ছবির ট্রেলারের ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট
পিউপা
পরিচালনা: ইন্দ্রাশিস আচার্য
অভিনয়: রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, পিয়ালী মুন্সি
পারিবারিক মূল্যবোধ, কর্তব্য, শিকড়ের টান নাকি কেরিয়ার— সফল ভবিষ্যৎ কোনটাকে প্রায়োরিটি দেবে শুভ্র (রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়)! গোটা ছবি জুড়ে এই দ্বন্দ্ব তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। সেরিব্রাল অ্যাটাকে কোমাচ্ছন্ন বাবার(প্রদীপ মুখোপাধ্যায়)গোঙানির শব্দ ব্যতিব্যস্ত করে। কান চেপে ধরে শুভ্র। শরীর ন্যুব্জ হয়। একটা মৃত্যু পেরিয়ে আরও একটা মৃত্যুর অপেক্ষায় নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই! পাশাপাশি আরও একটি ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয়! তা শুভ্রর নিরুপায় আত্মধ্বংসের আহ্বান! মনোরঞ্জন নয়, ‘পিউপা’ আসলে দর্শককে সচেতন অস্বস্তি দেয়!
মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুভ্র বিদেশ থেকে বাড়িতে আসে। ফিরে যাওয়ার একদিন আগেই বাবার অ্যাটাক! পরিস্থিতি তাকে তীব্র সঙ্কটে ফেলে। নিউক্লিয়াস পরিবারে সবাই নিজের অরবিটে বাঁধা! বাড়ির বড় মেয়ে মৌ( সুদীপ্তা চক্রবর্তী)বাবার অসুস্থতায় পাশে থাকতে চাইলেও পেরে ওঠে না! স্বামীর পরুষতান্ত্রিক মন সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বর্ষা(পিয়ালী মুন্সি) প্রেমিকের কাছাকাছি থাকবে বলে বিদেশে রিসার্চের সুযোগ খোঁজে। চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়! তার উপলব্ধি, ওটাই তার নিজস্ব অরবিট! আটকে পড়ে শুভ্র! ছিটকে যাওয়া ইলেকট্রনের মত।
আরও পড়ুন: অগস্টে মুক্তি পেতে চলেছে বলিউডের এই সিনেমাগুলি
অন্যদিকে পাশ্চাত্য মননসমৃদ্ধ কাকা রজত চট্টোপাধ্যায়(কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়)। এক সময় বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এখন হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে দেশ-বিদেশে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। আর সময় পেলেই পাহাড়ে চলে যান। মূলত কাকা ভাইপো’র যুক্তি-প্রতিযুক্তিই পিউপার গতি। কাকা বোঝানোর চেষ্টা করেন, যে আবেগ মানুষকে স্থবির করে দেয় তা মূল্যহীন! কারণ জীবন মানে তো এগিয়ে চলা। তাই নিষ্ঠুর যুক্তির হাত ধরা ছাড়া উপায় নেই! অন্য দিকে প্রলাপের মত সংলাপ আউরে চলে ভাইপো- “ফেলে চলে যাবো! সম্ভব!” ঠিক তখনই ‘পিউপা’ দুটি মনের দ্বন্দ্ব হয়ে দাঁড়ায়। পাশ্চাত্য মন গুটিপোকা থেকে প্রজাপতির ডানা মেলার গল্প শোনায়। প্রাচ্য মন মাঝামাঝি আটকে পড়ে দগ্ধে মরে! তার ডানা ঝাপটাবার স্বপ্ন আছে! পরিস্থিতির আনুকূল্য নেই!
‘পিউপা’র পর ইন্দ্রাশিসের ক্র্যাফটের প্রতি দখল ও নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করার জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। সুদীপ্তার অভিনয় নিয়ে কী-ই বা বলি! যা-ই বলব কম হয়ে যাবে। তার প্রমাণ করার আর বোধয় কিছু বাকি নেই। ভিন্ন ঘরানার অভিনয়ে চমৎকার লাগে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে। রাহুল যথাযথ। শুধু ইংরেজি উচ্চারণে খানিক মার্কিনি স্বর থকলে মন্দ হত না! পিয়ালি আলাদা ভাবে নজরে পড়বে। প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের খুব একটা করার কিছু ছিল না! তাঁকে গোটা ছবিতে শুয়েই কাটাতে হয়েছে। বিটোফেনের সিম্ফনির ব্যবহার ‘পিউপা’য় ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
শুধু ছবির শেষটা বড় অমানবিক! রজতের গায়ে জড়ানো চাদরের মত দুঃখ লেপ্টে যায় গোটা শরীরে। সেই দুঃখের রেশ নিয়ে মনের আজান্তে চলতে থাকে আবেগ আর যুক্তির লাড়াই! কে জিতবে এই লড়াই এ? উত্তর জানা নেই!
আরও পড়ুন: বলিউডের এই হোয়াইট বিউটিদের দেখে চোখ ফেরাতে পারবেন না আপনিও