নাসিরুদ্দিন শাহ। —ফাইল চিত্র
রাতারাতি কেউ তারকা বনে যান না। বেশির ভাগ অভিনেতার নাম-যশ-খ্যাতির আগে পড়ে আছে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ, যে তালিকায় রয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহও। প্রথম যে বার তিনি ক্যামেরার সামনে এসেছিলেন বিশেষ কিছু প্রাপ্তি হয়নি অভিনেতার। ‘আমন’(১৯৬৭) ছবি দিয়ে অভিনয়-সফর শুরু করেছিলেন নাসির। খুব ছোট্ট ভূমিকা। তার জন্য কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি?
অঙ্কটি শুনে এ কালের দর্শক চমকাতে পারেন। কোটির জমানায় নাসিরুদ্দিনের প্রথম পারিশ্রমিক ভীষণ রকম লজ্জা দিতে পারে। কিন্তু এতটুকুও লজ্জা পেলেন না অভিনেতা। রাজেন্দ্র কুমার এবং সায়রা বানু অভিনীত সেই ছবিতে কিছু খুচরো চরিত্রের প্রয়োজন ছিল। রাস্তায় ভিড়ের দৃশ্য যেমন হয়, তেমনই এক দৃশ্যে অতিরিক্ত চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। তাঁর কথায়, “সে সময়ে খুচরো অভিনেতারা যাঁরা এ ধরনের চরিত্রে জায়গা ভরাতেন, তাঁরা পেতেন ১৫ টাকা করে। আমি সেটুকুও পাইনি, কারণ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাঁত ছিল না। পার্টির দাদা ছিল না পিছনে। তাই পেয়েছি সাকুল্যে সাড়ে ৭ টাকা!”
নাসির জানান, রাস্তার ধারে এক রেস্তরাঁ ছিল। সেখানে গিয়ে ভিড় জমাতেন নাসির এবং তাঁর মতো ভাগ্যান্বেষীরা। সেখান থেকে ১০ জনকে নিয়ে যান এক ব্যক্তি। শুধু জানান, শুটিংয়ে যেতে হবে। নাসিরুদ্দিনও নট্রাজ স্টুডিয়োতে চলে যান নির্দেশ মতো। অনেক কসরত করে ভিড়ের মধ্যে প্রথম সারিতে দাঁড়াতে পারেন তিনি, যেটি ক্যামেরায় ধরা দেয়। সেই প্রথম পর্দায় আসা। উচ্ছ্বসিত নাসির লাফাতে লাফাতে বাড়ি গিয়ে সুখবরটি দেন। লজ্জায় বলতে পারেন না তাঁর চরিত্রটি আসলে কতটুকু। বরং বলেন, “ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে এলাম। রাজেন্দ্র কুমারের মৃত্যুর পর কিছুটা ভাষণও দিয়েছি।” পরে ছবিমুক্তির পর ছদ্ম কোপ নিয়েই পরিবারকে জানান, সেই দৃশ্যগুলি সব সম্পাদনায় বাদ পড়েছে।
নাসিরের কথায়, “আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আনন্দটাই। কী যে ভাল লেগেছিল প্রথম অভিনয়ে, তা প্রকাশ করার ভাষা ছিল না। যখন শট নেওয়া হচ্ছিল, ক্যামেরা আমার মুখের কাছাকাছি আনা হয়। নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়েছিলাম সেখানে, জাদুর মতো লেগেছিল। সেই স্মৃতি ভোলার নয়।”
শীঘ্রই নাসিরুদ্দিনকে দেখা যাবে ওয়েব সিরিজ় ‘তাজ: ডিভাইডেড বাই ব্লাড’-এ।