শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয়ে হাতেখড়ি মাত্র চার বছর বয়সে। তার পর ৯০ ফিল্মের যাত্রাপথ। মাহজবীন বানোকে সিনেমা উৎসাহীরা চেনেন মীনা কুমারী নামেই। আজ, বুধবার তাঁর ৮৫তম জন্মদিন। প্রেমে-অপ্রেমে, উর্দু কবিতায় ডুবে থাকা, সুরায় মেতে থাকা ছদ্মনামধারী কবি নাজ, যাঁকে দেখা গিয়েছিল গায়িকা রূপেও— ফিরে দেখা আটত্রিশের অকালে ঝরে যাওয়া এক নক্ষত্রকে।
১৯৩৯-এ বলিউডের পর্দায় প্রথম দেখা গিয়েছিল মীনা কুমারীকে। বেবি মাহজবীন নামে প্রথম ফিল্ম ‘লেদারফেস’। এর পর ‘বৈজু বাওরা’, ‘পরিণীতা’,‘আজ়াদ ’,‘সাহেব বিবি আউর গোলাম’, ‘আরতি’,‘সাহারা’,‘দিল এক মন্দির’, পাকিজ়া’, ৩৩ বছরের কেরিয়ার জুড়ে ছিল নানা স্মরণীয় ফিল্ম। সেরা অভিনেতা হিসাবে চার বার ফিল্মফেয়ার জয়, তারই অনন্য স্বীকৃতি।
বলিউডের ট্র্যাজেডি কুইন নামে পরিচিত মীনা কুমারী আবার ফিমেল গুরু দত্ত নামেও খ্যাতি পেয়েছিলেন। ধর্মেন্দ্র ছাড়াও তাঁর সঙ্গে নাম জড়িয়েছে লেখক মধুপ শর্মার সঙ্গেও। ‘আখরি আড়াই দিন’ নামে একটি বইতে মীনা কুমারীর জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন মধুপ। যা পড়লে সময় যেন থমকে গিয়েছে বলেই মনে হয়।
বলিউডের অনেকেই জানেন, পাকিজ়া ফিল্মের সেটে মীনা কুমারীকে দেখে নাকি বহু বার নিজের সংলাপ ভুলে যেতেন নায়ক রাজকুমার। এতটাই রূপসী ছিলেন মীনা কুমারী।
নানা পুরুষের সঙ্গে নাম জড়ালেও পরিচালক কমল আমরোহীকে বিয়ে করেছিলেন মীনা কুমারী। ১৯৫১-তে বৈজু বাওরার সেটে কমলের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। সে সময় গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন মীনা কুমারী। শোনা যায়, সে সময় তাঁর খুবই খেয়াল রাখতেন কমল। এর পরের বছরই বিয়ে হয় তাঁদের। মীনা কুমারীকে মঞ্জু বলে ডাকতেন কমল। আর কমলকে আদর করে চন্দন নাম দিয়েছিলেন মীনা।
পাঁচ-ছয়ের দশকের প্রথম সারির নায়িকা মীনার সঙ্গে জড়িয়েছে বহু পুরুষের নাম। জল্পনা ছিল, ছয়ের দশকের উঠতি হিরো ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল তিন বছর। তবে মীনা কুমারীর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, তা ছিল মাত্র মাস ছয়েকের। ধর্মেন্দ্রর কেরিয়ারের প্রথম দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মীনা কুমারী। তা কখনও ভুলতে পারেননি ধর্মেন্দ্র।
ধর্মেন্দ্র ছাড়াও মীনাকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন ভরত ভূষণ। বৈজু বাওরা ফিল্মের সময় নাকি এমনটা ঘটেছিল। তবে তা প্রত্যাখান করেছিলেন মীনা। এর পর কমলের সঙ্গে বিচ্ছেদের বহু পরেও তাঁর প্রেমে ডুবে ছিলেন তিনি। শোনা যায়, সেই বেদনাতেই সুরায় ডুবে থাকতেন তিনি। কমলের ছবি পাকিজ়া রিলিজের সপ্তাখানেক পর লিভার সিরোসিসে মারা যান মীনা কুমারী।
অনেকেই বোধহয় জানেন, নাজ ছদ্মনামে শায়েরিও লিখতেন মীনা কুমারী। কবিতা ছাড়াও, প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসাবেও ছাপ রেখেছেন তিনি। ১৯৪৫-এ শিশুশিল্পী হিসাবেই শুরুটা হয়েছিল। এর পর বহু ফিল্মেই গেয়েছিলেন মীনা কুমারী।