Mir

ট্রামের গতি নিয়ে এত প্রশ্ন, আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে গতি কই? শ্লেষ মীরের

কলকাতার রাস্তায় ট্রাম চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত মোটেই মেনে নিতে পারছেন না বাচিকশিল্পী ও অভিনেতা মীর। ট্রাম বন্ধ করে দেওয়া আর বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া তাঁর কাছে একই বিষয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৪
Share:

মীর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মন্থর তার গতি। ঘণ্টার আওয়াজে কলকাতার রাজপথে সে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। ‘দেয়’ নয়, দিত। দেশ- বিদেশের ছবিতে কলকাতার পরিচিতিপত্রে তার ছবি থাকবেই। অথবা কবিতার পঙ্‌ক্তিতে উঠে আসে তার বর্ণনা। বন্ধ হচ্ছে কলকাতার সেই সাধের যান— ট্রাম। কলকাতার রাস্তায় আর গড়াবে না সেই ট্রাম। মডেল হিসাবে শুধু একটি রুটেই চলবে। বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে তরজা। এক দিকে নস্টালজিয়ায় ডুব দিয়ে ট্রাম চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্তের নিন্দা করছেন কলকাতাবাসীর একাংশ। অন্য দিকে, আর এক দল সায় দিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘শেষ কবে ট্রামে চড়েছেন?’’

Advertisement

কলকাতার রাস্তায় ট্রাম চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত মোটেই মেনে নিতে পারছেন না বাচিকশিল্পী ও অভিনেতা মীর আফসর আলি। ট্রাম বন্ধ করে দেওয়া আর বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া তাঁর কাছে একই বিষয়। মীর বলেন, “ট্রাম আমাদের সকলের শৈশবের সঙ্গে জড়িয়ে। এই যানকে আমাদের শহরের একটি পরিচয় বলা যায়। ট্রাম মন্থর গতিতে চলে ঠিকই। কিন্তু তা হলে তো বাড়িতে পড়ে থাকা পুরনো জিনিসও জঞ্জালে ফেলে দিতে হয়। আরও ভাল ভাবে বললে, এই সিদ্ধান্তটা বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো। তাঁরা অচল হয়ে গিয়েছেন, অতএব বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিলাম।”

ট্রাম নিয়ে বহু স্মৃতি রয়েছে সঞ্চালক-অভিনেতার। শৈশবে ট্রামের সঙ্গে প্রথম পরিচয় করিয়েছিলেন তাঁর বাবা। তাঁর কথায়, “বাবার সঙ্গে প্রথম ট্রামে চড়া। এখন বাবা ডিমেনশিয়ায় শয্যাশায়ী। কিন্তু সেই সময় বাবা-ই প্রথম শিখিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম থেকে কী ভাবে নামতে হয়। ট্রাম থেকে নামার এক বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। আমি বাসে চড়ার আগে ট্রামে চড়েছিলাম। তাই ব্যক্তিগত ভাবে খারাপ লাগছে।”

Advertisement

ট্রামে ‘গপ্পো মীরের ঠেক’। ছবি: সংগৃহীত

সমাজমাধ্যমে এই খারাপ লাগার কথা লিখেছেন মীর। তার পরেই তাঁর কাছে ধেয়ে এসেছে সেই একই প্রশ্ন— ‘শেষ কবে ট্রামে চড়েছেন?’ কয়েক বছর আগেই একটি বিজ্ঞাপনী চিত্রের প্রয়োজনে ট্রাম কন্ডাক্টর সেজেছিলেন মীর। সেই ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। দে়ড় বছর আগে মীর শুরু করেছিলেন তাঁর ইউটিউব প্রোডাকশন— ‘গপ্পো মীরের ঠেক’। তার মধ্যে একটি অনুষ্ঠান ছিল— যেখানে ট্রামে বসে এক জন শ্রোতাকে গল্প পড়ে শোনাচ্ছেন মীর। সঞ্চালকের কথায়, “ট্রামের ধীর গতি। কিন্তু সে বিদ্যুতে চলে, পরিবেশবান্ধব। তাই আমি একটা জিনিস বুঝছি না, কেন সবাইকে একটা ইঁদুরদৌড়ে শামিল হতে হবে! সবাই তো ব্যস্ত নয়। কিছু মানুষ তো ট্রামে চড়ে স্মৃতিচারণ করতে পারেন। কিন্তু বাস্তববাদীদের হয়তো অন্য যুক্তি। কিন্তু এমন করলে তো বহু কিছুই বাদ দিতে হয়। বিদেশে যেমন ইউরোপে, সানফ্রানসিসকোর রাস্তায় তো ট্রাম চলে। কলকাতার পরিচিতির মধ্যে ট্রাম তো অন্যতম!”

ট্রামের ধীর গতি প্রসঙ্গে আরজি করের কথা তোলেন মীর। তাঁর কথায়, “যাঁরা ট্রামের মন্থর গতির অজুহাত দিচ্ছেন তাঁদেরই দেশে এক চিকিৎসকের বিচারের অপেক্ষায় মানুষ চাতকের মতো চেয়ে আছেন। সেখানেও তো ‘স্লো ইজ় দ্য ম্যাজিক ওয়ার্ড’। পরে কলকাতাবাসী হিসেবে আফসোস করতে হবে, এই শহরে মর্মান্তিক ভাবে একটি মেয়ের ‘জান’ চলে গেল। আর এই শহরেরই প্রিয় একটি ‘যান’ও চলে গেল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement