ছবিতে রয়েছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী ও পার্নো মিত্র।
আহা রে মন
পরিচালক: প্রতিম ডি গুপ্ত
অভিনয়: আদিল হোসেন, অঞ্জন দত্ত, মমতাশঙ্কর, ঋত্বিক চক্রবর্তী, পার্নো মিত্র, চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী
একাকীত্বেই কি প্রেমের পূর্ণতা?
ভালবাসার জোর থাকলে অলীক স্বপ্নও সত্যি হয় বুঝি!
চিঠি কি আদৌ মনের ঠিকানা পায়?
নাকি চোর-পুলিশ খেলতে খেলতে হঠাৎ দরজায় এসে কড়া নাড়ে ভালবাসার ভোগান্তি?
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চারটি গল্প। কখনও এটা তো পর ক্ষণেই লাফিয়ে অন্যটায়। শুরুতে ছোট্ট ব্যাকপাস। মাঝমাঠে তিতিকাকা। তার পর ড্রিবল করে লম্বা শট। উদ্দেশ্য একটাই, গোলপোস্ট। প্রেমের জালে বল জড়ানো। সঙ্গে উপরিউক্ত প্রশ্নের আনাগোনা। আর উত্তর? ওই যে দেখতে হবে ‘আহা রে মন’!
একটু খোলসা করা যাক। পূর্ণেন্দু পাহাড়ির (আদিল হোসেন) সঙ্গে রমনার (পাওলি দাম) বন্ধুত্বের শুরু এক ঝমঝমে কথোপকথন দিয়ে। ইমিগ্রেশন অফিসারের একঘেয়েমির জীবনে রমনা দোলা দেয়। শিডিউল কাস্ট হওয়ায় কারণে অকারণে পূর্ণেন্দুকে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। প্রেমের গল্পে সামাজিক দৈন্যতার দিকটি পরিচালক ছুঁয়ে যান অদ্ভুত দক্ষতায়। একাকীত্ব একসময় ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে পূর্ণেন্দুর জীবনে। কিন্তু আঁকড়ে ধরতে চাইলেই কি আর হয়! রমনার মন বাঁধা আছে অন্য এক সমীকরণে। তাই পূর্ণেন্দু পাহাড়ির গলায় শোনা যায়, “আমাদের দু’জনের মধ্যে এক জনের আর একা থাকা হল না।”
অসুস্থ তিতলি (চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী) নার্সিংহোমের বেডে তাঁর স্বপ্নের নায়ককে নিয়ে ফ্যান্টাসির জাল বুনে চলে। সে সটান জানিয়ে দেয় তার মতো করে নায়ককে কেউ ভালবাসতেই পারে না। স্বপ্নের মানুষটির জন্য তাঁর মনকেমন দর্শকদের নজর কাড়বে। কিন্তু নার্সিংহোমের বেডে সবাই এত রিলাক্সড কী ভাবে? শুয়ে বসে তাস খেলার দৃশ্যটাও দৃষ্টিকটু। মুন্নি মাসিকে এক বারের জন্যও অসুস্থ মনে হয়নি। পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্ত এই দিকগুলোয় আরও সচেতন হতে পারতেন। তবে হ্যাঁ, চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী এই ছবির আবিষ্কার। তিনি পুরোপুরি সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন।
ছবিতে রয়েছেন পাওলি দাম ও আদিল হোসেন।
মাইকেল (ঋত্বিক চক্রবর্তী) ও সুজির (পার্নো মিত্র) সম্পর্কের ছটফটানিতে ধরা আছে বর্তমান সময়। অনায়াসে মুভ অন করতে পারা প্রজন্মকে এই গল্পে ছুঁয়ে গেছেন পরিচালক। তবে সোনার দোকানে চুরির দৃশ্যটি প্যাঁচপ্যাঁচে মেলোড্রামা। কেন যে রাখলেন পরিচালকই জানেন! মাইকেল চরিত্রে ঋত্বিক আবার তাঁর জাত চেনালেন। পার্নো ঠিকঠাক মানিয়ে গেছেন তাঁর চরিত্রে।
‘অনস্ক্রিন ন্যুডিটি নিয়ে আমার সমস্যা নেই, তবে...’
‘হামি’ দেখিয়ে দিল আমরা আদ্যোপান্ত ক্লিশে
সবশেষে আসি অঞ্জন দত্ত ও মমতাশঙ্করের কথায়।বৃদ্ধাশ্রমের নতুন বাসিন্দা হয়ে মমতাশঙ্কর আসতেই বহু দিন পর গান ধরেন অঞ্জন। সেখানেও বন্ধুত্বের গল্প। দু’জনে একসঙ্গে পালিয়ে যাওয়ায় প্ল্যানিং। পালিয়ে মমতার মনের মানুষকে খোঁজার চেষ্টা। সঙ্গী অঞ্জন। অঞ্জন দত্তকে বহু দিন কেউ এমন চরিত্রে দেখেনি। তিনিও ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন। তবে বৃদ্ধাশ্রমের কনফারেন্স রুম কী ভাবে এত আভিজাত্যপূর্ণ হয় বোধগম্য হল না! সে যা-ই হোক, এই হাজারো ব্যস্ততার মুহূর্তেও মাঝেমধ্যে আমাদের মনকেমন হয়। আমরা সেই মনকেমন উপভোগও করি। তাই হলে ঢুঁ মারতেই পারেন। খুব একটা ঠকবেন না।