নিজের স্বপ্নপূরণ করেছেন মিমি।
জলপাইগুড়ির প্রত্যন্ত মফস্সলের একরত্তি মেয়ে। ‘অন ক্যামেরা’ কাকে বলে? বোঝেনই না। কিন্তু ধারাবাহিক দেখতে খুব ভাল লাগে। আরও ভাল লাগে ছোট পর্দা জুড়ে হয়ে চালা নানা কাণ্ড-কারখানা। ছোট থেকেই মেয়েটিকে সে সব খুব টানত। পলক না ফেলে গিলত সে। আর মাকে ডেকে ডেকে দেখাত। বলত, ‘‘ওর ভিতরে যা হয় একদিন আমিও সে সব করব।’’ এই হলেন মিমি চক্রবর্তী। কিচ্ছু না বোঝার বয়স থেকে অভিনয় যাঁর ধ্যান-জ্ঞান। শনিবারের আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ আড্ডা ‘অ-জানা কথা’ সাংসদ-তারকার সেই ছেলেবেলার সাক্ষী।
মিমি এ দিন তারকা বা সাংসদ নন। ‘মানুষ মিমি’ হয়ে ধরা দিয়েছিলেন অনুরাগীদের কাছে।
একরত্তির কথা শুনে মা কী বলতেন? আর পাঁচটি গৃহস্থ বাড়ির মায়েরা যা বলেন, ‘‘মন দিয়ে পড়াশোনা কর। তা হলেই এ সব করতে পারবে।’’ মাথায় সিনেমার পোকা নড়লেও মিমি কিন্তু মায়ের কথা শুনেছিলেন। মন দিয়ে পড়াশোনা করতেন। আর মনের মধ্যে রোজ দেখা স্বপ্নকে যত্নে লালন করতেন। তিনিও বড় হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে একটু একটু করে বেড়েছে অভিনয়ের শখ। সবাই ছোট্ট মিমিকে আদর করে জানতে চাইতেন, বড় হয়ে কী হবে সে? জবাব মুখস্থ তার, বড় হয়ে অভিনেত্রী হবে সে! ছোট্ট মেয়ের শখ শুনে হেসে ফেলতেন সবাই। একটু বড় হওয়ার পরে বিদ্রূপও শুনেছেন মিমি, ‘‘এত কোটি কোটি মেয়ে। বেছে বেছে তোকেই বা কেন নেবে? আর তুই ওখানে পৌঁছোবি কী করে? গ্রামে থাকিস!’’
শখ পূরণের জন্য বাবার কাছে জেদ করেছেন মিমি। সেই বিদ্রূপ তাঁকে মনে পড়িয়ে দিয়েছে, স্কুল শেষ হলেই ডানা মেলে উড়ে যেতে হবে শহর কলকাতায়। মিমির ইচ্ছে ছিল, পরবর্তী পড়াশোনা হয় কলকাতা নয়তো মুম্বইয়ে করবেন। বাবাকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন স্কুলের পড়া শেষ করেই। তাঁর ‘পাপা’ যদি কলকাতায় না যেতে দেন, তা হলে পালিয়ে চলে আসবেন। এ দিকে বাবা শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি কলেজের ভর্তির ফর্ম এনে দিয়েছেন। মেয়েকে বাইরে পড়ানোর সাধ্য যে তাঁর নেই! শেষ পর্যন্ত মিমির জেদের কাছে হার মানতেও হয়েছে তাঁকে। তবু শেষ চেষ্টা করেছেন মা-বাবা, ‘‘অত বড় শহরে একা মেয়ে তুমি! কী করবে?’’ মিমি তো জানতেন, তিনি কোন স্বপ্নপূরণ করবেন।
কথায় মা-বাবার মন গলছে না দেখে শেষে খাওয়া বন্ধ। অঝোরে কান্নাকাটি। আর কাতর মিনতি, ‘‘পাপা একবার যেতে দাও। যদি দেখো তোমাদের মেয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ফিরিয়ে নিয়ে এসো। তখন কিচ্ছু বলব না।’’ মন গলেছিল চক্রবর্তী পরিবারের। তার পর? বাকিটা ইতিহাস।