সুদীপা বসু।
প্র: মেঘনাদ ভট্টাচার্যের কথায় তাজ বেঙ্গল হোটেলের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন! সত্যি?
উ: (হাসি) হ্যাঁ। তখন মেঘনাদদা’র নাট্যদল সায়ক-এর প্রযোজনা ‘বাসভূমি’-তে অভিনয় করতাম। মেঘনাদদা বললেন, ‘এই নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করতে গেলে চাকরি ছাড়তে হবে।’ ছেড়ে দিলাম। দ্বিতীয়বার আর ভাবিনি।
প্র: অথচ গুরু মানেন অঞ্জন দত্তকে!
উ: পাড়ার ক্লাবে নাটক করতাম। সেখান থেকে অঞ্জনদার নাটক ‘পাতি প্রেমের গপ্পো’য় অভিনয় করার সুযোগ পাই। ওখানে মারিয়ার চরিত্রটা করতাম। অঞ্জনদাই কিন্তু আমাকে মেঘনাদদা’র কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে দিনের পর থেকে অঞ্জনদাই আমার থিয়েটারের গুরু।
প্র: ‘বাসভূমি’-র পরেই তো ছোট পরদায় ডাক?
উ: ঠিক। আমার প্রথম সিরিয়াল ‘জমবে মজা’।
প্র: বড় পরদায় আপনাকে তো সে ভাবে দেখা যায় না...
উ: বড় পরদায় কেউ কাজ দেয় না। অথচ দেখুন, আমার কোনও বায়নাক্কা নেই, খুব একটা এক্সপেনসিভ অ্যাকট্রেসও নই এবং লোকে বলে আমি অভিনয়টাও ভাল করি। তার পরেও কেউ কাজ দেয় না! অনেকেই বলেন, ‘তোমার জন্য উপযুক্ত চরিত্র পেলেই দেব।’ যাঁরা এই কথা বলেন, তাঁরাই কিন্তু স্ক্রিপ্ট লেখেন, আমার উপযুক্ত একটা চরিত্র লিখলেই পারেন। অবশ্য সম্প্রতি কয়েকটা ছবিতে কাজ করেছি। ‘অরণ্যদেব’, ‘আগুন’, ‘ঘেঁটে ঘ’। প্রতিটা ছবিতে চরিত্রগুলো আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে। ‘আগুন’-এ তো ডন হয়েছি। নবীন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করে বেশ মজা পেয়েছি। কিন্তু এই ছবিগুলোর রিলিজ আটকে আছে। আমার কপালই খারাপ।
প্র: আপনার মতো একজন বোহেমিয়ান মানুষ কপাল, ভাগ্য, ঈশ্বর...এ সবে বিশ্বাস করেন?
উ: বোহেমিয়ান (হাসি)! এক সময় ছিলাম। তখন বয়স কম ছিল। এখন আমি ‘ডিসিপ্লিনড বোহেমিয়ান’ (হাসি)। আগে দুমদাম করে এখানে ওখানে চলে যেতাম। এখনও যাই, তবে প্ল্যান করে। যেটা ২৬-এ করতাম, সেটা ৫০-এ এসে আর পারি না। আর ঈশ্বরে বিশ্বাস? আমি আস্তিক, কিন্তু পুজোআর্চা নিয়ে আমার ঢক্কানিনাদ নেই। আমার বাড়িতে সরস্বতী পুজো হয় বেশ বড় করে। ব্যস, ওই একটাই। মন্ত্র-তন্ত্র পাথর-আংটি এ সবের বিশ্বাসী নই।
প্র: নাট্যকার ইন্দ্রাশিস লাহিড়ীর স্মরণে গত বছর করেছিলেন দু’দিনের থিয়েটার উৎসব, ‘তুই আছিস ইন্দ্রাশিস’। এই বছর করতে চলেছেন ‘ফিরে দেখিস ইন্দ্রাশিস’। ইন্দ্রাশিসকে নিয়েই কেন এই নাট্য উৎসব?
উ: ব্যক্তিগত ভাবে ইন্দ্রাশিস আমার ভাল বন্ধু ছিল, কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। ও বড় মাপের একজন নাট্যকার ছিল। ওর লেখা নাটক এই সময়ে দাঁড়িয়েও বড় প্রাসঙ্গিক। অসময়ে ও চলে গেল। আসলে কী জানেন, এই প্রজন্মের যাঁরা নাটক নিয়ে পড়াশোনা করছেন, কাজ করছেন, তাঁরা চেনেনই না ইন্দ্রাশিসকে। এতে ওঁদেরই ক্ষতি। আজ এই প্রতিযোগিতার বাজারে জীবিত নাট্যকারদের নাটক মঞ্চস্থ হওয়া নিয়েই প্রতিযোগিতা, টানাপড়েন। সেখানে যে মানুষটা নেই, তার নাটক নিয়ে মানুষ আর ভাবে না। একজন সচেতন নাট্যকর্মী হিসেবে আমার মনে হয়, এই প্রজন্মের সঙ্গে ইন্দ্রাশিসের কাজের পরিচয় ঘটানো উচিত। তাই এই নাট্য উৎসব। এবার ইন্দ্রাশিসের দু’টি একাঙ্ক নাটক ‘অন্তরীক্ষে’ ও ‘বেঙ্গলিশ কন্যার রূপকথা’ এবং একটি নাটক ‘জলজ্যান্ত’ করছি আমরা। সৈকত ভকত পরিচালনা করছেন ‘বেঙ্গলিশ কন্যার রূপকথা’। বাকি দুটো আমি। ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর মিনার্ভা ও শিশির মঞ্চে হবে এই নাট্য উৎসব।
প্র: স্পনসরশিপ?
উ: না, ও সব নেই। সারা বছর এর জন্যই আমি টাকা জমাই। আর হাওড়া জোনাকি-র ব্যানারে নাটকগুলো করি। এতে প্রেক্ষাগৃহ পেতে সুবিধা হয়।
প্র: থিয়েটার পরিচালনার পর কি পরদায় পরিচালনা করার পরিকল্পনা আছে?
উ: না...না! ক্যামেরা, লেন্স... এ সব আমার মাথায় ঢোকে না। থিয়েটার পরিচালনাতেও তো অনেক পরে এলাম। আসলে কী জানেন, আমি খুব ভাল কাস্টিং ডিরেক্টর। কাকে কোন চরিত্রে মানাবে, সেটা বেশ ভাল বুঝতে পারি। কেউ যদি আমাকে তাঁর ছবির কাস্টিং ডিরেক্টর করতে চান, আনন্দে রাজি হয়ে যাব!
প্র: শোনা যাচ্ছে, ছোট পরদায় ব্লুজ-এর সঙ্গ ছেড়ে এ বার ম্যাজিক মোমেন্ট-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন?
উ: ঠিকই। অনেকগুলো বছর ব্লুজ-এর সঙ্গে কাজ করেছি। ওদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। এ বার ইচ্ছে আছে ম্যাজিক মোমেন্টের সঙ্গে কাজ করার। কথা চলছে। আসলে ডেলি সোপে বৈচিত্র কম। সিরিয়ালে অভিনয় অনেকটা অফিসে কাজ করার মতো। নতুন কিছু করতে চাইলে এই বদলটুকু করাই যায়।