২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি মঞ্চে নচিকেতা চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
২০০৯ থেকে ২০২৪। দীর্ঘ ১৫ বছর। এতগুলো বছর ধরে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূ্চি মঞ্চে উপস্থিত। এত বছর ধরে দুটো জিনিস তিনি লক্ষ করে আসছেন। এক, জনজোয়ার বাড়ছেই। দুই, ২১ জুলাই বৃষ্টি হবেই। তাঁর অনুরাগীদের মতে, তৃতীয়টি তাঁর গান। এ বারে তিনি ছোট্ট করে দুটো গান শুনিয়েছেন, ‘তুমি আসবে বলে’, ‘হয়তো তোমারই জন্যে’। এ দিন আর কী লক্ষ করার মতো বিষয় চোখে পড়ল তাঁর? সভা ভাঙতেই আনন্দবাজার অনলাইন জানতে চেয়েছিল তাঁর কাছে। গায়কের উত্তর, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরণ। আগের তুলনায় আরও পরিণত, তুখোড়। যে সমস্ত আগামী কর্মসূচির কথা বলল, সেগুলো ভীষণ প্রয়োজনীয়। ২০২৬-এর মধ্যে সেগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে।”
রাজনীতিবোদ্ধা নন। তাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতেও কোনও দিন চাননি। বরাবর নিজেকে ‘রাজনীতিমনস্ক’ তকমা দিয়েছেন। বার ছয়েক নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে নামঘোষণার পরেও তাই সরে গিয়েছেন। তা হলে কিসের টানে ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি মঞ্চে তাঁর প্রত্যেক বার হাজিরা? একাধিক কারণ দর্শিয়েছেন নচিকেতা। বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে আসি। আমার গান মনে হয় ওঁর ভাল লাগে। আমি মঞ্চ থেকে ওঁকে গান শোনাই। উপস্থিত বাকিদেরও।” একটু থেমেছেন। ফের বলেছেন, “আমি দুটো জিনিস দেখতে আসি। আকাশভাঙা বৃষ্টি। ওটা না থাকলে ২১ জুলাই যেন অসম্পূর্ণ! না হলেই বুক দুরুদুরু। আর লোকের ভিড়।” তাঁর মতে, গত ১৫ বছরে সেই ভিড় বেড়েছে বই কমেনি। প্রত্যেক বার মঞ্চ থেকে জনজোয়ার দেখেন তিনি, এ বারেও দেখেছেন। কিন্তু এ বারে তাঁর মনে হয়েছে, ২০২৪-এ চার দিক থেকে নয়, পাঁচ দিক থেকে বুঝি লোক এসেছিল! তাই সভার শুরু থেকে শেষ কানায় কানায় পূর্ণ।
নিন্দকেরা যে বলে, ডিম-ভাতের লোভে নাকি এই ভিড়? শহরতলি, গ্রাম-গঞ্জ থেকে দলে দলে সকলে আসেন এই কারণে?
প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছেন। জবাব, “জানেন, আমি ডিম খেতে খুব ভালবাসি। কেড়ে খেয়ে ফেলি। তা-ই যদি হবে, তা হলে সবার আগে এখানে আমি পাত পেড়ে বসে যেতাম।” জানিয়েছেন, ২০০৯-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী শক্তি। তখনও সমাবেশে তিলধারণের জায়গা থাকত না। সে সময়ে কিন্তু বিরোধী নেত্রীর খরচ করার মতো অর্থ ছিল না। তখনও তাঁর কারণেই মানুষের ঢল, এখনও।
এ বারের ২১-এর মঞ্চ উপহারও দিয়েছে নচিকেতাকে। কী সেটা? গায়কের জবানিতে, “১৫ বছর আগের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা হল। আমরা একসঙ্গে তিন বছর ধরে লড়াই করে ৩৪ বছরের বামশাসনের অবসান ঘটিয়েছিলাম।” দেখে মন যেমন ভাল হয়েছে, বিষাদও ছুঁয়েছে তাঁকে। তাঁর মতোই বয়স বেড়েছে প্রত্যেকের।নচিকেতা খুশি, তাঁর ‘দল’ ভারী হচ্ছে। পরক্ষণেই বিষণ্ণ, তা হলে কি তিনিও বুড়ো হয়ে গেলেন?