শবর দাশগুপ্তের চরিত্রে শাশ্বত। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
আসছে আবার শবর
পরিচালক: অরিন্দম শীল
অভিনয়: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, গৌরব চক্রবর্তী, শুভ্রজিৎ দত্ত, ললিতা চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জনা বসু
পাহাড়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার পর্দায় ফিরলেন শবর দাশগুপ্ত। তবে একটা পাহাড়ে তিনি ছিলেনই।
প্রত্যাশার পাহাড়। তার গুণেই ব্যোমকেশ-ফেলুদা-কিরীটি-কাকাবাবুর মধ্যেও বাংলা ছবিতে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দা শবর। করিয়ে নিয়েছেন পরিচালক অরিন্দম শীল, তাঁরআগের দুই ছবি ‘এ বার শবর’ আর ‘ঈগলের চোখ’ দিয়ে। ‘আসছে আবার শবর’ তাই দর্শক দেখতেই যাবেন প্রত্যাশা নিয়ে। গোয়েন্দা শবরের কাজটা তাই এ বার বেশ কঠিনই ছিল।
প্রত্যাশা থাকবে জেনেই হয়তো পরিচালক রহস্যকে আরও সাম্প্রতিক করতে চেয়েছেন। এ বারের গল্পে অনেক বেশি করে এসেছে সাইবার-অপরাধের জগৎ। সেই দুনিয়ায় কীভাবে জড়িয়ে পড়ছে কমবয়সীরা, তার গল্প।
কুড়ি-একুশ বছরের দুই তরুণী খুন। পরে আরও একজন। খুনের ধরন এক। সেই রহস্যের কিনারা করতেই এ বারে শবর কলকাতা ছেড়ে পা রেখেছেন চন্দননগরে, লখনউয়ে। কলকাতার বাইরের শবর আর নন্দকে পেয়ে ভালই লেগেছে। পরে হয়তো তাঁরা আরও দূরে যাবেন রহস্যের কিনারা করতে।
‘আসছে আবার শবর’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
তবে যত দূরেই যান, ‘শবর’ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও ‘নন্দ’ শুভ্রজিৎ দত্তের রসায়ন অটুট। ‘সরকারি’ গোয়েন্দা হয়ে কাঠ মুখে শবর যেমন ডায়লগেই অসামান্য হাস্যরস তৈরি করেছেন, তেমনই চুটিয়ে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন ধার্মিক পুলিশ অফিসার নন্দলাল রায়। বিশেষ করে শাশ্বতকে অপেক্ষায় রেখে শুভ্রজিতের গান গাইতে গাইতে স্নান সেরে, তৈরি হওয়ার দৃশ্যটি অনবদ্য।
বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
রহস্যের জট ছাড়ার সমান্তরালে শবর-কাহিনিতে অরিন্দম বলেন কিছু মানুষজনের গল্প। তাঁদের সম্পর্কের ওঠা-পড়া, ভাঙা-গড়ার গল্প। ‘অপরাধী’ মানেই যে কোনও অন্য প্রজাতির কেউ নয়, পরিস্থিতির ফেরেই অপরাধ ঘটে, সেই ধারণা দিতে চান গোয়েন্দা শবর। সেই মশলা থাকে বলেই শবর বক্স-অফিসেও হিট। এখানেও সেই গল্প রয়েছে। তবে গল্পের কিছু জায়গায় প্রশ্নও জাগে। যেমন ‘ঈগলের চোখ’-এর মতোই এই ছবিতেও একটি নারীচরিত্রকে ‘পুরুষের জন্য পাগল’ হিসেবে স্টিরিওটাইপের প্রবণতা।
আরও পড়ুন, আমি জয় চ্যাটার্জি- এক দুষ্টু রাজার গল্প
যে পরিস্থিতিতে মানুষ অপরাধ করে, সেই পরিস্থিতিটা ধরতেই শবর-কাহিনিতে নানা রকমের চরিত্র থাকে। তাই প্রত্যাশা থাকে অপরাধী কী করে অপরাধে জড়িয়ে পড়ল, তার একটা যথাযথ দৃশ্যায়ণ থাকবে। এখানে অবশ্য অপরাধীর নিজের মুখে কবুল করা থেকেই সেই গল্পটা জানতে হয়। সেটার খানিক দৃশ্যায়ণ থাকলে হয়তো ছবি আরও জমত। তিন নম্বর খুনটাই বা অপরাধী করতে গেল কেন, সেটাও ঠিক স্পষ্ট হয় না।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘মুক্কাবাজ’ আবার দেখাল অনুরাগ কাশ্যপ কেন আলাদা
অভিনয়ে সকলেই চমৎকার। শাশ্বত ও শুভ্রজিৎ ছাড়া অরুণিমা ঘোষের অভিনয় অসাধারণ। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, মীর, অঞ্জনা বসু, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় নিজেদের চরিত্রে যথাযথ। এসআই সঞ্জীব দাস, অর্থাৎ গৌরব চক্রবর্তীর চরিত্র এখানে আগের ছবির থেকে খানিক বেড়েছে। বিক্রম ঘোষের আবহসঙ্গীতও রহস্যের ওঠাপড়ার সঙ্গে মানানসই।
সব মিলিয়ে শবরের এ বারের অ্যাডভেঞ্চার বেশ জমাটি। কিন্তু আগের ছবিতে অরিন্দম প্রত্যাশার যে স্কেল সেট করেছেন, সেটাই মাথায় ঘুরঘুর করে। বারবার আগের স্বাদকে মনে পড়ায়।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: কালাকান্দি: আক্ষরিক অর্থে ঘেঁটে ঘ!
গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্ত আবেগহীন মুখে রহস্য ঘাঁটলেও তিনি আসলে খুব আন্তরিক। শেষ দৃশ্যে শবরের সংলাপ শুনতে শুনতে তাই শবরবাবুকে একটা অনুযোগ করতে ইচ্ছে হয়, আপনি শুনতে পাচ্ছেন একজন খুন হচ্ছে, তা-ও কিছু করতে পারছেন না! আপনার হতাশার বহিঃপ্রকাশ হয় না? আপনি যে খুব বাস্তব, জীবন্ত!