আজ এনসিবি'র দফতরে দীপিকা, শ্রদ্ধা এবং সারা।
শনিবারের বারবেলায় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর দফতরে (এনসিবি) শেষ হল দীপিকা পাড়ুকোন, শ্রদ্ধা কপূর এবং সারা আলি খানের জিজ্ঞাসাবাদের প্রাথমিক পর্ব। সূত্রের খবর, দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর তিন অভিনেত্রীর প্রত্যেকেই দাবি করেছেন, তাঁরা কোনওদিনই মাদক নেননি। মাদক-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এদিন এনসিবি গ্রেফতার করেছে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচালক এবং প্রযোজক কর্ণ জোহরের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু' বলে পরিচিত ক্ষিতিজ রবি প্রসাদকে। যদিও করণ আগেভাগেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ক্ষিতিজ আদৌ তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ নন।
এনসিবি সূত্রে খবর, দীপিকা এদিন জেরায় স্বীকার করে করে নেন, হোয়াটসঅ্যাপের সেই বিতর্কিত গ্রুপে ‘ডি’ এবং ‘কে’-র মাদক সংক্রান্ত যে চ্যাট হয়েছিল, তা তাঁর এবং তাঁর ম্যানেজার করিশ্মার প্রকাশেরই কথোপকথন। ‘ডি’ হলেন দীপিকা নিজে এবং ‘কে’ করিশ্মা। ওই চ্যাটে দীপিকা করিশ্মাকে লিখেছিলেন, ‘মাল হ্যায় ক্যায়া?’ দীপিকা জেরায় জানিয়েছেন, করিশ্মার কাছে তিনি যে ‘মাল’ চেয়েছিলেন, তা মাদক নয়। তিনি কোনওদিনই মাদক নেননি।
A post shared by Viral Bhayani (@viralbhayani) on
অন্যদিকে, সারা মৃত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সঙ্গে তাঁর একসময়ের ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সারা জেরার মুখে জানিয়েছেন, ‘কেদারনাথ’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় কাছাকাছি এসেছিলেন তাঁরা। একসঙ্গে পার্টি করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতেও গিয়েছেন। যদিও পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। সারার বক্তব্য, তিনি এবং সুশান্ত একসঙ্গে প্রচুর পার্টি করেছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি কোনও পার্টিতেই মাদক নেননি। সিগারেট খেয়েছেন অবশ্য। প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে সারা এবং সুশান্তের একটি ভিডিয়ো হঠাৎ ভাইরাল হয়। সেই ভিডিয়োতে সারা-সুশান্ত দু’জনের হাতেই সিগারেট ছিল। প্রশ্ন উঠেছিল সিগারেটের মধ্যে কি মাদক ছিল? এনসিবি সেই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ায় সারা দাবি করেন, তাঁদের হাতে বিশুদ্ধ সিগারেটই ছিল। তাতে কোনও মাদক ছিল না। তিনি ধূমপান করেন। কিন্তু মাদক নেন না।
এনসিবি-র জেরার মুখে শ্রদ্ধাও এ দিন বলেন, তিনিও কোনওদিন মাদক নেননি। জয়া সাহার সঙ্গে তাঁর সিবিডি অয়েল সংক্রান্ত (গাঁজা থেকে তৈরি এক ধরণের তৈলজাতীয় পদার্থ) যে চ্যাট প্রকাশ্যে এসেছিল, সে বিষয়ে শ্রদ্ধাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান বলেই খবর। এনসিবি সূত্রে জানা যাচ্ছে, শ্রদ্ধার জবাব খুব ‘সন্তোষজনক’ বলে মনে হয়নি এনসিবি কর্তাদের। প্রসঙ্গত, হাই প্রোফাইল পরিচালক-প্রযোজক কর্ণের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু' বলে পরিচিত ধৃত ক্ষিতিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাঁজা ছাড়াও এমডিএমএ (এক ধরণের মাদক) নিতেন তিনি। যুক্ত ছিলেন মাদক সরবরাহেও। তবে ক্ষিতিজের পাল্টা দাবি, মারিজুয়ানা সেবন করলেও তিনি মাদক পাচার বা সরবরাহে যুক্ত নন। কর্ণ অবশ্য শুক্রবারই এক বিবৃতি জারি করে বলেছেন, “বেশকিছু সংবাদমাধ্যম ক্ষিতিজ-সহ কয়েকজনকে আমার ঘনিষ্ঠ সহকারী হিসেবে প্রচার করছে। আমি জানাতে চাই, তাঁদের কেউই আমার ঘনিষ্ঠ নন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁরা কেমন, আমি তা-ও জানি না। আমি কোনওদিন মাদক সেবন করিনি বা কাউকে মাদকসেবন করতে উৎসাহও দিইনি।” যদিও মাদক মামলায় ক্ষিতিজের গ্রেফতারি কর্ণের চাপ বাড়াল বলেই মনে করছে ইন্ডাস্ট্রির একাংশ।
A post shared by Viral Bhayani (@viralbhayani) on
তিন নায়িকার জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শেষ হওয়ার পর এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এনসিবি-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মুথা অশোক জৈন। এনসিবি-র তরফে একটি বিবৃতিও জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, রবিবার আর দীপিকা, সারা, শ্রদ্ধা এবং দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মা প্রকাশকে আর ডাকা হচ্ছে না। এ দিন তাঁদের প্রত্যেকের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। আপাতত তা খতিয়ে দেখা হবে। সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তে যে মাদক-যোগ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দীপিকা, শ্রদ্ধা, সারা এবং রাকুল প্রীত সিংহের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। সেই সূত্রেই গত বুধবার বলিউডের ওই চার অভিনেত্রীকে জেরার জন্য হাজির হতে সমন জারি করেছিল এনসিবি।
এ দিন সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ এনসিবির দফতরে পৌঁছন দীপিকা। ছিমছাম পোশাক। তারকাসুলভ কোনও অভিব্যক্তি নেই। কালো চশমায় চোখ-টোখও ঢাকা ছিল না। মুখ ঢাকা ছিল মাস্কে। যে গাড়িটিতে এসেছিলেন, তা-ও তুলনায় ছিল সাদামাটা। কোটি টাকার একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হলেও এ দিন ‘হুন্ডাই’-এর একটি মিনি এসইউভি চড়ে এসেছিলেন দীপিকা। জেরায় হাজিরা দেওয়ার সময় সুশান্তের প্রাক্তন বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর মতো তথাকথিত ‘ফ্লপ’ নায়িকার দামি ও বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে যাওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছিল। বলিউডের একাংশ মনে করছে, গাড়ি নিয়ে কোনও ‘বিবৃতি’ দিতে চাননি দীপিকা। তাই তুলনায় সাধারণ গাড়ি বেছে নিয়েছিলেন।
এর কিছু পরেই বেলা ১২টা নাগাদ এনসিবি-র দফতরে পৌঁছন শ্রদ্ধা। তার ১ ঘণ্টা পর পৌঁছন সারা। তাঁদের পোশাকও ছিল সাদামাটা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তিন জনকে দিনভর জেরা করে এনসিবি। ডাকা হয়েছিল দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মাকেও। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ডাকা হল করিশ্মাকে। এ দিন দীপিকাকেক প্রথমে একা জেরা করা হয়। পরে তাঁকে জেরা করা হয় করিশ্মার মুখোমুখি বসিয়ে। সূত্রের খবর, সেখানেই দীপিকা স্বীকার করে নেন ওই চ্যাটের সত্যতা। জেরাপর্ব শেষ হওয়ার পর বিকাল ৪টে নাগাদ বেরিয়ে যান দীপিকা। তার ঘণ্টাদুয়েক পর এনসিবি দফতর ছাড়েন সারা এবং শ্রদ্ধা।