পুজোর আগেই শেষ ‘রিমলি’, ‘ধ্রুবতারা’
দর্শক টানতে ব্যর্থ। টিআরপি রেটিংয়েও ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এই জোড়া অভিযোগেই বন্ধ হতে চলেছে অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের দুই ধারাবাহিক ‘রিমলি’ এবং ‘ধ্রুবতারা’। বেশ কিছু দিন ধরে এই নিয়ে গুঞ্জন চলছিলই। অবশেষে খবরে মান্যতা দিলেন প্রযোজক স্নিগ্ধা বসু। পুজোর আগে এই খবর ছড়াতেই স্বাভাবিক ভাবে মনখারাপ দুই ধারাবাহিকের অভিনেতা, কলাকুশলীদের। কেন ছোট পর্দায় জাদু দেখাতে পারল না ‘রিমলি’? আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে প্রযোজক এর জন্য দায়ী করেছেন অতিমারিকে। তাঁর দাবি, ‘‘অতিমারি দর্শকের চিন্তাশক্তিতেও থাবা বসিয়েছে। নিজেরাই সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় ছোট পর্দায় আর বাস্তব দেখতে চাইছেন না তাঁরা। তাই শাশুড়ি-বৌমার কূটকচালি আর আজগুবি প্রেমের গল্পই ভাল লাগছে সবার।’’ একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, যুগ বদলানো দেখাতে গিয়ে স্ত্রীর হাতে স্বামীর মার খাওয়া দেখতেও রাজি দর্শক। তবু নতুন ভাবনা কিছুতেই ভাবতে চাইছেন না। এটা টেলি দুনিয়ার সামগ্রিক অবক্ষয়।
বদলে, পুজোর পরে স্টার জলসায় নতুন রিয়্যালিটি শো নিয়ে ফিরবে অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্ট।
‘রিমলি’ এবং ‘ধ্রুবতারা’, দু’টি ধারাবাহিকই এর আগে ছোট পর্দার প্রাইম টাইম সন্ধ্যা ৬টা এবং রাত সাড়ে ৮টার স্লটে ছিল। প্রথম ধারাবাহিকের সম্প্রচার শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে। দ্বিতীয় ধারাবাহিকটি তুলনায় পুরনো। ২০২০-র জানুয়ারি থেকে ছোট পর্দায় এর সম্প্রচারণ শুরু। টেলিপাড়ার খবর, নম্বরের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার কারণেই ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সময়ে দেখা যাচ্ছে ‘রিমলি’কে। বর্তমানে এটি সম্প্রচারিত হচ্ছে রাত সাড়ে ১১টায়। ‘ধ্রুবতারা’ অনেক দিনই পিছিয়ে গিয়েছে রাত ১১টার স্লটে।
এক দিকে রমরমিয়ে চলছে ‘মিঠাই’, ‘সর্বজয়া’, ‘কৃষ্ণকলি’, ‘রাসমণি’, ‘দেশের মাটি’, ‘গঙ্গারাম’-এর মতো একাধিক ধারাবাহিক। অন্য দিকে, কয়েক সপ্তাহ ধরেই রেটিং চার্টে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে জি বাংলার ‘রিমলি’ এবং স্টার জলসার ‘ধ্রুবতারা’। খামতি কোথায়? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল ‘রিমলি’র পরিচালক সৌমেন হালদারের সঙ্গে। প্রযোজকের কথাতে সায় দিয়ে পরিচালকও প্রাথমিক ভাবে দায়ী করলেন অতিমারিকেই। তাঁর দাবি, দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত খেটেখাওয়া মানুষেরা পর্দাতে আর অভাবের কথা শুনতে নারাজ। তাই ‘কপালকুণ্ডলা’ খ্যাত ইদিকা ওরফে টুম্পা পাল, ‘বোঝে না বোঝে না খ্যাত’ জন ভট্টাচার্য, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক চক্রবর্তী, মল্লিকা মজুমদারের মতো এক ঝাঁক জনপ্রিয় অভিনেতা, ভাল গল্প থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিক দর্শক টানতে ব্যর্থ। তবে ব্যক্তিগত ভাবে এই ধারাবাহিক পরিচালনা করে খুশি সৌমেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার জীবনপঞ্জিতে ‘বকুলকথা’, ‘ফিরকি’র মতোই ‘রিমলি’রও উল্লেখ থাকবে। এর আগে কোনও ধারাবাহিক সমান্তরাল ভাবে গ্রাম এবং শহরকে তুলে ধরেনি।’’ পটভূমিকা বাস্তবসম্মত করতে অভিনেতাদের নিয়ে পরিচালক পৌঁছে গিয়েছিলেন শহরের উপকণ্ঠে নাজিয়াবাদে। যেখানে শহরের বুকে এখনও এক টুকরো গ্রাম জেগে আছে।
শ্যুটে ব্যস্ত থাকায় ফোনে সাড়া দিতে পারেননি ধারাবাহিকের অন্যতম দুই অভিনেতা জন এবং টুম্পা। পরিচালক জানিয়েছেন, ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে শ্যুটিং। ২৬ সেপ্টেম্বর শেষ সম্প্রচার। নতুন চমক দিয়ে ২১৭ পর্বে শেষ হবে ‘রিমলি’। যার রেশ দর্শকমনে অনেক দিন থেকে যাবে, এমনই দাবি তাঁর। পাশাপাশি, ১৯ সেপ্টেম্বর শেষ সম্প্রচার ‘ধ্রুবতারা’র। স্নিগ্ধার কথায়, ‘‘স্টার জলসার সঙ্গে কথাই হয়েছিল, ৫০০ পর্বের পরে এই ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাবে। সেই জায়গায় নিয়ে আসব নতুন রিয়্যালিটি শো। সেটিই হতে চলেছে।’’