অ্যানাবেল...! ছবি— সংগৃহীত।
অ্যানাবেল : ক্রিয়েশন
পরিচালক: ডেভিড এফ. সানবার্গ
অভিনয়: অ্যান্থনি লাপাগলিয়া, সামারা লি, মিরান্ডা ওত্তো, স্টেফনি সিগম্যান, লুলু উইলসন, তালিথা বেটমেন
মানুষ পুতুল নিয়ে খেলে জানা কথা, কিন্তু পুতুল যে এ ভাবে মানুষকে নিজের আঙুলে নাচায়, তা এই ছবি না দেখলে বিশ্বাস হবে না। অ্যানাবেল: ক্রিয়েশন। এক কথায়, ‘অ্যানাবেল’-এর উৎস সন্ধান!
প্রথমেই বলে রাখি, বৃষ্টিতে ভিজব কিন্তু জ্বর আসবে না, কিংবা ভূতের ছবি দেখব কিন্তু ভয় পাব না— এই মনোভাব নিয়ে হলে গেলে জাস্ট হবে না। কারণ অনেক দিন পর বেশ জমজমাট একটা ভূতের ছবি ‘কনজিউরিং’ ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিচালিত এই ‘অ্যানাবেল ক্রিয়েশন’। ২০১৪-এ মুক্তি পাওয়া ‘অ্যানাবেল’ ছবির প্রিক্যুয়েল এটি। যেখানে অ্যানাবেল নামের ভূতুড়ে পুতুলটির জন্মের গল্প বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: কাঁটা আছে কিছু, তবে বেশ লাগল ‘মাছের ঝোল’
মিস্টার মুলিন পুতুল তৈরি করেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে একটি পথ দুর্ঘটনায় মেয়ে অ্যানাবেলকে হারিয়ে ফেলে মুলিন দম্পতি। এই থেকেই গল্পের শুরু। ছবিতে অ্যানাবেলের দুর্ঘটনার দৃশ্যেই প্রথম ভূতের ছবির চমক পাওয়া যায়। যেখানে আচমকা একটি ছোট্ট মেয়েকে পিষে দেয় একটি ম্যাটাডোর। দৃশ্যটি মর্মান্তিক। একই সঙ্গে রোমাঞ্চকর। যে রোমাঞ্চ আপনাকে ভূতের ছবি দেখার উৎসাহ জোগাবে।
আদরের মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুর ১২ বছর পর ওই পুতুল-নির্মাতা ও তাঁর স্ত্রী এক সন্ন্যাসিনী ও ছ’জন অনাথ শিশুকে তাঁদের বাড়িতে থাকতে দেন। তারপরই শুরু হয় সব ভুতূরে কাণ্ড। ‘অ্যাবনর্মাল’। ‘প্যারানর্মাল’। আর সব ঘটনার কেন্দ্রে ওই ‘অ্যানাবেল’ নামের পুতুলটি।
সব ভূতের ছবির মতো, এই ছবিতেও একটি পাহাড়ি লোকেশন, একটি সুন্দর অথচ গা ছমছমে লুকের বাংলো এবং দূর-দূরান্তে আর কোনও বসতির চিহ্নমাত্র না থাকা, আর অবশ্যই একটি পরিত্যক্ত কুয়ো থাকা— সব উপাদানই মজুদ।
চিত্রনাট্যেও রয়েছে বেশ কিছু ক্লিশে দৃশ্য। যেখানে দেখানো হয়েছে একটি বন্ধ ঘর, সেই ঘরের ওপারে কী রয়েছে দেখার জন্য উৎসুক শিশুর নিয়ম ভাঙার পাপ। আর সেই পাপের কবলে পড়েই ভূতের প্রথম ‘টার্গেট’ হয়ে পড়ার একঘেয়েমি। কিন্তু এ সবের পাশাপাশি এই ছবিতে কিছু বাড়তি পাওনা রয়েছে। যে কারণে ছবিটি ‘বেশ’ ভয় পাওয়াবে।
‘অ্যানাবেল’-এর ঘরে ঢুকে পড়েছে জেনিস! ‘অ্যানাবেল: ক্রিয়েশন’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি— সংগৃহীত।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: অনেকটাই ছিপছিপে হতে পারত ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’
যেমন ধরুন, এই হয়তো প্রথম বার, এতটা প্রত্যক্ষ ভাবে কোনও ভূতের ছবিতে ‘দিনের আলোয় ভয়’ দেখানো হয়েছে। প্রথম বার ‘অ্যানাবেল’-এর মুখোমুখি হয়ে গাছের তলায় স্পেশাল চাইল্ড জেনিস (তালিথা বেটমেন)-এর বসে থাকা, আর তারপর হঠাৎ হুইল চেয়ারের হাতলে কালো, শীর্ণকায় হাতের তাকে ঠেলতে ঠেলতে কুঠুরির অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, এক কথায় ‘ভয়ঙ্কর’ সুন্দর।
এই দৃশ্যগুলি অবচেতন মনে কোনও ‘অন্ধকার’ দুপুরে যখন হঠাৎ আপনার একটা গা ছমছমে অনুভূতি হয়, সেই অচেনা অনুভূতিকেই যেন কয়েক গুণ বাড়িয়ে আপনাকে ‘উপহার’ দিতে এসেছে।
আরও আছে, পুতুল অ্যানাবেলের প্রতিটি দৃশ্য এ বার আরও রোমহর্ষক। মুহূর্তে তার তাকানোগুলো কেমন যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মিসেস মুলিনস (মিরান্ডা ওত্তো)-এর চোখ উপড়ে নেওয়ার জন্য অ্যানাবেলের উঠে দাঁড়ানোর দৃশ্যটা একেবারে ‘এ ওয়ান’! সঙ্গে মানিকজোড়, মিসেস মুলিন্সকে খুনের পর তাকে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখার দৃশ্য। ভূতের ছবির দৃশ্যে বেশ জমজমাট হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে শয্যাশায়ী মিসেস মুলিনসের অর্ধেক মুখোশটিও!
ছবিতে বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে লিন্ডা (লুলু উইলসন)-র অভিনয়। তবে লাইট এবং বিশেষ করে ভূতের ছবির উপযুক্ত সাউন্ডের অভাব মাঝে মাঝে আপনার ভয় পাওয়ার রেশিওকে দুম করে কমিয়ে দিতে পারে। মানে কোথাও কোথাও আপনার মনে হতেই পারে, সাসপেন্স ধরে রাখতে এই দু’য়ের ‘পারফেক্ট’ অভাব রয়েছে।
‘অ্যানাবেল’-কে চিরকালের জন্য কুয়োর জলে ফেলে দিতে চলেছে লিন্ডা। কিন্তু পিছনে কে তাড়া করছে? ছবি— সংগৃহীত।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: চেনা পথে ব্যাকগিয়ারেই রোমাঞ্চে ইতি
সব মিলিয়ে যদি ভূতের ছবি দেখতে ভালবাসেন বা যদি মনে হয় যে, লোকে পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে কেন ভূতের ছবি দেখেন, তার উত্তর খুঁজতে সিনেমা হলে গিয়ে এ ছবি দেখতে পারেন। তবে ভয় পাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে, একটু হয়তো অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ অ্যানাবেলের উৎসে, ভূতের ছবির সব রকম উপাদান থাকলেও, পাগলামিটা নেই। তাই ভয় দেখালেও, হাড় কাঁপাতে অক্ষম।
তবে হলে ঢোকার আগে পপকর্ন কিনতে ভুলবেন না! কারণ ভূতের ছবি দেখার সময় ওটা আপনার ‘দুর্বল’ হৃদয়কে একটু ভিন্ন স্বাদের ভরসা দেবেই। অল দ্য বেস্ট!