতা পোদ্দার বলেন, ‘‘নওদা ব্লকে অধিকাংশ চাষি পেঁয়াজের চাষ করেন। পেঁয়াজ চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বিকল্প চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি দফতরের তরফেও বিকল্প চাষ হিসেবে কোন কোন ফসল লাভজনক এবং কীভাবে তা চাষ করতে হবে, তার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’ তবে পেঁয়াজের চাষ কমলে আগামী বছর পেঁয়াজের দাম বাড়বে বলেই মনে করছেন পেঁয়াজের কারবারিরা।