কেন্দ্রে তবে শুধুই নারী?

‘শুভ নববর্ষ’ এবং ‘উড়নচণ্ডী’-তে অভিনয় করছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তিনি বললেন, ‘‘কী কারণে এখন এই ছবিগুলো একসঙ্গে হচ্ছে, বলতে পারব না। তবু বড় বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো যে ছবিগুলো করছে, সেটা ভাল দিক। অন্তত এই মিথটা ভাঙুক যে, মহিলা প্রোটাগনিস্ট দিয়ে ছবি চলে না!’’

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩০
Share:

টলিউড নায়িকারা

বলিউডে অনেক বার হয়েছে। তবে টলিউডে ইদানীং চোখে পড়ছে ‘গার্ল পাওয়ার’। পরদার বাইরে তো নায়িকাদের সকলের মধ্যেই বন্ধুত্ব বলে শোনা যায়। কিন্তু পরদার ভিতরে তেমনটা সে ভাবে দেখা যেত কই! মহিলাদের মধ্যেকার আদান-প্রদান, ভিতর-বার দ্বন্দ্ব— সে সব বাংলা সিনেমা তেমন ভাবে কি এক্সপ্লোর করেছে? শুধুমাত্র নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে ছবি তৈরি করছেন, তেমন সাহসও প্রযোজকরা দেখাতেন না আগে। তবে ছবিটা বদলে গিয়েছে। এবং সেটা বলে দিচ্ছে রাজর্ষি দের ‘শুভ নববর্ষ’, ‘বীরপুরুষ’, বিরসা দাশগুপ্তের ‘ক্রিসক্রস’, অভিষেক সাহার ‘উড়নচণ্ডী’। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে এমন ট্রেন্ড?

Advertisement

‘শুভ নববর্ষ’ এবং ‘উড়নচণ্ডী’-তে অভিনয় করছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তিনি বললেন, ‘‘কী কারণে এখন এই ছবিগুলো একসঙ্গে হচ্ছে, বলতে পারব না। তবু বড় বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো যে ছবিগুলো করছে, সেটা ভাল দিক। অন্তত এই মিথটা ভাঙুক যে, মহিলা প্রোটাগনিস্ট দিয়ে ছবি চলে না!’’ সুদীপ্তার সঙ্গে ‘শুভ নববর্ষ’-এ রয়েছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, তনুশ্রী চক্রবর্তীও। চার বান্ধবীর ভূমিকায়। ‘উ়ড়নচণ্ডী’-তে আবার অসমবয়সি তিন নারীর বন্ধন দেখতে পাবেন দর্শক। সুদীপ্তা আশা রাখেন, এখন চার-পাঁচ জন নায়িকা নিয়ে কাজ হলেও আগামী দিনে একজন অভিনেত্রীর কাঁধে ভর করেই ছবি এগোবে। যেমন বলিউ়ডে হয়েছিল ‘কুইন’ বা ‘নীল বাট্টে সন্নাটা’। তাঁর কথায়, ‘‘একক প্রোটাগনিস্ট হিসেবে নায়িকাদের ভেবে ভাল গল্প লেখা না হলে কিন্তু অভিনেত্রীদের মনে হতেই পারে, সান্ত্বনা পুরস্কার পেলাম!’’

অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় আবার এই বিষয়ে হিন্দি ছবিকেই এগিয়ে রাখছেন। বললেন, ‘‘হিন্দি ছবিতে যদি মহিলাদের লিড হিসেবে দেখতে দর্শকের আপত্তি না থাকে, তা হলে ধরেই নেওয়া যায়, সব ভারতীয় দর্শকই এই ধরনের ছবি দেখার জন্য তৈরি। আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি বলে পুরুষ প্রোটাগনিস্ট বেশি দেখতে পাই। তবে ফিমেল বন্ডিং বাংলা ছবিতে উঠে আসার পিছনে হিন্দি ছবির কিছু অবদান রয়েছেই।’’

Advertisement

মেয়েদের বন্ধুত্ব নিয়ে যে আগে একেবারেই ছবি হয়নি, এমন নয়। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রাইমা সেন আর পার্নো মিত্রকে নিয়ে মৈনাক ভৌমিক ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’ বানিয়েছিলেন। সে ছবি তেমন বক্স অফিস সফল না হলেও চর্চায় ছিল। মৈনাক তখন বলেছিলেন, ‘‘আমার ছবিতে কোনও প্রোপাগান্ডা নেই। বিনোদন আছে।’’ আসল কথা হল, প্রোপাগান্ডার দরকারও নেই! একজন নয়, দু’জন নয়— একসঙ্গে পাঁচ-ছ’জন প্রথম সারির অভিনেত্রীর গ্ল্যামার মিশ্রিত অভিনয় চাক্ষুষ করার মধ্যে যে নিখাদ বিনোদনটুকু রয়েছে, তাকে তো হেলাফেলা করা যায় না!

সে রকমই মনে করেন বিরসার ‘ক্রিসক্রস’-এর অন্যতম নায়িকা প্রিয়ঙ্কা সরকার। ‘‘এ রকম একটা ছবি করার প্ল্যান অনেক আগে থেকেই বিরসাদার ছিল। কিন্তু এখন ভেঙ্কটেশ আর বিরসাদা বুঝতে পেরেছে যে, এই ধরনের ছবির জন্য মার্কেট তৈরি, দর্শকও রেডি,’’ বললেন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু এত জন নায়িকা একসঙ্গে কাজ করছেন। কে কতখানি স্ক্রিন টাইম পাচ্ছেন কিংবা কে কার সঙ্গে কোন ইক্যুয়েশনে যাচ্ছেন— এ সব নিয়ে তো জল্পনা চলতেই থাকে! প্রিয়ঙ্কার উত্তর, ‘‘দেখুন, আসল কথাটা হল আমরা একে অপরের সঙ্গে কতটা কমফর্টেবল। ‘ক্রিসক্রস’ করতে এসেই যেমন মিমি আর নুসরতের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে আমার। বাইরে থেকে দেখে লোকে যেমন খুশি অ্যাজিউম করুক!’’ ছবির আর এক নায়িকা মিমি যেমন মনে করেন, ছবির সেটে নায়িকাদের মধ্যে যদি বন্ধুত্ব তৈরি হয়, সেটা পরদাতেও ফুটে ওঠে। তাঁর কথায়, ‘‘নুসরতের সঙ্গে তো আমার ‘জামাই ফোরটোয়েন্টি’র পর থেকেই খুব ভাল বন্ধুত্ব। এখন স্বস্তিকা, সোহিনী, প্রিয়ঙ্কা সকলের সঙ্গেই বেশ বন্ডিং হয়ে যাচ্ছে। সেটা কি ছবির জন্য ভাল নয়?’’

তনুশ্রী চক্রবর্তী আবার জোর দিচ্ছেন ছবির কনটেন্টের উপরেই। ‘‘গল্পটা ভাল হলে দর্শক সবই দেখেন। নামে বা গ্ল্যামারে যদি কিছু হতো, সলমন খানের ‘টিউবলাইট’ দর্শক অপছন্দ করতেন কি?’’ তাঁর প্রশ্ন। তনুশ্রী মনে করেন, গোটা বিষয়টাকে সাময়িক একটা ট্রেন্ড বলা যেতে পারে। তার বেশি নয়।

পরিচালক রাজর্ষি দে অবশ্য বলছেন, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নারী চরিত্রদের নিয়েই ছবি বানাবেন। ‘‘আমি সব সময়েই উওম্যান এমপাওয়ারমেন্টের কথা মাথায় রেখে গল্প বলতে চেয়েছি। ট্রেন্ড হতে পারে ভেবে কিছু করিনি। আগামী দিনেও চাই, নারীকেন্দ্রিক ছবি করতে,’’ বলছেন তিনি। রাজর্ষির আর এক ছবি ‘বীরপুরুষ’-এ কাজ করেছেন পায়েল সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘আসল কথাটা হল, মহিলারা এখন আর নেহাত আই ক্যান্ডি নন। তাঁদের নিয়ে ছবি করলেও দিব্যি লাভজনক হচ্ছে সেগুলো।’’ তবে তিনিও চান, সোলো লিড হিসেবে আরও বাংলা ছবিতে কাজ করুন মহিলারা। নির্মাতারা কি শুনছেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement