মন ভরাতে পারল না জেনারেশন আমি।
ছবি: জেনারেশন আমি
পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক
অভিনয়: ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, শৌরসেনী মৈত্র, লিলি চক্রবর্তী, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য
সেটা ছিল ১৯৫৫। স্নান শেষে ছোট ভাইয়ের চুল আঁচড়ে দিত দিদি। আয়নায় ফুটে ওঠা ভাইয়ের নিষ্পাপ মুখ অমোঘ মমতায় সেলুলয়েডে ধরেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সে জেনারেশন গোলোকায়ন দেখেনি। বাজার অর্থনীতি, শপিং মল, নিউক্লিয়াস ফ্যামিলি, ফেসবুক, টুইটার শব্দগুলি তখন নেপচুনের থেকেও দূরে। মৈনাকের ‘জেনারেশন আমি’র সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের কাল্ট মুভি ‘পথের পাঁচালি’র কোনও মিল নেই। শুধু চরিত্রের নাম দু’টি ছাড়া। ভাগ্যিস সে ধৃষ্টতা দেখাননি মৈনাক!
২০১৮’র অপু-দুর্গা সমসময়ের আরও অনেকের মতো জীবন নিয়ে কনফিউজড। হতাশ। বিভ্রান্ত। বাবা-মায়ের চাপ, টিউশন, ক্লাস, ব্যাগের বোঝা নাকি একটু প্রাণ খুলে বাঁচতে শেখা। ৯৯ শতাংশ মার্কস, আইআইটি না কি গিটার, স্বপ্নপূরণ— কোনটাকে প্রাধান্য দেবে এই জেনারেশন! সবার ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে নিজের জীবনটাই না ফাঁকি হয়ে যায়!
গল্প গড়পড়তা এক। হিন্দি, বাংলা কিংবা অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা মিলিয়ে এমন বিষয়ের উপর গাদাগুচ্ছের ছবি হয়েছে। ‘জেনারেশন আমি’ তারই চর্বিতচর্বণ।
এমন বিষয়ের উপর অনেক ছবি হয়েছে আগে।
আরও পড়ুন: আমাদের প্রজন্মের প্রেম যাদবপুরের ক্যাম্পাসের মতো: উজান
আরও পড়ুন: সলমনের এই প্রাক্তন প্রেমিকা এখন কী করছেন জানেন?
ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা দিল্লিবাসী বাঙালি দুর্গাকে তার বাবা-মা কলকাতায় কাকু-কাকিমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এ দিকে তুতো ভাই অপু পড়াশোনা, টিউশন, বেটার রেজাল্টের জাঁতাকলে জীবনের শখআহ্লাদ ভুলতে বসে। দুর্গার হঠাৎ আগমন অপুর জীবনে মুক্তির স্বাদ এনে দেয়। দুর্গা বাঁচার মন্ত্র শেখায়। কিন্তু নিজের জীবনটাই ঘেঁটে ফেলে। বিভূতিভূষণের অপুর একের পর এক মৃত্যুকে অতিক্রম করে যাত্রা জীবনকে পরিণত করে। মৈনাক তাঁর অপুর মধ্যে সেই সম্ভাবনার বীজ পুঁতে দিলেও এ কাহিনি মন ভরায় না। বড্ড বেশি প্রেডিক্টেবল ঠেকে।
কিছু কিছু অংশে সংলাপ বড্ড সাজানো-গোছানো, মুখের ভাষার অনুসারী নয়। ঋতব্রতর অভিনয় খাপছাড়া। তাঁকে লেটার মার্কস দেওয়া গেল না। কান্নার দৃশ্য বাদে শৌরসেনী বেশ ভাল। অনবদ্য শান্তিলাল। ছাপ ফেলেন লিলি চক্রবর্তী ও অপরাজিতা আঢ্য। সমস্যা হল পপকর্ন খেতে খেতে হল থেকে বেরিয়েই আপনি ভুলে যাবেন পর্দায় এত ক্ষণ কী চলছিল। নিয়ে বেরনোর মতো কিছু নেই!