নায়িকার অসম্মতিতে অভিনেতার সঙ্গে ছক কষে ধর্ষণ দৃশ্য শুটিং। আর তাতেই নাকি পাওয়া যাবে আসল রিঅ্যাকশন। বার্নার্দো বার্তোলুচির প্ল্যান অনুযায়ী নাকি এমন কাজ করেছিলেন মার্লন ব্র্যান্ডোর মতো অভিনেতাও। ১৯৭২-এ ছবি ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’ নিয়ে এ হেন অভিযোগে দিন কয়েক আগেও সরগরম ছিল বিনোদন মহল। সাড়ে চার দশক আগের হলিউডে মারিয়া স্নেইডারকে না জানিয়েই নাকি বার্তোলুচি ধর্ষণ দৃশ্যের শুটিং করেছিলেন। বার্তোলুচির নিজেরই দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাত্কার সম্প্রতি নতুন করে সামনে আসার পর প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এবং পরে ঘটনা অস্বীকারও করেন পরিচালক। কিন্তু ততক্ষণে আলোচনা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। শিল্পের খাতিরে না জানিয়ে ধর্ষণ দৃশ্য শুটিং করাটা কতটা যুক্তিসম্মত? এ কী অপরাধ নয়?
তবে এই ঘটনা শুধু হলিউডে নয়, বলিউডও এর সাক্ষী। বরং হলি মহলের আগেই বলিউডে ঘটেছে এমন ঘটনা। ১৯৬০-এর দশক। চলছে ‘আনজানা সফর’-এর শুটিং। নায়িকা পঞ্চদশী কিশোরী। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একটু একটু করে গড়ে তুলছেন নিজের স্বতন্ত্র পরিচয়। ঠিক সে সময়ই ঘটল ঘটনাটি। ওই ছবির শুটিংয়ে যৌন হেনস্থার শিকার হতে হল তাঁকে। তখনও তিনি ভানুরেখা গণেশন। পরে যিনি রেখা হয়ে তৈরি করবেন এক নতুন ইতিহাস। ইয়াসির উসমানের লেখা ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তে সম্প্রতি ফের সামনে এসেছে এই অজানা তথ্য। ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’-র পাশাপাশি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন রেখাও।
‘আনজানা সফর’-এর শুটিংয়ে বিশ্বজিত্ এবং রেখা।— সংগৃহীত ছবি।
ওই বইতে লেখা রয়েছে, ‘ঘটনাটি ঘটেছিল ‘আনজানা সফর’-এর শুটিংয়ে। নায়ক ছিলেন বিশ্বজিত্। একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিংয়ের আগে রেখাকে এক রকম ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরিচালক রাজ নওথে রেখার অজান্তে বিশ্বজিতের সঙ্গে অন্য ভাবে দৃশ্যটি শুট করার প্ল্যান করেন। শুটিং শুরু হয়। অ্যাকশন বলার পরই বিশ্বজিতে রেখার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে তাঁর ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট চেপে ধরেন। এই অপ্রত্যাশিত আচরণে উপস্থিত কেউই বাধা দেননি। রেখা একই সঙ্গে অবাক ও বিরক্ত হয়েছিলেন। প্রায় পাঁচ মিনিটের দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করা হয়। কিন্তু ফিল্ম রিলিজের সময় সেটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।’
এই ঘটনার পরে রেখা ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর হেনস্থার কথা বলেছিলেন। তাঁর মত না নিয়ে বিশ্বজিতের জোর করে চুমু খাওয়ার ঘটনা যৌন হেনস্থার সামিল বলেই মনে করেন নায়িকা। ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র কারণে ফের এই ঘটনা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রশ্ন উঠছে শিল্পের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কেউ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তা কতটা গ্রহণযোগ্য? আদৌ কি কোনও অভিনেত্রীকে না জানিয়ে ধর্ষণ দৃশ্যের শুটিং করা উচিত? অথবা আসল এক্সপ্রেশন পাওয়ার জন্য না জানিয়ে জোর করে চুমু খাওয়াই বা কতটা মেনে নেওয়া যায়?
বলিউডে এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিতে পরিচালক কর্ণ জোহর একটি গানের দৃশ্যের শুটিংয়ে শাহরুখ খানকে আলাদা করে বলেছিলেন, কাজলকে কোল থেকে হঠাত্ ফেলে দিতে হবে। অথচ কাজল জানতেন, কোলে নেওয়া অবস্থাতেই ‘কাট’ বলবেন পরিচালক। সেক্ষেত্রে কর্ণের উদ্দেশ্য ছিল কাজলের ‘আনকনসাশ এক্সপ্রেশন’কে ফ্রেমবন্দি করা। না জানিয়ে, সেটুকুও কি করা উচিত?
আরও পড়ুন, নায়িকাকে না জানিয়েই ধর্ষণ দৃশ্য! ৪৪ বছর পর বিতর্কে বার্তোলুচি, ব্র্যান্ডো
২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ৫৮ বছর বয়সে প্যারিসে মারা যান ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’-এর অভিনেত্রী মারিয়া। মারিয়ার মৃত্যুর দু’বছর পর এক সাক্ষাৎকারে বার্তোলুচি বলেন, ‘‘ছবিটির শুটিংয়ের পর মারিয়া আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি। এক দিক থেকে মারিয়ার প্রতি আমি অবিচার করেছি। কারণ শুটিংয়ের আগে আমি তাঁকে কিছুই বলিনি। কারণ আমি তাঁর অভিব্যক্তি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম একজন মেয়ে হিসেবে, অভিনেত্রী হিসেবে নয়। ধর্ষণ দৃশ্যটির বিষয়ে অবশ্য মার্লন আগে থেকেই জানতেন। আমি চেয়েছিলাম মারিয়া যেন নিজেকে যথার্থ অর্থেই ধর্ষিতা মনে করেন। এর জন্য আমি নিজেকে দোষী মনে করি। তবে এর জন্য আমার কোনও অনুশোচনা নেই। কারণ আমি চেয়েছিলাম মারিয়া অভিনয় না করে বাস্তবে ধর্ষিতার কষ্ট অনুভব করুক। হয়তো সে সময় আমি ছবিটি নিয়ে প্রচণ্ড খামখেয়ালিপনা করেছিলাম।’’ ২০১৩-এ বার্তোলুচি ওই সাক্ষাৎকার সম্প্রতি কোনও ভাবে নজরে আসে হলিউড তারকা জেসিকা চ্যাস্টেইনের। তার পরই ফের এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বিনোদন দুনিয়ায়। এবং একই সঙ্গে নতুন করে উস্কে দিয়েছে পুরোন বিতর্ককে। এক দিকে শিল্পের স্বার্থ, অন্য দিকে ব্যক্তির অধিকার।