মন কাড়ল ‘নুরজাহান’

খবর খুঁজে বেড়ান তিনি মুম্বইয়ের অলিগলিতে। শহরের পাঁজরে জমেছে অপরাধের বিষ! খুঁজছে সে। নুর রায়চৌধুরী। অন্য দিকে সে আবার বয়ফ্রেন্ডও খুঁজছে। তার স্যালারির চেয়ে ইএমআই-এর অঙ্কটা বেশি। সে তার ঘরবাড়ি বা পোশাক নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২২
Share:

‘নুর’-এ সোনাক্ষী

খবর খুঁজে বেড়ান তিনি মুম্বইয়ের অলিগলিতে। শহরের পাঁজরে জমেছে অপরাধের বিষ! খুঁজছে সে। নুর রায়চৌধুরী। অন্য দিকে সে আবার বয়ফ্রেন্ডও খুঁজছে।

Advertisement

তার স্যালারির চেয়ে ইএমআই-এর অঙ্কটা বেশি। সে তার ঘরবাড়ি বা পোশাক নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। কিন্তু জীবনে নতুন পুরুষ এলে রাম দিয়ে ডায়েট কোক খায় আর ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষে। বসের মিটিং ফেলে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যায়। সানি লিওনির সাক্ষাৎকারের চেয়ে সে এমন এক মহিলাকে নিয়ে লিখতে চায়, যে বাড়িতে সারাক্ষণ হেলমেট পরে থাকে।

কিন্তু কে পড়বে তার স্টোরি? কোথায় পাবে সে তার সাধের পুরুষটিকে? সাবা কাজমি-র ‘করাচি ইউ আর কিলিং মি’ অবলম্বনে সুনহিল সিপ্পির ‘নুর’ নতুন করে যেন সাংবাদিকতা,আশপাশের মানুষ নিয়ে ভাবতে শেখায়। গল্প অনেকটাই চেনা, যা মধুর ভান্ডারকরের ‘পেজ থ্রি’-র কথা মনে করায়।

Advertisement

নায়কের পাশে থাকা ‘দবং’ গার্ল বা ‘লুটেরা’-র রণবীর সিংহর প্রেমিকা নয়। এক্কেবারে পাশের বাড়ির মেয়ে হয়ে সোনাক্ষী নুর রায়চৌধুরী মন জয় করলেন এ বার। তার ঘুমন্ত পিঠ, উড়ুক্কু চুল, লড়াইয়ের মেজাজ, হাসিভরা সংলাপ ছবির প্রথম দৃশ্য থেকেই দর্শকদের মনে এক ধরনের মুগ্ধতা তৈরি করে। সময় কঠিন হতে থাকে। প্রেম, শরীর, বিশ্বাস, সাংবাদিকতা…ভাঙতে থাকে। টুকরো টুকরো কাচ, রক্তকণা, পেরেক, একা কি পারবে কুড়োতে ওই একরত্তি মেয়ে?

হঠাৎ করে কি থমকে যাবে সে? না কি নিজেই কোনও ব্র্যান্ড ছাড়া, কোনও প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার পথ ধরে আস্ত একটা শহরকে ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে?

গল্পের ঠাস বুনোটে আর দ্রুত বলে-যাওয়া সংলাপে ছবি দিব্যি এগিয়েছে। খুলে গেছে সাংবাদিকতার নানা দিক। অন্যের স্টোরি নিজের বলে চালিয়ে দেওয়াই কি সাংবাদিকতা? না কি চেনা বন্ধুদের গল্প ছাপানো সাংবাদিকতা?

ছবিতে সেটাই বুঝতে বুঝতে যায় নুর। নিজের কেরিয়ারের জন্য আগুপিছু না ভেবে ফস করে স্টোরি ব্রেক করার নাম যে সাংবাদিকতা নয়, সেটা সত্যিটা উঠে আসে তার সামনে। তবে এ ছবি কিন্তু সাংবাদিকতা নিয়ে কোনও জ্ঞান দিতে আসেনি। বরং ছবিটা দেখতে দেখতে পাশের বাড়ির মেয়ের লড়াই জেতার জেদটাই মনে থেকে যায়।

বলিউডে ইদানীং নারীকেন্দ্রিক ছবির রমরমা। নারীই এখন ‘ট্রেন্ডিং’! বেশির ভাগ ছবি তৈরির পিছনে এই ভাবনাই কাজ করে। বেশ কিছু দিন আগে সোনাক্ষী নিজেও ‘আকিরা’ করতে গিয়ে যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছেন। কিন্তু ‘নুর’-এর গল্প বলায় ট্রেন্ড নয়, একটা চেনা জীবনের ছবি আছে। দর্শকের সেটা ভাল লাগবে।

তবে সোনাক্ষীকে বাদ দিলে ‘নুর’-এর ঝুলিতে কিন্তু আর কিছুই থাকে না। পূরব কোহলি আর কানন গিলের অভিনয়টা মন্দ নয়। পূরব আর সোনাক্ষীর রোম্যান্সও পরদায় যথেষ্ট আকর্ষণীয়। কিন্তু সোনাক্ষীকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে গল্পকার পুরুষ চরিত্রের অভিনয়ের তেমন অবকাশ কোথাও রাখতে চাননি।

অকারণ ডিস্ক ফ্লোর মাতাবার গানও এ ছবিতে হাস্যকর। যেমন কিছুটা হলেও অবাস্তব তিন থেকে চার জন লোক নিয়ে ‘ব্রডকাস্ট জার্নালিজম’-এর অফিস! সমাজ, সাংবাদিকতা, একলা মেয়ের লড়াই, এত কিছুর পর ছবি হঠাৎ কেন আঁটোসাটো কালো জামা পরা সোনাক্ষীর আইটেম সং দিয়ে শেষ হয়, সেটাও বোঝা যায় না!

ছবির ক্ষেত্রে না বোঝা অনেক কিছুই থেকে যায়। মনে হয়, হিট-ফ্লপের বাইরেও তো শিল্পের একটা জমি থাকে, আকাশ থাকে। সেই আকাশে নুর-এর জৌলুসের আঁচ পেতে অবশ্যই হল-এ যান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement