বলিউডের ডিভা বলা হত তাঁকে। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘গোলমাল’ ছবিতে তিনি মন জয় করেছিলেন বলিউড প্রেমীদের।
এ ছাড়াও বাসু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘খট্টা মিঠা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই সময় সুপারহিট ছবি ছিল সেই ছবি।
শশী কপূরের সঙ্গে ‘শান’ ছবিতে অভিনয়ের পর বলা হয়েছিল, ইনি হেমা মালিনীকে ‘টাফ কম্পিটিশন’ দেবেন। তিনি বিন্দিয়া গোস্বামী।
অভিনেত্রী হিসাবে তিনি প্রত্যেকের বেশ পছন্দের ছিলেন, সেই সময় বর্ণময় ছিল তাঁর জীবনও। বিভিন্ন ম্যাগাজিনজুড়ে থাকত শুধুই তাঁর নাম।
হেমা মালিনীর মা নাকি বিন্দিয়াকে একটি পার্টিতে দেখে অভিনয়ে আসার কথা বলেছিলেন। ফিল্মে আসার পর সত্তরের দশকের অন্যতম বিখ্যাত এই নায়িকার সঙ্গে নাম জড়াল অভিনেতা বিনোদ মেহেরার।
বিনোদ মেহেরার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেড়ে উঠেছিল সকলের অজান্তেই। কিন্তু বিনোদ তখন বিবাহিত, তাই সম্পর্কে বাধা এসেছিল প্রচুর।
বলিউডের বেশ কিছু ম্যাগাজিন ও সর্বভারতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল, বিনোদের শ্যালক বিন্দিয়াকে হুমকি দিয়েছিলেন তাঁর জীবন থেকে সরে যেতে।
কিন্তু বিন্দিয়ার সঙ্গে চুপিসাড়ে বিয়ে সেরে ফেলেন বিনোদ। দু’জনের পরিবারের তরফে ছিল প্রবল বাধা। একটি হোটেলে দু’জনে লুকিয়ে ছিলেন এমনটাও শোনা যায়। কিন্তু বিন্দিয়ার সঙ্গে বিনোদের সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। বিন্দিয়া এই বিয়েটা করেছিলেন ১৮ বছর বয়সে। তখন বিনোদ তারকা। কিন্তু বলিউড ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল, বিন্দিয়া নাকি বিনোদকে ছে়ড়ে চলে যান, কারণ বিনোদের কেরিয়ার তখন টালমাটাল।
বিন্দিয়ার সঙ্গে বিনোদের দিদির অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক। বিন্দিয়া পরবর্তীতে আবার বিয়ে করেন। তাঁর দুই সন্তানকেও বিনোদের দিদি ভালবাসতেন, এমনটাই বলেন বিন্দিয়া।
বিন্দিয়ার জীবনে এর পর আসেন পরিচালক জে পি দত্ত। তিনি পালিয়ে গিয়েই বিয়ে করেছিলেন পরিচালককে।
জেপির প্রেমে তখন পাগল ছিলেন বিন্দিয়া। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জেপি শান্ত ও মেধাবী ছিলেন। আর সেটাই ছিল বিন্দিয়ার আকর্ষণ।
প্রতিভাবান পরিচালক, কিন্তু পকেটে তেমন পয়সা নেই, মাহিমে এক ঘরের ফ্ল্যাটেই থাকতেন জেপি। এই সাধারণ সহজ মানসিকতাই ভাল লেগেছিল বিন্দিয়ার। তিনি বলেন, ‘ছোট থেকে এমন মানুষের সঙ্গেই ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কারণ জেপি ছিলেন পরিবারকেন্দ্রিক একজন মানুষ’।
বিন্দিয়া জানান, তিনি জেপির চোখে জীবনের অন্য মানে খুঁজে পেয়েছিলেন, তাই জেপির সঙ্গেই ঘর বাঁধার সিদ্ধান্ত নেন। কিছু মানুষ তা মেনে নিতে পারেননি।
প্রায় ১২ বছর বয়সের তফাত ছিল দু’জনের। জেপি ভালবাসতেন কাজ করতে, পার্টি করতেও যেতেন না। ঘরে বসে বই পড়া আর কাজ করাই ছিল জেপির ধ্যানজ্ঞান। অন্য দিকে বিন্দিয়া ছিলেন খুব রোম্যান্টিক। অভিনেত্রী বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পরিবারকে বুঝতে চেয়েছিলেন।
বর্ডার, এলওসি কার্গিল, রিফিউজি-র মতো বিখ্যাত ছবিগুলির পরিচালক জেপি দত্ত। বিন্দিয়াকে তিনি ছবিতে কস্টিউম ডিজাইনার ও স্টাইলিস্টের কাজ করতে বলেন।
২০০৬ সালে ‘উমরাও জান’ ছবিতে জেপিকে সাহায্য করেছিলেন তিনি। অভিনয় থেকে স্বেচ্ছায় সরে আসেন বিন্দিয়া। বর্তমানেও হোম প্রোডাকশনই সামলাচ্ছেন তিনি।
দুই মেয়ে ও স্বামী জেপি দত্তকে নিয়ে তিনি খুব ভাল আছেন। তাঁর মেয়েরা ছবির সঙ্গে যুক্ত, তবে অভিনয় করার কথা কেউ ভাবেননি, এমনটাই বলেন বিন্দিয়া। আসলে প্রতিষ্ঠিত নায়িকা ইন্ডাস্ট্রিতে স্ট্রাগল করা পরিচালককে বিয়ে করবেন, এটা কেউ ভাবেননি, বলেন অভিনেত্রী।