‘সাথী’ ছবির সময় প্রথম কোয়েলকে চেয়েছিলেন হরনাথ।
২৮ সেপ্টেম্বর ৭৭-এ পা দিলেন রঞ্জিত মল্লিক। আদতে কেমন ছিলেন ভবানীপুরের মল্লিক বাড়ির ছেলে? আনন্দবাজার অনলাইন সরাসরি জানতে চেয়েছিল ‘শত্রু’ ছবির মু্খ্য অভিনেতার দীর্ঘদিনের বন্ধু পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীর কাছে। প্রবীণ পরিচালক অকপটে জানিয়েছেন, ‘‘বনেদি বাড়ির ছেলে বলেই রঞ্জিতদা ভীষণ ভাল মানুষ। আমি তখন সহকারি পরিচালক। মাত্র ২৪ বছর বয়েস। উনি তত দিনে উত্তমকুমারের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেওয়া অভিনেতা। তার পরেও ইতস্তত করে আমায় ডাকছেন, ‘‘হরনাথ একটু শুনবেন?’’ সেই সম্বোধন আজও বজায় আছে। কিন্তু সে দিন এই ‘আপনি’, ‘আজ্ঞে’ শুনে হরনাথ ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। দাবি, এই মানুষগুলোর জন্যই ইন্ডাস্ট্রি থেকে গিয়েছে। এঁরা আগে মানবিক। তার পর অভিনেতা।
এর পর দীর্ঘ কাজ। নিয়মিত দেখা শোনা থেকে সৌহার্দের সম্পর্ক। হরনাথের ২০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন রঞ্জিত। হরনাথের কথায়, ‘‘বাড়িতেও দাদা একই রকম আন্তরিক। অদ্ভুত আতিথেয়তা বাড়ির সবার। অত বড় বনেদি বাড়ির সদস্যদের মনে একটুও অহঙ্কার নেই! সবাই ভীষণ মাটির কাছাকাছি। গেলেই বসিয়ে আদর-আপ্যায়ন।’’
একসঙ্গে ২০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন রঞ্জিত-হরনাথ।
আলাপচারিতায় উঠে এসেছে মল্লিক বাড়ির পুজোর কথাও। পরিচালক জানিয়েছেন, সবার সঙ্গে পাত পেড়ে বসে ভোগ খেয়েছেন তিনি। বাড়ির সদস্যদের মিলিয়েই হাজারের উপরে মানুষ! তার উপরে আমন্ত্রিত অথিতি। পুজোর চার দিন মল্লিক বাড়িতে লোক গিজগিজ করে। কিন্তু আমন্ত্রিতদের দেখভালে কোনও অযত্ন হয় না।
নামী অভিনেতার পাশাপাশি রঞ্জিত মল্লিক খুব ভাল বাবা। হরনাথের পরিচালনায় 'নাটের গুরু' ছবি দিয়েই অভিনেতার একমাত্র মেয়ে কোয়েল অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন। ‘নাটের গুরু’র পরিচালকের দাবি, ‘‘সাল ২০০২-এ ‘সাথী’ ছবির সময় আমি প্রথম কোয়েলকে চেয়েছিলাম। তখনও ওর মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়া শেষ হয়নি। ফলে, রঞ্জিতদা তখন কড়া বাবা, মেয়ে পড়া শেষ করে তার পরে অভিনয়ে আসবে ঠিক করেছিলেন। তার আগে নয়।’’
পরের বছরেই সমরেশ বসুর গল্প অবলম্বনে হরনাথ বানান ‘নাটের গুরু’। এই ছবির গল্প রঞ্জিতের পছন্দ হওয়ায় তিনি মেয়েকে অভিনয়ে অনুমতি দেন। ছবিতে তিনিও অভিনয় করেছেন। হরনাথের দাবি, কাজের সময়েও বাবা-মেয়ে বাড়ির মেজাজেই থাকতেন। ঘরোয়া ভাবে আড্ডা দিতে দিতে কাজ করে যেতেন।
কী খেতে ভালবাসেন অভিনেতা? রাবড়ি, নলেন গুড় আর ফিশফ্রাই রঞ্জিত মল্লিকের ভীষণ প্রিয়, জানিয়েছেন পরিচালক। বাকি, আর পাঁচটি বাঙালি বাড়িতে যা রান্না হয় তাই- খাওয়াদাওয়া করেন তিনিও।
ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে হরনাথের নতুন ছবি ‘তারকা মৃত্যু’। সেখানেও মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রবীণ অভিনেতা। সঙ্গে রয়েছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী, পার্নো মিত্র। পরিচালকের দাবি, এই ছবিতে অভিনেতাকে একেবারে অন্য ধরনের চরিত্র এবং রূপসজ্জায় দেখা যাবে। যা আলাদা করে মনে রাখতে বাধ্য হবে বাংলা ছবির দুনিয়া। পাশাপাশি, তাঁর আগামী কমেডিধর্মী ছবিতেও নায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে রঞ্জিত মল্লিককে। চিত্রনাট্য লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। প্রযোজনায় সুরিন্দর ফিল্মস।