ছবির একটি দৃশ্য।
কেনেথ ব্রানাহ হাত দিয়েছেন এমন এক গোয়েন্দা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি নির্মাণে, যা আজকের দর্শকের কাছে উপভোগ্য করে তোলার চ্যালেঞ্জ সহজ নয়। আগাথা ক্রিস্টির এরকুল পোয়ারো পড়ে বড় হওয়া প্রজন্ম বড় পর্দায় তাদের প্রিয় গোয়েন্দাকে কী ভাবে দেখতে পছন্দ করবে, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন পরিচালক-অভিনেতা কেনেথ। ‘ডেথ অন দ্য নাইল’-এ যেমন তিনি পোয়ারোর পূর্ব-ইতিহাস দিয়ে শুরু করেছেন, যে সময়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়ছে সে। সেখান থেকে গল্প এসে পড়ে তিরিশের দশকের শেষ ভাগে। পিরামিডের দেশে ঘনিয়ে ওঠে রহস্য।
‘মার্ডার অন দি ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’-এর পরে পোয়ারোর (কেনেথ) সঙ্গে ফের দেখা হয় বুকের (টম বেটম্যান)। সেই সূত্রেই পোয়ারো পরিচিত হয় নবদম্পতি সাইমন (আরম্যান্ড ডাগলাস হ্যামার) আর লিনেটের (গ্যাল গ্যাডট) সঙ্গে। কোটিপতি দম্পতির মধুচন্দ্রিমায় শামিল হয় পোয়ারো এবং আঁচ মেলে গরমিলের। সাইমনের প্রাক্তন জ্যাকলিনের (এমা ম্যাকি) উপস্থিতি পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। সাইমন-লিনেট দ্বারস্থ হয় পোয়ারোর। তবে সাবধান হওয়ার আগেই একের পর এক ঘটে যায় দুর্ঘটনা। মধুচন্দ্রিমার উদ্যাপন তখন নীল নদের বুকে প্রমোদতরীতে পূর্ণ মাত্রায় চলছে। তার মধ্যেই পোয়ারো স্বমূর্তি ধারণ করে। ছবির এক জায়গায় লিনেট বলে, অত্যন্ত বিত্তশালীরা আপনজনদের মধ্যেও নিরাপদ বোধ করে না। উপস্থিত প্রায় সব চরিত্রের উপরেই সন্দেহের তির ঘোরে, সঙ্গত কারণে। ‘হুডানইট’-এর উত্তেজনাও ধরতে চাওয়া হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
ডেথ অন দ্য নাইল
পরিচালক: কেনেথ ব্রানাহ
অভিনয়: কেনেথ, গ্যাল, এমা, আরম্যান্ড, আলি
৫.৫/১০
‘ডেথ অন দ্য নাইল’-এর কাহিনির চলন ও বিস্তার গোয়েন্দা গল্পের প্রেক্ষিতে সরল ও কমবেশি অনুমেয়। প্লট যে ভাবে সাজানো, তাতে দ্বিতীয়ার্ধের আগে টানটান হয়ে বসার সুযোগ তেমন নেই। তবে প্রথম দৃশ্য থেকেই অসাধারণ সিনেম্যাটোগ্রাফি ও গ্রাফিক্স চোখ আটকে রাখবে পর্দায়। পিরামিডের গা বেয়ে উঠে ঘুড়ি ওড়ানো, বিশালাকার স্ফিংসের সামনে বসে ক্যানভাসে তুলি বোলানো, নীল নদের বুক চিরে চলা প্রমোদতরণী... চোখজুড়ানো কিছু দৃশ্যকল্প মিশরের প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে। আবহসঙ্গীতে প্যাট্রিক ডোয়েলের পরিমিতিবোধও অবাক করার মতো। স্তব্ধতার মধ্যে বলা সংলাপ যে কতখানি অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে, তা কয়েকটি দৃশ্যে প্রকট হয়েছে। যুদ্ধের দৃশ্য, সেনা হাসপাতালের সেট সটান পৌঁছে দেয় এক কল্পরাজ্যে। পোয়ারোর চাড়া দেওয়া গোঁফ জোড়ার নেপথ্যের গল্পও লুকিয়ে আছে সেখানেই। যদিও মূল কাহিনির সাবপ্লট হিসেবে তা খুব একটা জমেনি।
পুরো ছবিতেই নাটকীয়তার সুর একটু চড়িয়েছেন কেনেথ। রহস্যভেদের ট্রিটমেন্টেও সে ছাপ স্পষ্ট। প্রথম থেকে পুরো ছবিটি আবর্তিত হয়েছে যে দম্পতিকে ঘিরে, তাদের মধ্যকার রসায়ন দৃশ্যত জমেনি। আর্মি হ্যামারের সঙ্গে গ্যাল গ্যাডটের শরীরী ঘনিষ্ঠতা ম্যাজিক তৈরি করতে ব্যর্থ। যদিও গ্যাল দ্যুতি ছড়িয়েছেন তাঁর অননুকরণীয় লাস্যে। বিশ্বাসযোগ্য ভাবে নিজেকে সম্পর্কের তৃতীয় কোণে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জ্যাকলিনের চরিত্রে এমা। ‘সেক্স এডুকেশন’-খ্যাত এমা আবেগের দৃশ্যে জীবন্ত। লিনেটের প্রাক্তনের চরিত্রে রাসেল ব্র্যান্ড, তুতোভাইয়ের ভূমিকায় আলি ফজ়লকে ভাল লাগে। যদিও নির্দিষ্ট ধাঁচে সংলাপ বলার ধরনটি পুরোপুরি কাটেনি আলির। ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর সুরি এখানে লিনেটের বাল্যবন্ধু রোজ়ালির চরিত্রে। লেটিশিয়া রাইট ফের মুগ্ধ করেছেন এই চরিত্রে। ছবিতে বর্ণবৈষম্য, সাম্যবাদের কথা এসেছে, প্রসঙ্গক্রমে। তবে তা কখনওই মূল কাহিনির অংশ হয়ে ওঠেনি।
ছবির মূল রাশ নিজের দিক থেকে একবারও ঘুরতে দেননি স্বয়ং পোয়ারো, অর্থাৎ কেনেথ ব্রানাহ।
‘...ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’-এর পরে এই ছবিতে তিনি আরও প্রত্যয়ী, পরিণত। আগাথা ক্রিস্টির পোয়ারোকে কেনেথ রক্তমাংসে রূপ দিয়েছেন, কাছাকাছি এনে দিয়েছেন এ প্রজন্মের। এই প্রয়াসের জন্যই তাঁর সাধুবাদ প্রাপ্য।