বাস্তবে গীতাদের কোচ পি আর সন্ধি। (ডানদিকে) পর্দার কোচ প্রমোদ কদম।
একে অপরকে চেনেন প্রায় পনেরো বছর।
এবং পুরোনো বন্ধু মহাবীর সিংহ ফোগতের জীবন নিয়ে সিনেমা হচ্ছে শুনে গত কয়েক দিন উত্তেজনায় ভাসছিলেন প্রাক্তন জাতীয় কুস্তি-কোচ পি আর সন্ধি।
কিন্তু আমির খানের ‘দঙ্গল’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সেই উত্তেজনা উধাও। বরং পঞ্জাবের ফাগওয়ারা শহরে নিজের বাড়িতে বসে ফুঁসছেন সত্তর বছরের সন্ধি।
তাঁর অভিযোগ, স্রেফ ছবিকে উত্তেজক করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর চরিত্রটাকে নেগেটিভ করে তুলেছেন আমির খান ও পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি।
‘‘মহাবীরজি আমার বহু দিনের বন্ধু। এবং দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসের সময় ওঁর সঙ্গে আমার সঙ্গে কোনও ঝামেলা হয়নি। ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, তার কোনও ভিত্তিই নেই,’’ সোমবার সন্ধেয় আনন্দবাজারকে বলছিলেন সন্ধি।
যদিও ছবিতে তাঁর আসল নাম ব্যবহার করেননি পরিচালক। কিন্তু কুস্তি মহলও নিশ্চিত যে, যেহেতু ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে জাতীয় কোচ ছিলেন সন্ধিই, পর্দার প্রমোদ কদম চরিত্রটি তাঁকে অনুকরণ করেই তৈরি।
‘‘আমার কোচিংয়েই সোনা জিতেছিল গীতা। রূপো এনেছিল ববিতা। কিন্তু ছবিতে কেন আমাকে এত নেগেটিভ ভাবে দেখানো হল সেটা এখনও বুঝতে পারিনি,’’ কিছুটা হতাশ হয়েই বলছিলেন প্রাক্তন কোচ।
এবং সেই কারণেই তিনি ঠিক করেছেন দিন দুয়েকের মধ্যে সরাসরি কথা বলবেন আমিরের সঙ্গে। এবং তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে, আইনি ব্যবস্থাও নেবেন। ‘‘আমিরের মতো অভিনেতার কাছ থেকে এ রকম ঘটনা আমি আশা করিনি। আমি ইতিমধ্যেই কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি,’’ বলছিলেন সন্ধি।
ছবি শুরুর আগে বহুবার পঞ্জাব ও হরিয়ানার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরেছেন আমির ও তাঁর টিম। সঙ্গী ছিলেন আরেক প্রাক্তন জাতীয় কোচ কৃপাশঙ্কর বিষ্ণোই। তা সত্ত্বেও এ রকম ঘটনায় যথেষ্ট হতাশ প্রবীণ কোচ। ‘‘দঙ্গল দেখে লোকে ভাববে এই লোকটা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কতটা নীচে নেমেছিল। কিন্তু আমরা তো জানি যে পর্দায় যা দেখানো হয়েছে তার পুরোটাই মিথ্যে,’’ বলছিলেন সন্ধি।
সরাসরি মুখ না খুললেও জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের কয়েকজন শীর্ষকর্তাও মানছেন যে, ‘দঙ্গল’য়ে জাতীয় কোচকে যে ভাবে দেখানো হয়েছে তা যথেষ্ট অপমানজনক। ‘‘সন্ধিজি বহুদিনের কোচ। ওঁর মতো মানুষের সম্পর্কে এ রকম মিথ্যাচার মানা যায় না। কমনওয়েলথ গেমসের সময় ওই রকম কিছুই ঘটেনি,’’ নয়াদিল্লি থেকে বলছিলেন এক ফেডারেশন কর্তা।
যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি গীতা কিংবা ‘দঙ্গল’ ইউনিটের সদস্যরা।
কিন্ত সন্ধি মনে করেন, স্রেফ ছবি হিট করানোর জন্যই এরকম মিথ্যাচার করেছেন আমির ও তাঁর ইউনিট। ‘‘একজন জাতীয় কোচ যদি কাউকে স্টেডিয়ামে আটকে রাখতেন তা হলে সেটা নিয়ে তখন কেউ লেখেনি কেন? আসলে সবাই জানে, এটা পুরোপুরি মিথ্যে। এবং সেই জন্যই ছবির শ্যুটের সময়েও আমার সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ করা হয়নি। এ রকম ব্যবহার আমি আশা করিনি,’’ অভিমানী গলায় বলছিলেন সন্ধি।
জাতীয় ক্যাম্প চলাকালীন গীতাকে ‘বেটি’ বলতেন ফগওয়ারার এই প্রবীণ কোচ। এবং সেই ‘বেটি’কে নিয়ে তৈরি ছবিতে যে এরকম অভিজ্ঞতা হবে তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। সেই কারণেই ঠিক করেছেন আর কোনওদিন যোগাযোগ রাখবেন না ফোগত পরিবারের সঙ্গেও।
‘‘যে মানুষগুলোকে এত পছন্দ করতাম, তারাই যখন পরক্ষে মিথ্যাচারকে সমর্থন করছেন, তখন আর কী বলতে পারি! মিথ্যে দেখানো হচ্ছে জেনেও কেন একবারও প্রতিবাদ করলেন না মহাবীরজি কিংবা গীতা?’’ বলছিলেন সন্ধি, যিনি এই মুহূর্তে অপেক্ষা করছেন আমিরের সঙ্গে কথা বলার জন্য।
আসলে সত্যিটা যে তিনিও জানতে চান!