ছবির নাম শুনলে অনেকেরই ভ্রু কুচকে উঠতে পারে। অনেকে আবার প্রশ্নও তুলতে পারেন। সিনেমার আবার এমন নাম। কুয়েন্টিন ট্যারেন্টিনোর ছবির নাম যদি ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’ হতে পারে। তাহলে শ্লোক শর্মার ছবি ‘হারামখোর’ নয় কেন? ‘হারামখোর’ নাম রাখা যাবে না। এই কথা সাফ জানিয়েছিল সেন্সর বোর্ড। আর ছবির নামেও চালাতে চেয়েছিল কাঁচি। আর এই কারণেই ২০১৬-তে ‘হারামখোর’ মুক্তি পায়নি।
তবে এ সব ডামাডোল পর্বের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি অভিনীত ‘হারামখোর’। নাম বা অন্য কোনও দিক থেকে সেন্সর হয়নি ছবিতে। নতুন বছরের ১৩ জানুয়ারি মুক্তি পাবে এই ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’ সিনেমা। ছবির পরিচালক শ্লোক শর্মা। শ্লোক এর আগে অনুরাগ কাশ্যপ এবং বিশাল ভরদ্বাজের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন সহ-পরিচালক হিসাবে। ছবিতে নওয়াজের বিপরীতে দেখা যাবে শ্বেতা ত্রিপাঠীকে। ‘মাসান’-এ অভিনয় করে অনেকেরই মন জয় করেছিলেন শ্বেতা। ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয় এই ছবির। ওই বছরেই মুম্বই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হয়েছিল ‘হারামখোর’। এ ছাড়াও এই ছবি ঘুরে ফেলেছে আরও অনেক ফেস্টিভ্যাল।
আরও পড়ুন, সানি লিওন এ বার কলকাতায়?
উত্তর ভারতের একটি ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক শ্যাম। রুজি রোজগারে আরও একটু বেশি টাকা উপার্জন করতে তিনি প্রাইভেট টিউশনও করেন। শ্যাম বিবাহিত। তাঁর কাছে টিউশন নিতে আসেন সন্ধ্যা নামের একটি মেয়ে। প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষকের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে টিনেজ সন্ধ্যা। আর তার পর থেকেই গল্পে আসে নয়া মোড়। ছবিকে ঠেলে দেয় এক ‘ট্যাবু লাভ স্টোরি’র দিকে। যেখানে শিক্ষকের ভালবাসার জালে জড়িয়ে পড়বেন তাঁর ছাত্রী।
নওয়াজ এই ছবিতে শ্যামের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আর শ্বেতা তাঁর ছাত্রী। এদের দুজনের মধ্যেই চলে প্রেম। এই ভালবাসা যে কতদূর গড়ায় তা নিয়েই এই ছবি। ৩০ বছর বয়সী শ্লোক শর্মার প্রথম ছবি ‘হারামখোর’। সংবাদপত্রের একটি খবর দেখেই এই আইডিয়া শ্লোকের মাথায় আসে। কয়েক পাতা লেখার পরই শ্লোক তাঁর ফিল্ম গুরু অনুরাগ কাশ্যপকে গল্পটা শোনান। আর শিষ্যের এই গল্প শুনে তখনই ছবিটি প্রযোজনা করার জন্য এগিয়ে আসেন অনুরাগ। তাঁর সঙ্গে সহ-প্রযোজনা করছেন গুণিত মঙ্গা ও তাঁর শিক্ষা এন্টারটেনমেন্ট। গুণিত এর আগে ‘লাঞ্চবক্স’, ‘দ্যাট গার্ল ইন ইয়েলো বুটস’ প্রযোজনা করেছেন।
খুবই সীমিত বাজেটের মধ্যে ছবিটি তৈরি করতে হয় পরিচালককে। গুজরাতের একটি ছোট্ট গ্রামে মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে ছবির শুটিং শেষ করা হয়। ওই গ্রামেই ছবিটির জন্য রিসার্চ ওয়ার্ক করছিলেন শ্লোক। এই টপিক নিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ‘ওমকারা’, ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’, ‘নো স্মোকিং’ এর মতো ছবির সহ-পরিচালক শ্লোকের মতে, “ছবিটি নিয়ে লাক্সারি করার সময় আমাদের কাছে ছিল না। মাত্র দু’টোর বেশি রিটেক আমরা নিতে পারিনি। তাই অভিনয় আর দৃশ্যায়নের আঙ্গিকে ছবিটি আরও কড়া ও বাস্তবধর্মী হয়ে উঠেছে। কোনও অনুশীলন ছাড়াই শুটিং করতে হয়েছে।” প্রথম ছবি নিয়ে আশাবাদী পরিচালক আরও বলেন, “শিক্ষককে আমাদের দেশে মা-বাবার স্থানেই রাখা হয়। ছবিটির রিসার্চ ওয়ার্ক করতে গিয়ে আমার যাদের সঙ্গেই কথা হয়েছে তাঁরা বলেছেন এই ধরনের ভালবাসায় হ্যাপি এন্ডিং হয় না। শেষে এমন এক পরিবারের সঙ্গে আমাদের টিমের পরিচয় হয় যে পরিবারের কর্তা তাঁর ছাত্রীকেই বিয়ে করেছেন। আর সেইদিনই আমি ঠিক করে ফেলি যে এই বাড়িতেই শুটিং হবে।”
বড়দিনের বিশেষ খবর পড়তে ক্লিক করুন
এই ধরনের ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে আমাদের চারপাশে। কখনও কখনও পরিণতি খুব খারাপের দিকে যায়। এই ছবি নিয়ে ফেস্টিভ্যাল চত্বরে যথেষ্ট মাতামাতি হয়েছে। এখন দেখতে হবে, দর্শক মনে এই ছবি জায়গা করে নিতে পারে কি না।